আম ম্যাঙ্গিফেরাগণের বিভিন্ন প্রজাতির গ্রীষ্মমণ্ডলীয় উদ্ভিদে জন্মানো এক ধরনের সুস্বাদু ফল। কাঁচা অবস্থায় আমের রং সবুজ এবং পাকা অবস্থায় হলুদ হয়ে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে খাওয়ার জন্যই এই ফল চাষ করা হয়। এই প্রজাতিগুলোর বেশিরভাগই বুনো আম হিসেবে প্রকৃতিতে পাওয়া যায়। আম ফল সারা পৃথিবীতে খুবই জনপ্রিয়, এরকম পছন্দের ফল পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই। এমন কোনো জাতি নেই যারা আম পছন্দ করে না। তাই একে সন্মান দিয়ে ʼফলের রাজাʼ বলা হয়। আম এ দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফল। ছোট-বড় সবার পছন্দনীয় এই ফলটির উৎপাদন ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। স্বাদ ও জনপ্রিয়তার জন্য আমকে বাংলাদেশেও ফলের রাজা বলা হয়। পুষ্টি উপাদান ও বহুবিধ ব্যবহারের কারণে অন্য কোনো ফলের সাথে আমের তুলনা হয় না। পাকা আম উচ্চমানসম্পন্ন ক্যারোটিন বা ভিটামিন এ এবং খনিজ উপাদান সমৃদ্ধ।
‘ম্যাংগো ক্যালেন্ডার’ অনুযায়ী রাজশাহীতে ১৫ মে থেকে এবছর আম পাড়া শুরু হয়েছে। মধুমাস খ্যাত জ্যৈষ্ঠের প্রথমদিনই গাছ থেকে নামানো হচ্ছে আম। গ্রীষ্মের মৌসুমি ফলগুলোর মধ্যে আমের আবেদন সর্বজনীন। ছোট বড় সবাই আম খেতে পচ্ছন্দ করে। গ্রীষ্মকালের প্রচণ্ড দাবদাহে একটা গাছপাকা আম আপনাকে সুমিষ্ট প্রশান্তির স্বাদ এনে দিতে পারে। গ্রীষ্মের মৌসুমী ফলগুলোর মধ্যে আমের আবেদন সার্বজনীন। আমের যেমন ঘ্রাণ, তেমনি মজাদারও বটে। কিন্তু যুগটা যেহেতু ভেজালের, তাই বাজারের সব আমই যে গাছপাকা, তা কিন্তু নয়। বরং রাসায়নিক পদার্থ দিয়েও পাকানো হচ্ছে আম। ফলে আম যেখানে শরীরের জন্য উপকারী হওয়ার কথা সেখান কার্বাইড মিশ্রিত হওয়ায় তা হয়ে উঠছে শরীরের জন্য ক্ষতিকর। আমের এই মৌসুমে রমরমা ব্যবসা করতে অসাধু ব্যবসায়ীরা রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে দ্রুত আম পাকান। তাই বাজারে আম কিনতে গেলে বিপাকে পড়ে যান সাধারণ মানুষ। তারা বুঝে উঠতে পারেন না কোন আমে রাসায়নিক পদার্থ আছে, আর কোন আমে রাসায়নিক পদার্থ নেই। আম কেনার সময় আপনাকে সচেতন থাকতে হবে।
ইতোমধ্যে বাজারে আম আসা শুরু হয়েছে। কিন্তু বাজারে রাসায়নিকমুক্ত আম পাওয়া বেশ কঠিন। বিক্রেতা রাসায়নিকমুক্ত আম বলেই বিক্রি করছে। ক্রেতাও বিক্রেতার কথা বিশ্বাস করে কিনে নিচ্ছে। তবে সচেতন থাকতে হবে, সেই আম রাসায়নিকমুক্ত কি না। কোন লক্ষণ দেখে বোঝা সম্ভব আমটি ক্ষতিকর কেমিক্যাল যুক্ত ও মুক্ত কিনা। কেননা এর উপরেই নির্ভর করছে আপনার আর আপনার পরিবারের সুস্বাস্থ্য। তবে জেনে নিন ফরমালিনমুক্ত আম চেনার উপায়।
- কেমিক্যালমুক্ত আমগুলো কাঁচা-পাকা রঙের হয়। আমের গায়ে সাদা বা কালচে দাগ থাকতে পারে। বিপরীতে, যে আমগুলো অত্যন্ত হলুদ, অতিরিক্ত চকচকে ও একদম মসৃণ দেখায়, সেগুলোর ক্ষেত্রে কেমিক্যাল ব্যবহারের শঙ্কা বেশি।
- আম কিনতে গেলে একটি বিষয় অবশ্যই খেয়াল করবেন, তা হলো-আমের ওপর মাছি বসে কি না। আমে রাসায়নিক ফরমালিন বা কার্বাইড দেওয়া থাকলে সে আমের ওপরে কখনোই মাছি বসবে না।
- গাছপাকা আমের ত্বকে দাগ থাকে। রাসায়নিকে পাকানো আমের গা হয় দাগহীন। কারণ কাঁচা অবস্থাতেই পেড়ে ফর্মালিন ও কার্বাইড দিয়ে পাকানো হয়।
- আম কেনার পর সেই আম মুখে দেওয়ার পর যদি দেখেন যে আমে কোনো সৌরভ নেই কিংবা আমে টক-মিষ্টি কোনো স্বাদই নেই, তাহলে বুঝবেন যে সে আমে ফর্মালিনজাতীয় কোনো রাসায়নিক দ্রব্য দেওয়া হয়েছে।
- আম কেনার পর কিছুক্ষণ রেখে দিন। এমন কোথাও রাখুন যেখানে বাতাস চলাচল করে না। গাছপাকা আম হলে কিছুক্ষণ পর গন্ধে ম ম করবে চারপাশ। ওষুধ দেওয়া আমে এই সুমিষ্ট গন্ধ পাওয়াই যাবে না।
- গাছপাকা আমের গায়ের রংও আলাদা। গোড়ার দিকে একটু গাঢ় রং থাকে গাছপাকা আমে। রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে পাকানো আমের আগাগোড়া হলদে রং হয়ে যায়।
- হিমসাগরসহ আরো বেশ কিছু জাতের আম পাকলেও সবুজ থাকে। গাছপাকা হলে এসব আমের ত্বকে কালো কালো দাগ পড়ে। রাসায়নিক দিয়ে পাকানো হলে আমের ত্বক হয় মসৃণ ও সুন্দর।
- ফরমালিনমুক্ত আম চেনার একটি উপায় হচ্ছে গন্ধ শুকে দেখা। আম কেনার আগে নাকের কাছে নিয়ে ভালো করে শুকুন। গাছপাকা আম হলে অবশ্যই বোঁটার কাছে চেনা গন্ধ পাবেন। ওষুধ দেওয়া আমে গন্ধ খুব বেশি থাকে না কিংবা বাজে বা ঝাঁজালো গন্ধ থাকে। ফলে বোঝা যায় যে আমটা আসলে গাছপাকা না।
নিরাপদ, বিষমুক্ত ও স্বাস্থ্যসম্মত আমের উৎপাদন বৃদ্ধি হোক এটি সবার প্রত্যাশা। বাজার থেকে আম কিনে আনার পর খাওয়ার আগে অন্তত ১৫ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে রাখুন, এরপর ভালোভাবে ধুয়ে খোসা ছাড়িয়ে উপভোগ করুন মৌসুমি এই পুষ্টিকর ও সুস্বাদু ফলটি।