ব্রাজিলের শহরগুলো বিষাক্ত কীট বিচ্ছুর উপদ্রব বাড়ছে। দ্রুত ও অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে শহরগুলো যেন বিচ্ছুর আশ্রয় হয়ে উঠেছে। ২০১৪ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ব্রাজিলে বিচ্ছু দংশনের ঘটনা বেড়েছে ১৫৫ শতাংশ। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এই সময়কালে ১১ লাখের বেশি দংশনের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাস্তবে এই সংখ্যা আরো অনেক বেশি হতে পারে, কারণ অনেকেই হাসপাতালে যান না।
ব্রাজিলের সাও পাওলো স্টেট ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক মানুয়েলা বার্তো পুকা বলেন, ‘আমরা দেখেছি, অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে তৈরি হওয়া পরিবেশ—যেমন বস্তি এলাকা, নির্মাণ সামগ্রীর স্তূপ, নর্দমা এবং বর্জ্যের স্তুপ—বিচ্ছুদের জন্য আদর্শ আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে। এখানে ওরা প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা, খাদ্য এবং নিরাপত্তা—সবকিছুই পাচ্ছে।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিচ্ছুরা সাধারণত তেলাপোকা ও অন্যান্য কীটপতঙ্গ খেয়ে বেঁচে থাকে। নর্দমা, নির্মাণাধীন এলাকা এবং দেয়ালের ফাটলে তারা সহজেই বসতি গড়ে তোলে। কিছু প্রজাতি সঙ্গম ছাড়াই প্রজনন করতে পারে এবং খাবার ছাড়া দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে পারে।
২০২৪ সালের তথ্যে দেখা গেছে, ব্রাজিলে বিচ্ছু দংশনের ঘটনা ঘটেছে প্রায় ২ লাখ এবং এতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৩৩ জন। গবেষকরা আশঙ্কা করছেন, ২০২৫ থেকে ২০৩৩ সালের মধ্যে নতুন করে আরো প্রায় ২০ লাখ দংশনের ঘটনা ঘটতে পারে।
বিচ্ছুর দংশনে শিশু ও বয়স্করা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকে। যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দংশনে মৃত্যু হয় না, তবে তীব্র ব্যথা, ফোলা, জ্বালা, বমিভাবসহ নানা জটিল উপসর্গে ভোগেন আক্রান্তরা।
ব্রাজিল সরকার বিচ্ছু দংশনের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা ও অ্যান্টিভেনম দিয়ে থাকলেও সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
গবেষক পুকা বলেন, ‘বিচ্ছু আমাদের শত্রু নয়। ওরা কেবল আত্মরক্ষার জন্য দংশন করে। প্রকৃতিতে তারা কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।’
তাহলে ব্রাজিলের শহরবাসীকে কী করতে হবে? গবেষকরা বলছেন, বিচ্ছু দমন করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো প্রতিরোধ। বাসা পরিষ্কার রাখা, দেয়ালের ফাঁক বন্ধ করা, ড্রেনের মুখে ছাঁকনি লাগানো, এবং কাপড়-চোপড় ব্যবহার করার আগে ভালোভাবে দেখে নেয়া জরুরি।