শিল্পবিপ্লবের পর থেকে কয়লা, পেট্রোলের মতো জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার এখন যে মাত্রায় পৌঁছেছে তা পৃথিবীর অস্তিত্বের জন্য হুমকি। যে হারে কার্বন নিঃসরণ হচ্ছে তাতে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে দ্রুত, রেকর্ড ভাঙছে তাপমাত্রা, গলছে মেরু অঞ্চলের বরফ। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন টিক টিক করে এগিয়ে চলেছে টাইম-বোমার মতো। বিপর্যয় এড়ানোর সময় দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে।’ এবারের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন কপ ২৯-এ বার বার কয়লা-পেট্রোল পোড়ানো কমাতে শিল্পোন্নত দেশগুলোর প্রতি জোর আহ্বান জানানো হয়েছে। তারাও নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছে। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে সবই কেবল কথার কথা। কারণ এ বছর বিশ্বজুড়ে রেকর্ড ৮৭৭ কোটি টন কয়লা পোড়ানো হয়েছে। এর আগে কোনো একক বছরে এত পরিমাণ কয়লা পোড়ানোর ঘটনা ইতিহাসে ঘটেনি।
প্যারিস ভিত্তিক আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। এই বিপুল পরিমাণ পোড়ানো কয়লার অর্ধেকই ব্যবহার করেছে চীন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণ বছর হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ২০২৪ সাল। বিশ্বজুড়ে মূলত তিন ধরনের জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হয়, গ্যাস, তেল ও কয়লা। এসবের মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য কয়লার দায় সবচেয়ে বেশি। প্রতিদিন পৃথিবীজুড়ে যে পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ ঘটে, তার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আসে কয়লা পোড়ানো থেকে।
আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা আইইএর তথ্য অনুযায়ী, কয়লার ব্যবহার চলতি বছর রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। যার নেতৃত্ব দিয়েছে চীন। যদিও দেশটি বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থাকে বহুমুখী করেছে, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহারও বাড়িয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও কয়লার ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। ২০২৪ সালে রেকর্ড ৪৯০ কোটি টন কয়লা ব্যবহার করেছে দেশটি।
ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলো ও আমেরিকা অবশ্য চলতি বছর কয়লার ব্যবহার কমাতে সক্ষম হয়েছে। ২০২৩ সালের চেয়ে ২০২৪ সালে কয়লার ব্যবহার ইইউ জোটভুক্ত দেশগুলোতে ১২ শতাংশ ও আমেরিকায় ৫ শতাংশ কমেছে। তবে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ায় ভবিষৎতে এই অর্জন ধরে রাখতে পারবে কি না—তা নিয়ে রয়েছে সংশয়।
আইইএর পূর্বাভাস, কয়লার ব্যবহার সবচেয়ে বেশি হবে ২০২৭ সাল পর্যন্ত। এসময় এশিয়ার দেশগুলোতে কয়লার চাহিদা আমেরিকা ও ইউরোপের কমতে থাকা চাহিদাকে ছাপিয়ে যাবে।