কাতারের চাইতেও বেশি গরমের ঝুঁকিতে ২০২৬ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ

কাতারের চাইতেও বেশি গরমের ঝুঁকিতে ২০২৬ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ

দীর্ঘদিন ফুটবলের পেশায় থাকার কারণে স্পেন, মেক্সিকো এবং গরমে ভরা মেজর লিগ সকারের মাঠে খেললেও, ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপের মতো গরম আর কখনো অনুভব করেননি আমেরিকান মিডফিল্ডার, ট্যাব রামোস।

যুক্তরাষ্ট্র ও সুইজারল্যান্ডের মধ্যে প্রথম ম্যাচের দিন, মিশিগান স্টেটে তাপমাত্রা ছিলো ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

কিন্তু সেই ম্যাচটি ছিলো পন্টিয়াক সিলভারডোম স্টেডিয়ামে। বিশ্বকাপ ইতিহাসের প্রথম ইনডোর ম্যাচ ছিলো এটা। কিন্তু সেখানে কোনো এয়ার কন্ডিশনিং ছিলো না, যেকারণে মাঠে তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে গিয়ে ঠেকেছিলো।

রামোস বলেন, “মনে হচ্ছিলো আমরা ভেতরে ফুটছিলাম। উপরের সিটগুলো থেকে দর্শকদেরকে বের করে নিয়ে যেতে হচ্ছিলো, অনেকে অজ্ঞানও হয়ে যাচ্ছিলো।।“

সেই ওয়ার্ল্ড কাপের ব্রাজিল বনাম ইতালির ফাইনাল ম্যাচের দিনও প্রচন্ড গরম ছিলো। ম্যাচটি হয়েছিলো ক্যালিফোর্নিয়ার পাসাডেনায়, যেখানে তাপমাত্রা ছিলো ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু ফিফা সেটাকে গুরুত্ব দেয় নি।

“সাংবাদিকরা ধারণা করেছিলো যে মেক্সিকোতে খেলোয়াড়রা মারা যাবে,” ফিফার এক মুখপাত্র ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপকে ইঙ্গিত করে বলেন। তখন তীব্র গরম থাকা সত্ত্বেও কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। তাঁরা যেনো এটিকেই একধরনের বিকৃত বৈধতা হিসেবে ধরে নিয়েছে।

তিন দশকেরও বেশি সময় পরে, বিশ্বকাপ আবারও যুক্তরাষ্ট্রে ফিরছে। সহ-আয়োজক হিসেবে সাথে থাকছে মেক্সিকো এবং কানাডা। কিন্তু এবারও আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

“এই বিশ্বকাপে গরমের ঝুঁকি ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের চেয়েও বেশি হবে,” বলেন কুইনস ইউনিভার্সিটি বেলফাস্টের জলবায়ু বিজ্ঞানী ড. ডোনাল মুলানa।

শুধুমাত্র মাত্রাতিরিক্ত গরমের কারণে, ২০২২ কাতার বিশ্বকাপ গ্রীষ্মের পরিবর্তে নভেম্বর-ডিসেম্বরে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। সেখানে সর্বোচ্চ ‘ওয়েট বাল্ব’ তাপমাত্রা ছিল ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটা ২০২৬ বিশ্বকাপের জন্য পূর্বাভাস দেওয়া তাপমাত্রার চেয়ে প্রায় ১০ ডিগ্রি কম।

ওয়েট বাল্ব গ্লোব তাপমাত্রা (Wet Bulb Globe Temperature) একটি সূচক যা মূলত কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা, ক্রীড়া কার্যক্রম এবং সামরিক প্রশিক্ষণের বেলায় উপযোগীতা বোঝাতে ব্যবহার করা হয়। এর মাধ্যমে আসলে উচ্চ তাপমাত্রাজনিত ঝুঁকি নির্ধারণ করা যায়।

ড. মুলান এবং তার সহকর্মীদের গবেষণায়, ২০০৩-২০২২ সালের গ্রীষ্মকালীন তাপমাত্রার তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। এতে ২০২৩ ও ২০২৪ সালের রেকর্ড তাপপ্রবাহ অন্তর্ভুক্ত করা হয় নি।

অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মানব ও পরিবেশগত শারীরবিদ্যার অধ্যাপক, ড. গ্লেন কেনি সতর্ক করেছেন, শুধু WBGT সীমা খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের জন্য যথেষ্ট নাও হতে পারে।

বহু বছর ধরে তাপজনিত চাপের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেছেন ড. গ্লেন কেনি। তাঁর মতে, দীর্ঘ সময় ধরে অতিরিক্ত গরম পরিবেশে কাজ করা বা খেলা চালিয়ে যাওয়ার ফলে ব্যক্তি বিশেষে কী প্রতিক্রিয়া হবে, তা অনুমান করা কঠিন।

বিশেষ করে যদি এই গরমের সংস্পর্শ দীর্ঘস্থায়ী হয়। একজন খেলোয়াড় যদি টানা ১৪ দিন গরম আবহাওয়ায় খেলেন বা অনুশীলন করেন, তবে তার দেহের প্রতিক্রিয়া প্রথম দিনের তুলনায় ভিন্ন হবে।

“যথেষ্ট পরিমাণ পানি পান করলেও দেখা যাবে যে পরের দিন তাদের বেশিরভাগই পানিশূন্যতায় ভুগছেন,” বলেন কেনি। “এটা তাদের শরীরের তাপ বের করার ক্ষমতাকে দুর্বল করে। ফলে যে সীমা প্রথম দিন কার্যকর ছিল, তা ১৪তম দিনে আর কার্যকর নাও থাকতে পারে।”

“বিশ্বকাপের সময়টা ভাবুন, জুন ও জুলাই। এটি অনেক খেলোয়াড়ের জন্য একটি অত্যন্ত কঠিন মৌসুম। তখন তারা ৫০ থেকে ৫৫টি ঘরোয়া এবং মহাদেশীয় ম্যাচ খেলে থাকে,” বলেন মুলান। “এমন অবস্থায় অনেক খেলোয়াড় মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে থাকবে।”

আপলোডকারীর তথ্য

Shuvo

চবি’র কলোনি থেকে ৯ ফুট লম্বা অজগর উদ্ধার  

কাতারের চাইতেও বেশি গরমের ঝুঁকিতে ২০২৬ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ

আপডেট সময় ০৪:৩৯:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫

দীর্ঘদিন ফুটবলের পেশায় থাকার কারণে স্পেন, মেক্সিকো এবং গরমে ভরা মেজর লিগ সকারের মাঠে খেললেও, ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপের মতো গরম আর কখনো অনুভব করেননি আমেরিকান মিডফিল্ডার, ট্যাব রামোস।

যুক্তরাষ্ট্র ও সুইজারল্যান্ডের মধ্যে প্রথম ম্যাচের দিন, মিশিগান স্টেটে তাপমাত্রা ছিলো ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

কিন্তু সেই ম্যাচটি ছিলো পন্টিয়াক সিলভারডোম স্টেডিয়ামে। বিশ্বকাপ ইতিহাসের প্রথম ইনডোর ম্যাচ ছিলো এটা। কিন্তু সেখানে কোনো এয়ার কন্ডিশনিং ছিলো না, যেকারণে মাঠে তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে গিয়ে ঠেকেছিলো।

রামোস বলেন, “মনে হচ্ছিলো আমরা ভেতরে ফুটছিলাম। উপরের সিটগুলো থেকে দর্শকদেরকে বের করে নিয়ে যেতে হচ্ছিলো, অনেকে অজ্ঞানও হয়ে যাচ্ছিলো।।“

সেই ওয়ার্ল্ড কাপের ব্রাজিল বনাম ইতালির ফাইনাল ম্যাচের দিনও প্রচন্ড গরম ছিলো। ম্যাচটি হয়েছিলো ক্যালিফোর্নিয়ার পাসাডেনায়, যেখানে তাপমাত্রা ছিলো ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু ফিফা সেটাকে গুরুত্ব দেয় নি।

