এআই (AI) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি প্রকৃতিকে প্রত্যাঘাত করছে!

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) প্রকৃতিকে প্রত্যাঘাত করার বিষয়টি একটি জটিল এবং বহুমাত্রিক বিষয়। এর ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় দিকই রয়েছে। বর্তমান যুগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই (AI) এমন একটি প্রযুক্তি জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। আমরা যখন মোবাইলে একটি এআই ছবি কারো মুখ বসিয়ে তৈরি করি প্রকৃতপক্ষে কী পরিমাণ বিদ্যুৎ শক্তি এবং পরিবেশগত ক্ষতি জড়িত থাকে। আপনি যখন ফোনে মজা করে নিজের এই ছবির ফ্যান্টাসি জগৎ বদলে ফেলেন। তখন আপনি কি জানেন? এই কয়েক সেকেন্ডের আনন্দের পৃথিবীর জন্য অন্যপ্রান্তে কতটা শক্তি, পানি আর প্রকৃতির ক্ষতি হচ্ছে?

সাধারণ একটি টিকটক ভিডিওতে এআই ফিল্টার চালাতে মাত্র কয়েক সেকেন্ড সময় ব্যয় করলেন, কিন্তু সেই ভিডিওটি হয়তো হাজার মাইল দূরের কোনো সার্ভারে গিয়ে প্রক্রিয়াজাত হল। সেই সার্ভারে বিশাল এআই মডেল চলল, প্রচুর প্রসেসর সক্রিয় হলো, এবং তারপর আপনাকে রিটার্ন করে দিলো সেই পরিবর্তিত ভিডিওটি। এক ক্লিকের পেছনে কাজ করে হাজার কিলোমিটার দূরের ডেটা সেন্টার যেখান থেকে সেই ছবি বানিয়ে আপনার ফোনে পাঠানো হয়। এই প্রক্রিয়ায় চলে বিশাল কম্পিউটিং যাতে লাগে গিগাওয়াট বিদ্যুৎ এবং সেই সার্ভার ঠান্ডা রাখতে উড়ে যায় লিটার লিটার পানি। ডেটা সেন্টার হচ্ছে এমন এক গুদামঘর, যেখানে অনেক কম্পিউটার থাকে, যা দূর থেকে এআই, ডেটা প্রক্রিয়াকরণ ও স্ট্রিমিংয়ের মতো বিভিন্ন পরিষেবা চালু রাখে।

এই প্রক্রিয়ায় শুধু বিদ্যুৎই নয়, বিপুল পরিমাণ পানি সম্পদ খরচ হচ্ছে। ডেটা সেন্টারগুলিকে ঠান্ডা রাখতে প্রচুর পরিমাণে জলের প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ গুগলের ডেটা সেন্টারগুলো প্রতিদিন প্রায় ২১ লাখ লিটার পানি ব্যবহার করে শুধুমাত্র সার্ভার ঠান্ডা রাখার জন্য। এই পানির পরিমাণ প্রায় ৪২০০ মানুষের একদিনের পানির প্রয়োজন মেটাতে পারে। অথচ আমাদের পৃথিবীর ৭৫ ভাগ পানিই খাওয়ার অযোগ্য এবং মাত্র ০.৫% পানি আমাদের ব্যবহারের জন্য সহজলভ্য। যা আমরা সচরাচর চিন্তাই করি না। বর্তমানে প্রায় ৭২০ মিলিয়ন মানুষ পানির চরম সংকটে ভোগছে। এই অবস্থায় এআই প্রযুক্তির লাগামহীন বিস্তার সেই সংকটকে আরো জটিল করে তুলছে। শুধু প্রয়োজনীয় কাজেই নয়, অনেক সময় একেবারেই অপ্রয়োজনীয় ও বিনোদনমূলক কাজেও এআই ব্যবহার হচ্ছে। কিন্তু এর পেছনে যে পরিবেশগত ক্ষতি হচ্ছে, তা কেউ চিন্তা করে না। বরং এমন কাজে এআই ব্যবহার করতে হবে যেগুলো সমাজ, শিক্ষা বা পরিবেশের উপকারে আসে।

এআই (AI) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি প্রকৃতিকে প্রত্যাঘাত করছে! prokritibarta

