সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতারে শুরুতেই এক গ্লাস ঠান্ডা শরবতের জুড়ি নেই। পানি বা খেজুর এই দুটো দিয়েই মূলত ইফতার খোলা হয়। আর শরবত মানেই মিষ্টি কিছু। যদিও আমরা সাধারণত চিনি দিয়েই শরবত বানাতে অভ্যস্ত, কিন্তু স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে চিনির শরবত খেতে মানা করা হয় রোজদারদেরকে। তাই ইফতারে ঘরে থাকা সারাধণ উপকরণ দিয়ে স্বাস্থ্যকর শরবত বানিয়ে নিতে পারেন। জেনে নিন এমন কিছু পানীয়র কথা, যা চিনি ছাড়াই বাসায় দিব্যি তৈরি করে নিতে পারবেন-
১. লেমন মিন্ট: ইফতারে প্রাণ ঠান্ডা করা এক গ্লাস শরবত হতে পারে পুদিনাপাতার শরবত। এই শরবত বানানোর জন্য পুদিনাপাতা, পানি, মধু, লেবুর রস, এবং স্বাদ অনুযায়ী কাঁচা মরিচ বা বিট লবণ। এটি হজমশক্তি বাড়ায়, গ্যাস ও বদহজম দূর করে, এবং শরীর ঠান্ডা রাখে। পুদিনায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান শরীরের প্রদাহ কমায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়া এটি মুখের দুর্গন্ধ দূর করে এবং ত্বক পরিষ্কার রাখে।
২. তরমুজের স্মুদি: ব্লেন্ডারে একসাথে টুকরো করা ও বিচি ছাড়ানো তরমুজ, কলা ও স্বাদ মতো মধু দিন। এর সঙ্গে মেশান আমন্ড দুধ। চাইলে এর বদলে নারকেলের দুধও মেশাতে পারে। ভালো করে ব্লেন্ড করে গ্লাসে ঢেলে পরিবেশন করুন। ব্লেন্ড করার সময় বরফের টুকরা দিয়ে দিন অথবা গ্লাসে বরফের টুকরা মিশিয়ে নিন। তরমুজের শরবত শরীর ঠান্ডা রাখে এবং পানিশূন্যতা দূর করে। এছাড়া এটি হজমশক্তি বাড়ায় এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে।
৩. আদা-লেবু পানি: আদা-লেবু পানি বানানোর জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ হলো আদা, লেবু, পানি, এবং স্বাদ অনুযায়ী মধু বা সামান্য লবণ। আদা কুচি করে পানিতে সেদ্ধ করে নিন। আদার রস সহ পানিটি ঠান্ডা হলে এতে লেবুর রস ও মধু যোগ করে নিন। কিছুটা লবণ বা বিট লবণ দিয়ে নিন। আদা-লেবু পানি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি হজমশক্তি বাড়ায়, মেটাবলিজম উন্নত করে, এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। আদায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান শরীরের প্রদাহ কমায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। লেবু ভিটামিন সি সমৃদ্ধ, যা ত্বক ও ইমিউন সিস্টেমের জন্য ভালো।
৪. জিরা পানি: জিরা পানি আমাদের দেশের মানুষ যুগ যুগ ধরে একটি স্বাস্থ্যকর পানীয় হিসেবে পান করে আসছে। এটি শরীরের ক্ষতিকর চর্বি ও অস্বাস্থ্যকর কোলস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে ওজন কমাতে সহায়তা করে। জিরা পানি হজমশক্তি বাড়ায়, গ্যাস ও অ্যাসিডিটি কমায়, এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এছাড়া এটি শরীর ডিটক্সিফাই করে, ত্বক পরিষ্কার রাখে, এবং বিপাকক্রিয়া উন্নত করে।
৫. গুড়ের শরবত: গুড়ের শরবত বানানোর জন্য গুড় পানির সাথে খুব ভালো করে মিক্স করে নিতে হবে। ভিন্ন স্বাদের জন্য কাঁচা মরিচ বা সামান্য লবণ যোগ করতে পারেন। গুড়ের শরবত স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি রক্ত পরিষ্কার করে, হজমশক্তি বাড়ায়। গুড়ে থাকা আয়রন রক্তশূন্যতা দূর করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ইফতারে এই শরবত শরীর ঠান্ডা রাখে এবং পানিশূন্যতা রোধ করে।
৬. বাদামের ঠান্ডাই: সারাদিন রোজার রাখার কারণে শরীরে পানি শূন্যতা তৈরি হয়। এক গ্লাস বাদাম শরবতে পানিশূন্যতা পূরণের পাশাপাশি মিলবে প্রয়োজনীয় পুষ্টিও। বাদাম শরবত তৈরি করার জন্য প্রথমে দুধ ফুটিয়ে নিন। এরপর তাতে জাফরান ও পেস্তাবাদাম কুচিসহ দুধ জ্বাল করতে থাকুন। দুধ জ্বাল হয়ে গেলে এবার এতে কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, পেস্তাবাদাম কুচি ও কিছু খেজুর দিয়ে ঠান্ডা করুন। ঠান্ডা হয়ে গেলে কলা সহ এই দুধটি ব্লেন্ডারে দিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। ফ্রিজে রেখে বরফ কুচি দিয়ে পরিবশেন করলে খেতে বেশি সুস্বাদু লাগবে।