“সাংবাদিকরা ধারণা করেছিলো যে মেক্সিকোতে খেলোয়াড়রা মারা যাবে,” ফিফার এক মুখপাত্র ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপকে ইঙ্গিত করে বলেন। তখন তীব্র গরম থাকা সত্ত্বেও কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। তাঁরা যেনো এটিকেই একধরনের বিকৃত বৈধতা হিসেবে ধরে নিয়েছে।

তিন দশকেরও বেশি সময় পরে, বিশ্বকাপ আবারও যুক্তরাষ্ট্রে ফিরছে। সহ-আয়োজক হিসেবে সাথে থাকছে মেক্সিকো এবং কানাডা। কিন্তু এবারও আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

“এই বিশ্বকাপে গরমের ঝুঁকি ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের চেয়েও বেশি হবে,” বলেন কুইনস ইউনিভার্সিটি বেলফাস্টের জলবায়ু বিজ্ঞানী ড. ডোনাল মুলানa।

শুধুমাত্র মাত্রাতিরিক্ত গরমের কারণে, ২০২২ কাতার বিশ্বকাপ গ্রীষ্মের পরিবর্তে নভেম্বর-ডিসেম্বরে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। সেখানে সর্বোচ্চ ‘ওয়েট বাল্ব’ তাপমাত্রা ছিল ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটা ২০২৬ বিশ্বকাপের জন্য পূর্বাভাস দেওয়া তাপমাত্রার চেয়ে প্রায় ১০ ডিগ্রি কম।

ওয়েট বাল্ব গ্লোব তাপমাত্রা (Wet Bulb Globe Temperature) একটি সূচক যা মূলত কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা, ক্রীড়া কার্যক্রম এবং সামরিক প্রশিক্ষণের বেলায় উপযোগীতা বোঝাতে ব্যবহার করা হয়। এর মাধ্যমে আসলে উচ্চ তাপমাত্রাজনিত ঝুঁকি নির্ধারণ করা যায়।

ড. মুলান এবং তার সহকর্মীদের গবেষণায়, ২০০৩-২০২২ সালের গ্রীষ্মকালীন তাপমাত্রার তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। এতে ২০২৩ ও ২০২৪ সালের রেকর্ড তাপপ্রবাহ অন্তর্ভুক্ত করা হয় নি।

অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মানব ও পরিবেশগত শারীরবিদ্যার অধ্যাপক, ড. গ্লেন কেনি সতর্ক করেছেন, শুধু WBGT সীমা খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের জন্য যথেষ্ট নাও হতে পারে।

বহু বছর ধরে তাপজনিত চাপের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেছেন ড. গ্লেন কেনি। তাঁর মতে, দীর্ঘ সময় ধরে অতিরিক্ত গরম পরিবেশে কাজ করা বা খেলা চালিয়ে যাওয়ার ফলে ব্যক্তি বিশেষে কী প্রতিক্রিয়া হবে, তা অনুমান করা কঠিন।

বিশেষ করে যদি এই গরমের সংস্পর্শ দীর্ঘস্থায়ী হয়। একজন খেলোয়াড় যদি টানা ১৪ দিন গরম আবহাওয়ায় খেলেন বা অনুশীলন করেন, তবে তার দেহের প্রতিক্রিয়া প্রথম দিনের তুলনায় ভিন্ন হবে।

“যথেষ্ট পরিমাণ পানি পান করলেও দেখা যাবে যে পরের দিন তাদের বেশিরভাগই পানিশূন্যতায় ভুগছেন,” বলেন কেনি। “এটা তাদের শরীরের তাপ বের করার ক্ষমতাকে দুর্বল করে। ফলে যে সীমা প্রথম দিন কার্যকর ছিল, তা ১৪তম দিনে আর কার্যকর নাও থাকতে পারে।”

“বিশ্বকাপের সময়টা ভাবুন, জুন ও জুলাই। এটি অনেক খেলোয়াড়ের জন্য একটি অত্যন্ত কঠিন মৌসুম। তখন তারা ৫০ থেকে ৫৫টি ঘরোয়া এবং মহাদেশীয় ম্যাচ খেলে থাকে,” বলেন মুলান। “এমন অবস্থায় অনেক খেলোয়াড় মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে থাকবে।”