ইতিবাচক দিক

পরিবেশ পর্যবেক্ষণে এআই ব্যবহার করে বনভূমি পর্যবেক্ষণ, বন্যপ্রাণীর ট্র্যাকিং, দূষণ সনাক্তকরণ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব। এর মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণের প্রচেষ্টা আরও কার্যকর হতে পারে। এআই-ভিত্তিক নির্ভুল কৃষি পদ্ধতির মাধ্যমে সার ও কীটনাশকের ব্যবহার কমানো এবং ফলন বৃদ্ধি করা সম্ভব, যা পরিবেশের উপর চাপ কমাতে পারে। এআই ব্যবহার করে কৃষকদের জন্য আবহাওয়ার আগাম পূর্বাভাস দেওয়া যেতে পারে। স্বাস্থ্যসেবা খাতে রোগ নির্ণয়ে দ্রুত রিপোর্ট তৈরি ও বিশ্লেষণে এআই বিশাল ভূমিকা রাখতে পারে। এআই ব্যবহার করে পরিবহন রুট এবং ট্র্যাফিকের ব্যবস্থাপনা উন্নত করা যেতে পারে, যার ফলে জ্বালানি সাশ্রয় এবং কার্বন নিঃসরণ হ্রাস হতে পারে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ভূমিকম্প বা বন্যার পূর্বাভাস দিতে এআই কাজে লাগতে পারে। এআই জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর প্রভাব সম্পর্কে আরও উন্নত মডেল তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে, যা নীতি নির্ধারকদের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সহায়তা করবে। এছাড়াও শিক্ষা প্রসারে ব্যক্তিভিত্তিক শেখার উপায় তৈরি করা, যেখানে ছাত্রের দুর্বলতা বিশ্লেষণ করে কনটেন্ট সাজানো যায়।

এআই (AI) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি প্রকৃতিকে প্রত্যাঘাত করছে! prokritibarta

নেতিবাচক দিক

এআই মডেল তৈরি এবং পরিচালনার জন্য প্রচুর পরিমাণে বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। এই বিদ্যুতের উৎপাদন জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরশীল হলে কার্বন নিঃসরণ বৃদ্ধি পায়, যা জলবায়ু পরিবর্তনের একটি প্রধান কারণ। এআই হার্ডওয়্যার যেমন; গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট বা জিপিইউ তৈরি এবং বাতিল করার ফলে ইলেকট্রনিক বর্জ্য তৈরি হয়। এই বর্জ্যে থাকা ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ মাটি ও জল দূষিত করতে পারে। এআই প্রযুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল যেমন; কোবাল্ট, সিলিকন, সোনা উত্তোলনের ফলে পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। খনি খননের ফলে মাটি ক্ষয় এবং দূষণ হতে পারে। এআই-চালিত অ্যাপ্লিকেশনগুলির ব্যবহার যত বাড়ছে, তত বেশি শক্তি এবং সম্পদের প্রয়োজন হচ্ছে, যা পরিবেশের উপর আরও বেশি চাপ সৃষ্টি করছে। উদাহরণস্বরূপ, এআই-ভিত্তিক সার্চ ইঞ্জিনগুলি সাধারণ সার্চ ইঞ্জিনের তুলনায় বেশি শক্তি খরচ করে।

গবেষকরা বলছেন, প্রয়োজন অপ্রয়োজনীয় গতিতে এআই প্রসার ঘটতে থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে এটি হতে পারে বিশ্বের অন্যতম বড় কার্বন ও পানি নিষ্কাশনকারী প্রযুক্তি। এআই ব্যবহারে পানির চাহিদা ২০২৭ সালের মধ্যে ৬.৬ বিলিয়ন ঘনমিটার ছাড়িয়ে যেতে পারে। তাহলে কী আমাদের এআই পুরোপুরি পরিহার করা উচিত? একেবারেই না। প্রযুক্তি ব্যবহার আমরা থামাতে পারি না।

এআই (AI) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি প্রকৃতিকে প্রত্যাঘাত করছে! prokritibarta

