ইরানের নাতাঞ্জ, ফোরদো এবং ইস্পাহান, এই ৩ পরমাণু কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
স্থানীয় সময় শনিবার রাতে এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচির অন্যতম প্রধান স্থাপনা ফোরদো ‘আর নেই’।
মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ স্টেলথ বোমারু বিমান ইরানে এ হামলায় অংশ নেয়। ফোরদোর ওপর ছয়টি ‘বাংকার বাস্টার’ বোমা ফেলা হয়েছে। এছাড়া অন্য দুটি স্থাপনায় ৩০টি টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে।
হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিকভাবে ইরানকে জানিয়ে দিয়েছে, এই হামলাগুলোই তাদের চূড়ান্ত পদক্ষেপ, তেহরানে সরকার পরিবর্তনের কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই।
যুক্তরাষ্ট্রকে ‘চিরস্থায়ী ফল’ ভোগ করতে হবে: ইরান
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা করায় যুক্তরাষ্ট্রকে ‘চিরস্থায়ী ফল’ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি। হামলা করে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে বলে দাবি তার।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরাঘচি বলেন, ‘জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে আক্রমণ করে জাতিসংঘ সনদ, আন্তর্জাতিক আইন এবং নিউক্লিয়ার নন-প্রলিফেরেশন চুক্তির (এনপিটি) গুরুতর লঙ্ঘন করেছে। আজকের এই ঘটনার জন্য তাদের অত্যন্ত ভয়াবহ এবং এর চিরস্থায়ী পরিণতি ভোগ করতে হবে। জাতিসংঘের প্রতিটি সদস্যকে এই অত্যন্ত বিপজ্জনক, আইনহীন এবং অপরাধমূলক আচরণের জন্য সতর্ক থাকতে হবে।’
তিনি আরও বলেন যে ইরান তার সার্বভৌমত্ব, স্বার্থ এবং জনগণকে রক্ষা করার জন্য সব বিকল্প সংরক্ষণ করে।
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংসের প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়েছে: নেতানিয়াহু
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংসের যে প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছিলেন, তা সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। আজ রোববার যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে চালানো বিমান হামলার পর এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা জানান।
ইরানের ফোর্দো, নাতাঞ্জ এবং ইসফাহান পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর ‘সাহসী’ হামলা চালানোর জন্য নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন,‘ এই হামলা ছিল একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত, যা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির দ্বার খুলে দিতে পারে।’
ভিডিও বার্তায় নেতানিয়াহু বলেন, ‘অভিযানের শুরুতেই আমি আপনাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো যেভাবেই হোক ধ্বংস করা হবে। আজ সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়েছে।’
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী যোগ করেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও আমি প্রায়ই বলি, ‘‘শক্তির মাধ্যমে শান্তি’’। আগে আসে শক্তি, তারপর আসে শান্তি।’
খামেনির উপদেষ্টা বললেন, ‘এখন আমাদের পালা’
যুক্তরাষ্ট্রের নৌবহরে হামলার হুঁশিয়ার দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির একজন বিশিষ্ট উপদেষ্টা। একই সঙ্গে তিনি হরমুজ প্রণালী বন্ধেরও হুমকি দিয়েছেন।
ইরানের কায়হান পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ও খামেনির ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা হিসেবে পরিচিত হোসেইন শরিয়তমাদারি সতর্ক করে বলেছেন, ‘ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর এখন আমাদের পালা।’
কায়হানের একটি টেলিগ্রাম বার্তায় শরিয়তমাদারির উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে: ‘কোনো দ্বিধা বা বিলম্ব ছাড়াই প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে আমাদের বাহরাইনে অবস্থিত মার্কিন নৌবহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো উচিত এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটিশ, জার্মান এবং ফরাসি জাহাজের জন্য হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেওয়া উচিত।’
আরও হামলার হুমকি দিলেন ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানকে সতর্ক করে বলেছেন, শান্তি না এলে আরও ভয়াবহ পরিণতির মুখে পড়তে হবে ইরানকে। ট্রাম্প বলেন, ‘মনে রাখবেন, অনেক টার্গেট এখনো বাকি আছে। আজ রাতের লক্ষ্যবস্তু ছিল সবচেয়ে কঠিন, সম্ভবত সবচেয়ে আইনসঙ্গত। কিন্তু যদি দ্রুত শান্তি না আসে, তাহলে আমরা অন্যান্য লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুলতা, গতি এবং দক্ষতার সঙ্গে আঘাত হানব।’
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক ও ওয়াশিংটনে উচ্চ সতর্কাবস্থা
ইরানের প্রধান তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বড় ধরনের আঘাত হানার পর যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ শহর নিউ ইয়র্ক ও ওয়াশিংটন ডিসির কর্তৃপক্ষ উচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় স্থাপনাগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়, জানিয়েছে ফক্স নিউজ।
সামাজিক মাধ্যম এক্স এ এক পোস্টে নিউ ইয়র্ক পুলিশ বিভাগ (এনওয়াইপিডি) বলে, “ইরানের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। ব্যাপক সতর্কতার অংশ হিসেবে আমরা নিউ ইয়র্ক শহরজুড়ে ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও কূটনৈতিক স্থাপনাগুলোতে আমরা অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করছি আর আমাদের ফেডারেল অংশীদারদের সঙ্গে সমন্বয় করছি। নিউ ইয়র্ক শহরে যে কোনো সম্ভাব্য প্রভাব পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখবো আমরা।”