গরমের দিনে এক গ্লাস বেলের শরবত প্রাণ জুড়িয়ে দেয়। এই ফলটি যেমন সুস্বাদু, তেমনি অসংখ্য ঔষধি গুণে ভরপুর। কাঁচা, পাকা দুই ধরনের বেলই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং পটাসিয়ামের মতো মূল্যবান পুষ্টি উপাদান রয়েছে।
আমরা অনেকেই ইফতারে কেমিক্যালযুক্ত শরবত খেতে পছন্দ করি। অত্যন্ত সুস্বাদু হওয়ায় এধরনের শরবত খেলে দারুণ লাগে। কিন্তু এতে স্বাদ থাকলে কী হবে, পুষ্টি বলতে কিছুই থাকে না।
ফলস্বরূপ সেই শরবত খেলে তৃষ্ণা মেটে ঠিকই কিন্তু শরীর প্রয়োজনীয় পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হয়। আবার এ ধরনের শরবত খেলে শরীরে বিভিন্ন রোগও বাসা বাঁধতে পারে। তাই এসবের পরিবর্তে খেতে হবে তাজা ফলের শরবত।
তাই রমজানে ইফতারে বেলের শরবত পান করা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এটি শরীরকে ঠান্ডা রাখে, ক্লান্তি দূর করে এবং চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। চলুন জেনে নেওয়া যাক, ইফতারে বেলের শরবত পান করার কিছু উপকারিতা:
১. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: রমজানে অনেকেই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভোগেন। বেলের শাঁস পিচ্ছিল বলে এই ফল পাকস্থলীতে উপকারী পরিবেশ সৃষ্টি করে, খাবার সঠিকভাবে হজম করতে সাহায্য করে। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। এর শরবত পেট পরিষ্কার রাখে।
২. গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমায়: বেলের শাঁসে থাকা ফাইবার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। প্রতিদিনের ইফতারে বেলের শরবত রাখতে চেষ্টা করুন। তা সম্ভব না হলে সপ্তাহে তিনদিন অন্তত খাবেন।
৩. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে: যারা ডায়াবেটিসের সমস্যায় ভুগছেন তারা ইফতারে নিয়মিত বেলের শরবত খেতে পারেন। বেলের মেথানল নামক উপাদান রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে।
৪. আর্থ্রাইটিস থেকে রক্ষা করে: নিয়মিত বেলের শরবত খেলে তা আপনাকে আর্থ্রারাইটিস থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করবে। বেলের বিভিন্ন উপকারী উপাদান বাতের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। তবে কোনভাবেই এই শরবতের সাথে চিনি মেশানো যাবে না।
৫. শক্তি বৃদ্ধি করে: সারাদিন রোজা রাখার পর শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। বেলের শরবত শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে এবং ক্লান্তি দূর করে। বেল শরীরের মেটালিক গতি বাড়াতে সাহয্য করে।
অন্যান্য উপকারিতা:
- নিয়মিত বেল খেলে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে।
- সর্দি-কাশির জন্য বেলপাতার রস উপকারী।
- বেলে থাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ, যা মুখের ব্রণ সারাতে সাহায্য করে।
- জন্ডিসের সময় পাকা বেলের শরবত খাওয়া উপকারী।
- দীর্ঘমেয়াদী আমাশয়-ডায়রিয়া রোগে কাঁচা বেল নিয়মিত খেলে দ্রুত আরোগ্য লাভ করা সম্ভব।
বেলের শরবত তৈরির পদ্ধতি:
পাকা বেলের শরবত তৈরি করা খুবই সহজ। প্রথমে বেলের শাঁস বের করে নিন। তারপর এর সঙ্গে পরিমাণমতো পানি, স্বাস্থ্যসম্মত গুড় এবং সামান্য লেবুর রস মিশিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। বরফ কুচি মিশিয়ে ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশন করুন।
তাই, এই রমজানে ইফতারে কেমিক্যালযুক্ত শরবতের পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর বেলের শরবত পান করুন এবং সুস্থ থাকুন।