পরিবেশবান্ধব সমাধান

বিশ্বের বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানি এখন “Green AI” নিয়ে কাজ করছে। তাদের লক্ষ্য হলো পরিবেশবান্ধব এআই তৈরি করা, যাতে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার, বাতাস চালিত টারবাইন, পানি পুনর্ব্যবহার এবং ইকো-ফ্রেন্ডলি ডেটা সেন্টার ব্যবহার করা যায়। ডেটা সেন্টারের উদ্যোক্তারা পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দিকে কেন ঝুঁকছে? কারণ তাদের অনেক শক্তির প্রয়োজন এবং তা নির্ভরযোগ্য হতে হবে। এআই চালাতে যে বিপুল পরিমাণ ডেটা সেন্টারের প্রয়োজন তার জন্য পারমাণবিক শক্তির প্রয়োজন। একটি ডেটা সেন্টারই ছোটখাট একটি শহরের সমান পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারে। ডেটা সেন্টারের এই বিপুল পরিমাণ বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে চমৎকার সমাধান পারমাণবিক শক্তি। কারণ ‘পরিবেশবান্ধব ও ২৪ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের দুর্দান্ত উৎস’ হতে পারে এটি।

এআই (AI) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি প্রকৃতিকে প্রত্যাঘাত করছে! prokritibarta

পরিশেষে

এআই প্রযুক্তি প্রকৃতিকে প্রত্যাঘাত করছে কিনা, তা নির্ভর করে আমরা কীভাবে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করছি। যদি আমরা পরিবেশবান্ধব উপায়ে এআই বিকাশ এবং ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারি, তবে এটি পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এআই অবশ্যই ভবিষ্যতের দিশারী হতে পারে, তবে সেটি যেন আমাদের ধ্বংসের বাহক না হয়। এর জন্য দরকার সচেতনতা, দায়িত্বশীলতা এবং বুদ্ধিমত্তা। প্রযুক্তি আমাদের বন্ধু হোক, পরিবেশের শত্রুতে পরিণত না হোক। এআই ব্যবহারে সচেতন হলে ভবিষ্যত হতে পারে আরো উজ্জ্বল, টেকসই এবং মানবিক। অন্যথায় অপরিকল্পিত এবং অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে প্রকৃতির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই, নৈতিক এআই (Ethical AI) এর বিকাশ এবং পরিবেশগত প্রভাব বিবেচনা করে এর ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি।

এআই (AI) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি প্রকৃতিকে প্রত্যাঘাত করছে!

আপডেট সময় ০৭:০৪:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) প্রকৃতিকে প্রত্যাঘাত করার বিষয়টি একটি জটিল এবং বহুমাত্রিক বিষয়। এর ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় দিকই রয়েছে। বর্তমান যুগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই (AI) এমন একটি প্রযুক্তি জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। আমরা যখন মোবাইলে একটি এআই ছবি কারো মুখ বসিয়ে তৈরি করি প্রকৃতপক্ষে কী পরিমাণ বিদ্যুৎ শক্তি এবং পরিবেশগত ক্ষতি জড়িত থাকে। আপনি যখন ফোনে মজা করে নিজের এই ছবির ফ্যান্টাসি জগৎ বদলে ফেলেন। তখন আপনি কি জানেন? এই কয়েক সেকেন্ডের আনন্দের পৃথিবীর জন্য অন্যপ্রান্তে কতটা শক্তি, পানি আর প্রকৃতির ক্ষতি হচ্ছে?

সাধারণ একটি টিকটক ভিডিওতে এআই ফিল্টার চালাতে মাত্র কয়েক সেকেন্ড সময় ব্যয় করলেন, কিন্তু সেই ভিডিওটি হয়তো হাজার মাইল দূরের কোনো সার্ভারে গিয়ে প্রক্রিয়াজাত হল। সেই সার্ভারে বিশাল এআই মডেল চলল, প্রচুর প্রসেসর সক্রিয় হলো, এবং তারপর আপনাকে রিটার্ন করে দিলো সেই পরিবর্তিত ভিডিওটি। এক ক্লিকের পেছনে কাজ করে হাজার কিলোমিটার দূরের ডেটা সেন্টার যেখান থেকে সেই ছবি বানিয়ে আপনার ফোনে পাঠানো হয়। এই প্রক্রিয়ায় চলে বিশাল কম্পিউটিং যাতে লাগে গিগাওয়াট বিদ্যুৎ এবং সেই সার্ভার ঠান্ডা রাখতে উড়ে যায় লিটার লিটার পানি। ডেটা সেন্টার হচ্ছে এমন এক গুদামঘর, যেখানে অনেক কম্পিউটার থাকে, যা দূর থেকে এআই, ডেটা প্রক্রিয়াকরণ ও স্ট্রিমিংয়ের মতো বিভিন্ন পরিষেবা চালু রাখে।

