মুসলিম জাতির জন্য এই রমজান মাস অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস । এই মাসের মধ্যে আমরা অনেক ত্যাগ স্বীকার করে থাকি । আমরা সেহরি খাওয়ার পর থেকে ইফতার করা পর্যন্ত খানা ও পানীয় থেকে বিরত থাকি একমাত্র আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য। আমরা অনেক কষ্ট করে রোজা রাখি ও রাতে কষ্ট করে তারাবির নামাজ পড়ি। শেষ রাত্রে ঘুম বিসর্জন দিয়ে সেহরি খাই ও আমরা তাহাজ্জুতের নামাজ পড়ি । আমরা এতগুলো কষ্ট করি একমাত্র শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।
কিন্তু এই সমস্ত কাজ ও আমল কবুল হওয়ার জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত কি ?? তা নিয়ে কি আমরা কখনো চিন্তা করেছি?? নাকি আমরা যা পাচ্ছি যেভাবে পাচ্ছি আমরা উপার্জন করতেছি। কোন হালাল ও হারামের দিকে আমরা পরোয়া করছি না ??
আমাদের আমলসমূহ কবুল হওয়ার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচ্ছে আমাদের খাবার হালাল হওয়া! যদি আমাদের খাবার হালাল না হয়। তাহলে রবের কাছে আমাদের কোন আমলই গ্রহণযোগ্য হবে না। কেননা আল্লাহতালা পবিত্র কুরআনে বলেনঃ হে রসূলগণ তোমরা খাও পবিত্র জিনিস থেকে । এবং তোমরা নেক আমল করো। নিশ্চয়ই তোমরা যা আমল করো সে বিষয়ে আমি জ্ঞাত। ( সূরা মুমিনুন আয়াত নাম্বার ৫১)
আল্লাহ তায়ালা এই আয়াতে রাসূলদেরকে হালাল খাবার খাওয়ার বিষয়ে আদেশ দিয়েছেন। যেন তারা হালাল খাবার খায়। এবং তারা আল্লাহ তাআলার ইবাদত করে।
রাসূল (সাঃ) হাদীস শরীফে বর্ণনা করেন। আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত। হে লোক সকল নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা পবিত্র এবং আল্লাহ তা’আলা শুধু পবিত্র বিষয়কে কবুল করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে আদেশ দিয়েছেন ওই বিষয়ের মাধ্যমে যা আল্লাহ তায়ালা রাসূলদেরকে আদেশ দিয়েছেন। হে মুমিনগণ তোমরা খাও পবিত্র জিনিস থেকে যা আমি তোমাদেরকে দিয়েছি রিযিক হিসেবে। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম একজন লোকের ঘটনা বর্ণনা করেন। যে দীর্ঘ সফর করে এসেছে। যার চুলগুলো এলোমেলো ও ধুলিময় চেহারা। সে তার দুই হাতকে আসমানের দিকে উত্তোলন করে এবং বলে হে আমার রব হে আমার রব। যে অবস্থায় তার খাবার হারাম এবং তার পানীয় বস্তু হারাম এবং তার পোশাক হারাম এবং সে হারাম ভাবে জন্ম নিয়েছে। তাহলে কি কিভাবে তার দোয়া কবুল করা হবে। (সহীহ মুসলিম: হাদিস নাম্বার ১০১৫)
আমরা উপরোক্ত কোরআনের আয়াত ও হাদিস থেকে বুঝতে পারি আমাদের দৈনন্দিন এর আমলসমূহ আল্লাহ তালার নিকট কবুল হওয়ার জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচ্ছে আমাদের রিজিক অর্থাৎ আমাদের খাবার হালাল হওয়া। সেজন্য আমরা সব সময় চেষ্টা করব যেন আমাদের খাবারটা হালাল হয় । হালাল খাবার খাওয়া আমাদের জন্য ফরজ। যেভাবে আমাদের জন্য নামাজ পড়া ফরজ। রোজা রাখা ফরজ। যাকাত দেওয়া ফরজ। ঠিক সেভাবে আমাদের হালাল রিজিক ভক্ষণ করা আমাদের উপর ফরজ। এবং কোনোভাবেই যেন আমাদের শরীরে হারাম টাকার কোন খাবার না প্রবেশ করে। এ বিষয়ে আমাদের সব সময় সব থেকে বেশি খেয়াল রাখতে হবে।
হে আল্লাহ আপনি সর্বোপরি আমাদেরকে হালাল খাবারের ব্যবস্থা করে দিন। এবং হারাম থেকে বাঁচিয়ে রাখুন। আমিন ইয়া রব্বিল আলামিন।
মুফতি তারিক জামিল
ইসলামী চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক