‘অতিকায় হস্তি লোপ পাইয়াছে, ক্ষুদ্র তেলাপোকা টিকিয়া আছে’, এই বিখ্যাত বাক্যের মতো করে বলা যায় দানবীয় ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়েছে কিন্তু সেই সময়কার কয়েকটি মাছ এখনও টিকে আছে। কেবল টিকে আছে বললে ভুল হবে, একেবারে বহাল তবিয়তে আছে। প্রাগৈতিহাসিক প্রাণী বলতেই আমরা সবাই কোনো চিন্তা না করেই বলে ফেলি ডাইনোসরদের কথা যাদের সবাই শত শত কোটি বছর আগেই পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কিন্তু সেই ডাইনোসরদের যুগ থেকে আজ পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ধরে পৃথিবীর পরিবর্তিত জলবায়ুর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেঁচে আছে গভীর সমুদ্র ও প্রাচীন জলাশয়ের কয়েক প্রজাতির মাছ। জানা যাক এরকম কয়েকটি মাছের কথা:
অ্যালিগেটর গার: উত্তর আমেরিকার স্বাদু পানির বৃহত্তম মাছ যার দৈর্ঘ ১০ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। কুমিরের প্রজাতি অ্যালিগেটরের মতো লম্বা মুখ, শক্ত মাথা ও ধারালো দাঁতের কারণে নামকরণ হয়েছে অ্যালিগেটর গার।

এর আঁশ কার্প প্রজাতির মাছের মতো হলেও ভীষণ শক্ত। এরা পানির বাইরে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। এসব বিভিন্ন বৈশিষ্টের কারণে সহজেই বলা যায়, কী ভাবে এরা যুগের পর যুগ টিকে আছে।
স্টারজিওন: বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে দামী খাবার হলো ক্যাভিয়ার, এটা আসলে স্টারজিওন মাছের ডিম। ধনীরা বেশ বিলাসী পদ্ধতিতে সফিস্টিকেটেড ক্যাভিয়ার খায়। কিন্তু ডিম সরবরাহকারীর চেহারাটা কিন্তু দশাসই, একেবারে দানব।

২০ কোটি বছর ধরে টিকে আছে এ মাছ। উত্তর আমেরিকা, রাশিয়া, ইউক্রেনের শীতল মিষ্টি পানিতে ,বড় হ্রদে ঘুরে বেড়ায় প্রাচীন এই দানবীয় মাছেরা।
কোয়েলাকান্থ: এই মাছ এতোটাই প্রাচীন যে একে লিভিং ফসিল বা জীবন্ত জীবাশ্ম ডাকা হয়। দেখতে অনেকটা কই মাছের মতো, আকারে অবশ্যই বহুগুণ বড়-দানবীয়। ৩৫ কোটি বছর থেকে পৃথিবীতে অপরিবর্তিতভাবে বসবাস করছে এ মাছটি।

তবে এটি বর্তমানে লুপ্তপ্রায়। আফ্রিকা উপকূল ও ভারত মহাসাগরের এরা বসবাস করছে। তবে, এদের প্রকৃত সংখ্যা অজ্ঞাত।
হ্যাগফিশ: সমুদ্রের সবচেয়ে ঘিনঘিনে প্রাণি এবং প্রাগৈতিহাসিক প্রাণিদের মধ্যেও সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দর্শন হলো হ্যাগফিশ। এদের খাদ্যাভ্যাসের জন্য মূলত এরা বেশি ঘিনঘিনে, পচা মাছ-কৃমি এদের পছন্দ।

এরা আঠালো পদার্থ তৈরি করে পানির সঙ্গে মিশিয়ে আরো আঠালো বানায়। পরে সেই আঠালো পদার্থ ছুড়ে মারে শিকারের গায়ে। জোঁকের মতো শিকারের গায়ে লেগে থেকে ভেতর থেকে মাংস ছিঁড়ে খায় এরা। এদের বয়স প্রায় ৫০ কোটি বছর।
ল্যানচেটফিশ: সাড়ে ছয় ফুট পর্যন্ত হতে পারে এ মাছ। এরা পৃথিবীতে এসেছে প্রায় ২৫ কোটি বছর আগে।

এদের পৃষ্টদেশে দীর্ঘ পাখা আলাদা বৈশিষ্টের প্রকাশ করে। মেরু অঞ্চল ছাড়া পৃথিবীর সব মহাসাগরেই এদের দেখা পাওয়া যায়।
অ্যারাপাইমা: স্বাদু পানির সবচেয়ে বড় মাছ গুলোর মধ্যে অন্যতম এ মাছের ওজন ৪০০ পাউন্ড পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রধানত দক্ষিণ আমেরিকার আমাজান নদীতে পাওয়া যায়।

বোফিন: ২৫০ এর মতো রেখাযুক্ত দীর্ঘ পিঠের পাখনাসারির জন্য এর নামকরণ হয়েছে বোফিন। মনে হয় পিঠভর্তি তীর নিয়ে বেড়াচ্ছে। ডায়নোসরদের যুগ থেকে বর্তমান পর্যন্ত টিকে আছে এমন তিনটি স্বাদু পানির মাছের একটি বোফিন।
স’ফিশ (করাত মাছ): মাথার সম্মুখে করাত আকৃতির বাড়তি অংশের উপস্থিতিতে এর নাম হয়েছে স’ফিশ। এই করাত সমুদ্রের নিচের নরম মাটি খুড়ে শিকারীর হাত থেকে বাঁচতে সহায়তা করে। শিকারকে আঘাত দিয়ে অচেতন করতেও ব্যবহৃত হয় এই করাত।