এই প্রক্রিয়ায় শুধু বিদ্যুৎই নয়, বিপুল পরিমাণ পানি সম্পদ খরচ হচ্ছে। ডেটা সেন্টারগুলিকে ঠান্ডা রাখতে প্রচুর পরিমাণে জলের প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ গুগলের ডেটা সেন্টারগুলো প্রতিদিন প্রায় ২১ লাখ লিটার পানি ব্যবহার করে শুধুমাত্র সার্ভার ঠান্ডা রাখার জন্য। এই পানির পরিমাণ প্রায় ৪২০০ মানুষের একদিনের পানির প্রয়োজন মেটাতে পারে। অথচ আমাদের পৃথিবীর ৭৫ ভাগ পানিই খাওয়ার অযোগ্য এবং মাত্র ০.৫% পানি আমাদের ব্যবহারের জন্য সহজলভ্য। যা আমরা সচরাচর চিন্তাই করি না। বর্তমানে প্রায় ৭২০ মিলিয়ন মানুষ পানির চরম সংকটে ভোগছে। এই অবস্থায় এআই প্রযুক্তির লাগামহীন বিস্তার সেই সংকটকে আরো জটিল করে তুলছে। শুধু প্রয়োজনীয় কাজেই নয়, অনেক সময় একেবারেই অপ্রয়োজনীয় ও বিনোদনমূলক কাজেও এআই ব্যবহার হচ্ছে। কিন্তু এর পেছনে যে পরিবেশগত ক্ষতি হচ্ছে, তা কেউ চিন্তা করে না। বরং এমন কাজে এআই ব্যবহার করতে হবে যেগুলো সমাজ, শিক্ষা বা পরিবেশের উপকারে আসে।

এআই (AI) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি প্রকৃতিকে প্রত্যাঘাত করছে! prokritibarta

ইতিবাচক দিক

পরিবেশ পর্যবেক্ষণে এআই ব্যবহার করে বনভূমি পর্যবেক্ষণ, বন্যপ্রাণীর ট্র্যাকিং, দূষণ সনাক্তকরণ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব। এর মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণের প্রচেষ্টা আরও কার্যকর হতে পারে। এআই-ভিত্তিক নির্ভুল কৃষি পদ্ধতির মাধ্যমে সার ও কীটনাশকের ব্যবহার কমানো এবং ফলন বৃদ্ধি করা সম্ভব, যা পরিবেশের উপর চাপ কমাতে পারে। এআই ব্যবহার করে কৃষকদের জন্য আবহাওয়ার আগাম পূর্বাভাস দেওয়া যেতে পারে। স্বাস্থ্যসেবা খাতে রোগ নির্ণয়ে দ্রুত রিপোর্ট তৈরি ও বিশ্লেষণে এআই বিশাল ভূমিকা রাখতে পারে। এআই ব্যবহার করে পরিবহন রুট এবং ট্র্যাফিকের ব্যবস্থাপনা উন্নত করা যেতে পারে, যার ফলে জ্বালানি সাশ্রয় এবং কার্বন নিঃসরণ হ্রাস হতে পারে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ভূমিকম্প বা বন্যার পূর্বাভাস দিতে এআই কাজে লাগতে পারে। এআই জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর প্রভাব সম্পর্কে আরও উন্নত মডেল তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে, যা নীতি নির্ধারকদের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সহায়তা করবে। এছাড়াও শিক্ষা প্রসারে ব্যক্তিভিত্তিক শেখার উপায় তৈরি করা, যেখানে ছাত্রের দুর্বলতা বিশ্লেষণ করে কনটেন্ট সাজানো যায়।

এআই (AI) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি প্রকৃতিকে প্রত্যাঘাত করছে! prokritibarta

