কাশ্মীরের পেহেলগামে জঙ্গিদের হামলায় ২৬ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে, নিহতদের বেশিরভাগই পর্যটক। এরই মধ্যে এই হামলার দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তান ভিত্তিক সন্ত্রাসী সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার স্থানীয় শাখা দ্য রেসিস্ট্যান্স ফ্রন্ট।
মঙ্গলবার দুপুরে কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার জনপ্রিয় পর্যটনস্থল পেহেলগামে পর্যটকদের লক্ষ্য করে এই হামলা চালায় জঙ্গিরা। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর কাশ্মীরে এটাই সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা।
প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, বেশ কয়েক জন পর্যটক ট্রেকিং করছিলেন। সেই সময় তাঁদের ওপর হামলা চালানো হয়। পর্যটকদের ভিড়ে মিশে ছিল হামলাকারীরা।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা খুব কাছ থেকে পর্যটকদের ওপর গুলি চালায়, যার ফলে অনেকে আহত হয়।
হামলা থেকে প্রাণে বাঁচা এক নারী জানিয়েছেন,সন্ত্রাসীরা তার স্বামীকে হত্যা করেছে। কীভাবে তার স্বামীকে হত্যা করেছে এবং কেমন আচরণ করেছে হামলাকারীরা তেমনটি জানাচ্ছিলেন বেঁচে ফেরা পল্লবী নামের ওই নারী।

নির্মম হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন, তার স্বামীকে তার সামনেই গুলি করে হত্যা করলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে এই হত্যাকাণ্ডের বার্তা পাঠাতে বলে তাকে জীবিত রেখেছিল সন্ত্রাসীরা।
হামলার কথা স্মরণ করে পল্লবী বলেন, ‘আমাদের ওপর তিন থেকে চারজন আক্রমণ করেছিল। আমি তাদের বলেছিলাম, আপনারা ইতিমধ্যে আমার স্বামীকে মেরে ফেলেছেন। আমাকেও মেরে ফেলেন। তাদের একজন বলল, আমি তোমাকে মারব না। যাও মোদিকে গিয়ে বলো।’
সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে বলছে, হামলার স্থান থেকে পাওয়া ছবিতে দেখা গেছে, আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে রক্ত এবং কয়েকজন নারী যন্ত্রণায় কাঁদছেন। স্থানীয়রা তাদের সাহায্যের জন্য ছুটে আসছেন।
হামলায় ভারতীয় নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তা এবং গোয়েন্দা ব্যুরোর একজন কর্মকর্তাও নিহত হন। আহত হয়েছেন অনেকে। এলাকাটিতে কেবল হেঁটে বা ঘোড়ায় চড়েই যাতায়াত করা যায়। তাই আহতদের সরিয়ে নিতে সামরিক হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হচ্ছে।
কী করছে ভারত সরকার
এনডিটিভি লিখেছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দ্বিপক্ষীয় সফরে সৌদি আরবে থাকলেও হামলার খবর পেয়ে তিনি সফর সংক্ষিপ্ত করে মঙ্গলবার রাতেই দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। তার ফেরার কথা ছিল বুধবার রাতে।
সফর সংক্ষিপ্ত করে বুধবার (২৩ এপ্রিল) সকালেই ভারতে নামেন মোদি। দিল্লি বিমানবন্দরে নেমেই কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন তিনি। সেই বৈঠকে ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা।
প্রধানমন্ত্রী মোদি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘এই জঘন্য অপরাধের নেপথ্যে যারা রয়েছে, তাদের ছাড় দেয়া হবে না। তাদের অসৎ উদ্দেশ্য কখনও পূরণ হবে না। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই আরও জোরদার হবে।’
নজর রাখছেন ট্রাম্প
এদিকে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট সাংবাদিকদের জানান, ট্রাম্প তার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার কাছ থেকে এই সন্ত্রাসী হামলার বিষয়ে জেনেছেন। তিনি পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন।
এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ট্রুথ সোশালে এক পোস্টে লেখেন, “কাশ্মীরের খবর গভীরভাবে উদ্বেগজনক। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের পাশে আছে যুক্তরাষ্ট্র। আমরা নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করছি, সেই সঙ্গে আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং ভারতের অসাধারণ জনগণের প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন ও গভীর সমবেদনা রইল।”
ভারত সফররত মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স এবং তার পরিবার এ ঘটনায় গভীর শোক জানিয়েছেন।
ভ্যান্স বলেছেন, “এই কয়েক দিনে আমরা ভারতের সৌন্দর্য ও মানুষের আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়েছি। এখন এই ভয়াবহ হামলার ঘটনায় আমরা তাদের জন্য প্রার্থনা করছি।”
মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের সাউথ অ্যান্ড সেন্ট্রাল এশিয়ান অ্যাফেয়ার্স ব্যুরো এক এক্স পোস্টে লিখেছে, “কাশ্মীরে এই সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানায় যুক্তরাষ্ট্র। পর্যটক ও সাধারণ মানুষের ওপর এমন বর্বর হামলার কোনো যৌক্তিকতা নেই। আমরা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছি এবং দোষীদের বিচারের দাবি জানাচ্ছি।”