‘আমেরিকা ফার্স্ট’ অর্থাৎ মার্কিন স্বার্থই সবচেয়ে প্রথমে এই আওয়াজ তুলে বীরদর্পে আমেরিকার ক্ষমতায় ফেরেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০ জানুয়ারি শপথ নিয়েই একের পর এক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষরের মাধ্যমে ট্রাম্প তার কথা রাখতে শুরু করেন। ট্রাম্প শুরুতেই ব্যয় সাশ্রয়ী নীতি অনুযায়ী আন্তর্জাতিক সহায়তাসংস্থাগুলোয় তহবিল বন্ধ করে দেন। মার্কিন সহায়তাসংস্থা ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএইড) পড়েছে ট্রাম্পযুগের কর্তনে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জনসভায় এবার ট্রাম্পের সঙ্গে বেশ সক্রিয় ছিলেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী প্রযুক্তিব্যবসায়ী ইলন মাস্ক। নির্বাচনে জিতে প্রেসিডেন্ট হয়েই ট্রাম্প মাস্ককে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে ‘শৃঙ্খলা’ আনার বিশেষ দায়িত্ব দেন। আর ইলন মাস্ক গত কয়েকদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে ইউএসএইড-এর কার্যকারিতা উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলতে থাকেন। এরই মধ্যে ইউএসএইড-এর কার্যক্রম ৯০ দিনের জন্য বিশ্বব্যাপী বন্ধ করে দেয়া হয়। এমনকি সংস্থাটির ওয়েবসাইটও এখন বন্ধ, একই সঙ্গে বাংলাদেশে ইউএসএইডের ওয়েবসাইটেও একই অবস্থা। সর্বশেষ ইলন মাস্ক ইউএসএইড-কে রীতিমতো অপরাধী সংস্থা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
মাস্কের অভিযোগ, সংস্থাটি মার্কিন জনগণের করের টাকায় জৈব অস্ত্র গবেষণায় অর্থায়ন করেছে এবং বিভিন্ন প্রপাগান্ডা অর্থাৎ উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণার জন্য গণমাধ্যমে বিপুল অর্থ ব্যয় করেছে।
ইলন মাস্ক এক্সে লিখেছেন, ‘এটি (ইউএসএআইডি) বন্ধ করে দেওয়ার সময় এসেছে।’ মাস্কের অভিযোগ, সংস্থাটি মার্কিন জনগণের করের টাকায় জৈব অস্ত্র গবেষণায় অর্থায়ন করেছে এবং প্রপাগান্ডা বা স্বার্থগত প্রচারণার জন্য গণমাধ্যমে বিপুল অর্থ ব্যয় করেছে। এর মধ্যে কোভিড-১৯ এর মতো জীবাণুও অন্তর্ভুক্ত, যার কারণে কয়েক কোটি মানুষ মারা গেছেন বলে দাবি করেন মাস্ক।
মাস্কের এই বক্তব্যের আগেই সংস্থাটির দুই শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়। কারণ তারা মাস্কের প্রতিনিধি দলের গোপনীয়তা সংক্রান্ত পদক্ষেপে বাধা দিয়েছিলেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এসব তথ্য জানিয়েছে।
এখন সংস্থাটির ব্যয় কমাতে এবং সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনতে ইউএসএইড- কে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়ন্ত্রণে আনার পরিকল্পনা করছে ট্রাম্প প্রশাসন।
আমেরিকার স্থানীয়সময় সোমবার দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছে, তিনি ইউএসএইডের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক। এর মাধ্যমে আদতে ইউএসএইড যে আসলেই স্টেট ডিপার্টমেন্ট এর আওতায় এসে গেল সেটা জানিয়ে দিলেন তিনি।
এর আগে ইলন মাস্ক জানিয়েছিলেন ইউএসএইড বন্ধ করে দিতে তার সঙ্গে সম্মত হয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
উল্লেখ্য, ইউএসএইড নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশেও। ইউএসএইডের অর্থায়নে বাংলাদেশে বাস্তবায়নাধীন সব প্রকল্প ও কর্মসূচির ব্যয় অবিলম্বে বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
২৬ জানুয়ারি ইউএসএইড বাংলাদেশ কার্যালয়ের পরিচালক রিচার্ড অ্যারন সংস্থাটির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ সব স্থানীয় উন্নয়ন সংগঠনের জন্য নির্দেশনা জারি করে চিঠি দেন। ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ : যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশি সহায়তার পুনর্মূল্যায়ন ও পুনঃসামঞ্জস্যকরণ’ শীর্ষক চিঠিতে বলা হয়েছে, ইউএসএইড-বাংলাদেশের সব বাস্তবায়ন অংশীদারদের প্রতি একটি নির্দেশিকা হিসেবে পাঠানো হচ্ছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, এই চিঠিটি ইউএসএইড-বাংলাদেশের সব বাস্তবায়ন অংশীদারদের প্রতি একটি নির্দেশিকা হিসেবে পাঠানো হচ্ছে। যাতে আপনার সংশ্লিষ্ট ইউএসএইড-বাংলাদেশ চুক্তি, কার্যাদেশ, অনুদান, সমন্বিত চুক্তি বা অন্যান্য অধিগ্রহণ বা সহায়তা সরঞ্জাম অধীনে করা কোনো কাজ অবিলম্বে বন্ধ, থামানো বা স্থগিত করা হয়।