নেতিবাচক দিক

এআই মডেল তৈরি এবং পরিচালনার জন্য প্রচুর পরিমাণে বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। এই বিদ্যুতের উৎপাদন জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরশীল হলে কার্বন নিঃসরণ বৃদ্ধি পায়, যা জলবায়ু পরিবর্তনের একটি প্রধান কারণ। এআই হার্ডওয়্যার যেমন; গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট বা জিপিইউ তৈরি এবং বাতিল করার ফলে ইলেকট্রনিক বর্জ্য তৈরি হয়। এই বর্জ্যে থাকা ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ মাটি ও জল দূষিত করতে পারে। এআই প্রযুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল যেমন; কোবাল্ট, সিলিকন, সোনা উত্তোলনের ফলে পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। খনি খননের ফলে মাটি ক্ষয় এবং দূষণ হতে পারে। এআই-চালিত অ্যাপ্লিকেশনগুলির ব্যবহার যত বাড়ছে, তত বেশি শক্তি এবং সম্পদের প্রয়োজন হচ্ছে, যা পরিবেশের উপর আরও বেশি চাপ সৃষ্টি করছে। উদাহরণস্বরূপ, এআই-ভিত্তিক সার্চ ইঞ্জিনগুলি সাধারণ সার্চ ইঞ্জিনের তুলনায় বেশি শক্তি খরচ করে।

গবেষকরা বলছেন, প্রয়োজন অপ্রয়োজনীয় গতিতে এআই প্রসার ঘটতে থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে এটি হতে পারে বিশ্বের অন্যতম বড় কার্বন ও পানি নিষ্কাশনকারী প্রযুক্তি। এআই ব্যবহারে পানির চাহিদা ২০২৭ সালের মধ্যে ৬.৬ বিলিয়ন ঘনমিটার ছাড়িয়ে যেতে পারে। তাহলে কী আমাদের এআই পুরোপুরি পরিহার করা উচিত? একেবারেই না। প্রযুক্তি ব্যবহার আমরা থামাতে পারি না।

এআই (AI) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি প্রকৃতিকে প্রত্যাঘাত করছে! prokritibarta

পরিবেশবান্ধব সমাধান

বিশ্বের বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানি এখন “Green AI” নিয়ে কাজ করছে। তাদের লক্ষ্য হলো পরিবেশবান্ধব এআই তৈরি করা, যাতে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার, বাতাস চালিত টারবাইন, পানি পুনর্ব্যবহার এবং ইকো-ফ্রেন্ডলি ডেটা সেন্টার ব্যবহার করা যায়। ডেটা সেন্টারের উদ্যোক্তারা পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দিকে কেন ঝুঁকছে? কারণ তাদের অনেক শক্তির প্রয়োজন এবং তা নির্ভরযোগ্য হতে হবে। এআই চালাতে যে বিপুল পরিমাণ ডেটা সেন্টারের প্রয়োজন তার জন্য পারমাণবিক শক্তির প্রয়োজন। একটি ডেটা সেন্টারই ছোটখাট একটি শহরের সমান পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারে। ডেটা সেন্টারের এই বিপুল পরিমাণ বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে চমৎকার সমাধান পারমাণবিক শক্তি। কারণ ‘পরিবেশবান্ধব ও ২৪ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের দুর্দান্ত উৎস’ হতে পারে এটি।

এআই (AI) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি প্রকৃতিকে প্রত্যাঘাত করছে! prokritibarta

পরিশেষে

এআই প্রযুক্তি প্রকৃতিকে প্রত্যাঘাত করছে কিনা, তা নির্ভর করে আমরা কীভাবে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করছি। যদি আমরা পরিবেশবান্ধব উপায়ে এআই বিকাশ এবং ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারি, তবে এটি পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এআই অবশ্যই ভবিষ্যতের দিশারী হতে পারে, তবে সেটি যেন আমাদের ধ্বংসের বাহক না হয়। এর জন্য দরকার সচেতনতা, দায়িত্বশীলতা এবং বুদ্ধিমত্তা। প্রযুক্তি আমাদের বন্ধু হোক, পরিবেশের শত্রুতে পরিণত না হোক। এআই ব্যবহারে সচেতন হলে ভবিষ্যত হতে পারে আরো উজ্জ্বল, টেকসই এবং মানবিক। অন্যথায় অপরিকল্পিত এবং অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে প্রকৃতির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই, নৈতিক এআই (Ethical AI) এর বিকাশ এবং পরিবেশগত প্রভাব বিবেচনা করে এর ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি।