বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালীন মৌসুমে সবচেয়ে জনপ্রিয় ফলগুলোর মধ্যে আম শীর্ষে। ফলের রাজা আম শুধু স্বাদের জন্যই নয়, অসংখ্য পুষ্টিগুনাগুণের জন্যও বিখ্যাত। উষ্ণ আবহাওয়া এবং উর্বর মাটির জন্য বাংলাদেশসহ পুরো দক্ষিণ এশিয়ার আবহাওয়া আম চাষের জন্য আদর্শ। ফলের বাজার এখন আমে ভরপুর। আম শুধু খেতেই সুস্বাদু নয়, স্বাস্থ্যের জন্যও খুব উপকারী। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি, ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রাকৃতিক সুগার রয়েছে। অনেকেই দিনে কয়েকটা পর্যন্ত আম খান। কেউ আবার আমের জুস, আইসক্রিম, আমের সন্দেশ বানিয়ে খেতে পছন্দ করেন।
গ্রীষ্মের মরসুমে মানুষ আমের চমৎকার স্বাদ উপভোগ করেন। আম খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে, যা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এর মধ্যে রয়েছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখা, ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করা এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি করা। কিন্তু, আম নিয়ে প্রায়ই নানা ধরনের জল্পনা-কল্পনা করা হয়, এতে কি ওজন বাড়ে, এটি হজমের জন্য ভালো কি না, কখন খাবেন, কখন খাবেন না ইত্যাদি। তবে আম খাওয়ার সঠিক সময় আছে। অনেকেই হয়তো জানেন না আম খাওয়ার সঠিক এবং ভুল সময় আছে। আর ভুল সময়ে আম খেলে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা হতে পারে। এ কারণে আম খাওয়ার আগে কিছু ছোট ছোট বিষয়ও মাথায় রাখা উচিত।
আম বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, ডায়েটারি ফাইবার, ভিটামিন, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও খনিজ উপাদানে সমৃদ্ধ একটি ফল। বাজার থেকে আনার পর অথবা রেফ্রিজারেটর থেকে বের করার পর সরাসরি আম খাবেন না। সর্বদা এটি খাওয়ার প্রায় ২ ঘণ্টা আগে তাজা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। খাওয়ার আগে ফের পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এর ফলে আমের মধ্যে উপস্থিত থার্মোজেনিক বৈশিষ্ট্য হালকা হয়ে যায়। এতে যেকোনো সমস্যার সম্ভাবনা কমে যায়।
ফলের পুষ্টিগুণ কেবল তখনই শরীরের ওপর প্রভাব ফেলে, যদি এগুলো সকালে বা সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের আগে খাওয়া হয়। সন্ধ্যা ৫ টার পর আম খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত। সকালের নাস্তায় আম খাওয়ার ভুল করবেন না। খালি পেটে আম খাবেন না। তাহলে আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। সকালে খাওয়ার পরে হালকা পাকা আম খেলে এটি হজমে সাহায্য করে ও শক্তি বাড়ায়। খালি পেটে খাওয়াটা এড়িয়ে চলা ভালো, কারণ এতে গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটির ঝুঁকি থাকতে পারে।
আম খাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় হচ্ছে মধ্য সকাল অর্থাৎ সকালের নাস্তা ও দুপুরের খাবারের মাঝের সময়টা। এটা সবার ক্ষেত্রেই। যারা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান বা ডায়াবেটিস যাদের আছে তারাও চেষ্টা করবেন মধ্য সকালে আম খেতে। এ ছাড়া কেউ যদি বিকেলে খেতে চান বা রাতে খেতে চান সেক্ষেত্রে আম গ্রহণের পরিমাণটা কমিয়ে আনতে হবে। তবে মধ্য সকালটাই সবচেয়ে ভালো।
আমের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৫০ এর বেশি। গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কার্বোহাইড্রেটের সূচক। যত কম গ্লাইসেমিক রেটের খাবার খাওয়া হবে ততই শরীরের জন্য ভালো। ডায়াবেটিসের রোগী আম খেতে পারেন না, এ কথা ভুল। তবে ভরপেট খাওয়ার পর দুপুর বা রাতে আম খেলে তার রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়বে। পাকা মিষ্টি আম একজন ডায়াবেটিস রোগী দৈনিক ৫০ থেকে ৬০ গ্রাম খেতে পারেন। মানে প্রতিদিন একটি ছোট আম বা অর্ধেকটা মাঝারি আম খাওয়া যাবে।
যখন কোনো ব্যক্তি সুষম উপায়ে খাবার খাবেন, তখন তিনি দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় ২টি আম রাখতে পারেন। এর বেশি খেলে ওজন বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। পাশাপাশি আমে প্রচুর পরিমাণে ট্রিপটোফেন রয়েছে, যা ঘুমের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। দিনের বেলার ঘুম এমনিতেই আমাদের মেটাবলিক রেট কমিয়ে দেয়, যা ওজন বাড়ানোর ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। রাতে আম খেলে হজমে সমস্যা হতে পারে, কারণ রাতে শরীরের বিপাক হার কমে যায়। এছাড়া পাকা আমে প্রাকৃতিক চিনি (ফ্রুকটোজ) বেশি থাকায় রাতে খেলে ওজন বাড়ার ঝুঁকি থাকে।
মানুষ প্রায়ই ভারী খাবার খাওয়ার পর আম খেতে পছন্দ করে। এটি প্রতিদিনের খাবারের পর খাওয়া উচিত নয়। সকাল ১১ টা থেকে বিকাল ৪টার মধ্যে আম খাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময়।
সবশেষে, গরমের দিনগুলোতে আম যেন এক অনন্য তৃপ্তির অনুভূতি দেয়। পাকা আমের মিষ্টি স্বাদ এবং কাঁচা আমের টকটক স্বাদ, সবই আমাদের মৌসুমী ঋতুর একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে। এজন্য আমাদের সঠিক উপায়ে এই ঐহিত্যবাহী আম খেতে হবে।