বাংলাদেশে এক রোগীর শরীরে এইচএমপি ভাইরাস শনাক্ত করার তথ্য দিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআর। আক্রান্ত ব্যক্তি ঢাকার মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে ভর্তি আছেন। রোববার (১২জানুয়ারি) আইইডিসিআরের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান ডা. আহমেদ নওশের আলম বলেন, “আমরা এইচএমপিভি আক্রান্ত একজন রোগী শনাক্ত করেছি। তিনি একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত আমরা পরে জানাব।” সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, “এইচএমপি ভাইরাস আক্রান্ত একজন নারী গত শুক্রবার আমাদের এখানে ভর্তি হয়েছেন। তিনি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র-আইসিইউতে আছেন। তার বয়স ৩০ বছর, বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলায়। তার অবস্থা আগের চেয়ে ভালো।”
এবারের শীতে চীনের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে শিশুরা এ ভাইরাসে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে সতর্কতা জারি করেছে চীন। চীনের পর ভারতের কর্ণাটক রাজ্যেও আট মাসের এক শিশুর এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ পর্যন্ত বেশকিছু রোগী পাওয়া গেছে ভারতে। বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার পরামর্শ দিয়েছে ভারত সরকার। এইচএমপি ভাইরাসে সাধারণত শ্বাসতন্ত্র আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির ঠাণ্ডা, সর্দিকাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট, র্যাশ ওঠার মত লক্ষণ দেখা যায়। উপসর্গ মৃদু। তবে শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে নিউমোনিয়ার মত মারাত্মক জটিলতা তৈরি করতে পারে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, আইইডিসিআরের উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন বলেন, বাংলাদেশেও এই ভাইরাসটি ছিল, আছে। ফলে এ নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই। আক্রান্ত হলে লক্ষণ ইনফ্লুয়েঞ্জার মত। “এই রোগ বাংলাদেশে ছিল। পৃথিবীর সব দেশেই আছে, এটা নতুন না। সতর্ক থাকা উচিত, কিন্তু শুধু শুধু আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নাই। চীনের হাসপাতালের জরুরি বিভাগে অনেক রোগী আসছে, তাই তারা জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। এটা তাদের দেশের নিয়ম।” এইচএমপি ভাইরাস ‘প্রাণঘাতী রোগ নয়’ জানিয়ে ডা. মুশতাক বলেন, যারা নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত, তাদের জন্য এটি প্রাণঘাতী হতে পারে।
ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে দূরে থাকতে হাত ধোয়া, মাস্ক পরা, জ্বর ও সর্দিকাশি আছে এমন ব্যক্তি থেকে দূরে থাকা, জটিল রোগী হলে সরাসরি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন এই বিশেষজ্ঞ। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা, শীতকালীন রোগ থেকে রক্ষায় মাস্ক ব্যবহারসহ পরামর্শ মেনে চললে দেশে নতুন করে দেখা দেওয়া হিউম্যান মেটানিউমো ভাইরাস বা এইচএমপি ভাইরাস ঠেকানো যাবে। সংক্রমণ ঠেকাতে এসব নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এতে সব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র এবং দেশের বিভিন্ন প্রবেশপথে স্বাস্থ্যবিধি জোরদার করার কথাও বলা হয়েছে। অধিদপ্তর বলছে, হিউম্যান মেটানিউমো ভাইরাস অন্যান্য শ্বাসতন্ত্রের রোগের মত ফ্লু এর মত উপসর্গ সৃষ্টি করে, যা সাধারণত ২-৫ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। এ কারণে আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই।
তবে সংক্রমণ এড়াতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে অনুরোধ করা হয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তি ঢাকার মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে ভর্তি থাকার কথা বলা হয়। পরে রাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হালিমুর রশিদের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব পরামর্শ মেনে চলতে অনুরোধ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, চীনসহ উপমহাদেশে বিভিন্ন দেশে এইচএমপিভি ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এবং ভাইরাসের তীব্রতা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মতে ১৪ বছরের কম বয়সি শিশু ও ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী ব্যক্তিদের মধ্যে এ রোগের সংক্রমণ বেশি দেখা যাচ্ছে। এরসঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন, হাঁপানি বা ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, গর্ভবতী নারী ও দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য উচ্চ ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে। অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও এ রোগের সংক্রমণ দেখা দেওয়ায় এ ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরা হয়েছে নির্দেশনায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনাগুলো হল-
- >> শীতকালীন শ্বাসতন্ত্রের রোগগুলো থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য মাস্ক ব্যবহার করা;
- >> হাঁচি বা কাশির সময় বাহু বা টিস্যু দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখা;
- >> ব্যবহৃত টিস্যুটি অবিলম্বে ঢাকনাযুক্ত ময়লা ফেলার ঝুড়িতে ফেলা ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার অথবা সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়া;
- >> আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা ও কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখা;
- >> ঘন ঘন সাবান ও পানি কিংবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোয়া (অন্তত ২০ সেকেন্ড);
- >> অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক, মুখ না ধরা এবং
- >> জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট হলে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বাড়িতে থাকা।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে, এইচএমপি ভাইরাস প্রতিরোধে দেশের সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিভিল সার্জন, জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা, দেশের সব বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও সব বন্দর স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।