সংবাদ শিরোনাম ::
Logo প্রধান উপদেষ্টা ‘অবশ্যই’ থাকছেন: পরিকল্পনা উপদেষ্টা   Logo তুরাগ দিয়েই নদী দখল ও দূষণমুক্তকরণের প্রক্রিয়া শুরু করবো: উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান Logo ট্রেনে ঈদযাত্রা: ৩ জুনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি আজ Logo রাতে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন প্রধান উপদেষ্টা Logo প্রকৃতির প্রতিশোধ: সংকটে জীববৈচিত্র্য Logo লঘুচাপ, ঘূর্ণিঝড়ের গুঞ্জন! কেমন যেতে পারে মাসের শেষ দিনগুলো, যা বলছে আবহাওয়ার পূর্বাভাস Logo প্রশাসনিক সমন্বয় ও সংস্কার ছাড়া পরিবেশ সংরক্ষণ সম্ভব নয় : পরিবেশ উপদেষ্টা Logo বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগে নারী কোটা বাতিল Logo প্রকৃতির সঙ্গে সুর মিলিয়ে চলার বার্তা নিয়ে এবছরের আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস Logo জাতীয় নির্বাচন, ‘মানবিক করিডোর’, মব সহিংসতা নিয়ে যা বললেন সেনাপ্রধান

খাবার পানিতে ‘চিরস্থায়ী’ বিষ! পরিশোধন প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা ফাঁস

খাবার পানিতে 'চিরস্থায়ী' বিষ! পরিশোধন প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা ফাঁস

সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫% কলের পানিতে এক ধরণের রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে, যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক বলে বিবেচিত।

নতুন এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রেসক্রাইব করা ওষুধ থেকে আসা কিছু চিরস্থায়ী রাসায়নিক লক্ষ লক্ষ মানুষের খাবার পানিকে দূষিত করছে। এর কারণ, বর্জ্য পরিশোধনাগুলো সেগুলো দূর করতে ব্যর্থ হচ্ছে।

বিজ্ঞানীরা যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে আটটি বড়, সরকার-চালিত বর্জ্য পরিশোধনাগার থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করে সেগুলো বিশ্লেষণ করেন।

সেখান থেকে দেখা যায়, উন্নত পরিশোধন প্রযুক্তি ব্যবহারের পরেও চিরস্থায়ী রাসায়নিক এর উপস্থিতি আছে। সেই পানি নদী ও হ্রদে নিষ্কাশিত হচ্ছে, যেখান থেকে তা আবার খাবার পানির সরবরাহে ফিরে আসতে পারে।

শুধু বর্জ্য পানি থেকেই প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ আমেরিকান এই রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসতে পারে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

“আমরা বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক শনাক্ত করছি যেগুলো সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান খুবই সীমিত,” বলেন গবেষণার সহলেখক এবং নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ প্রকৌশল বিজ্ঞানী, ব্রিজার রুইল।

চিরস্থায়ী রাসায়নিকগুলোর নাম এসেছে তাদের পরিবেশে এবং মানুষের দেহে বহু বছর ধরে টিকে থাকার ক্ষমতার কারণে। এ ধরনের প্রায় ১৫,০০০ রাসায়নিক রয়েছে, যেগুলোকে সম্মিলিতভাবে PFAS (perfluoroalkyl and polyfluoroalkyl substances) বলা হয়।

১৯৫০-এর দশক থেকে PFAS ব্যবহার হয়ে আসছে বিভিন্ন ভোক্তাপণ্য তৈরিতে – এদের তেল, চর্বি, তাপ ও পানি প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য। এরা কাপড়কে পানি-রোধী করে, কার্পেটকে দাগরোধী করে, আর রান্নার পাত্রকে নন-স্টিক করে।

কিন্তু এদের ব্যাপক ব্যবহার মানবস্বাস্থ্যের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলেছে। অতি অল্প মাত্রায় হলেও, এই রাসায়নিকগুলো থাইরয়েড সমস্যা, বন্ধ্যাত্ব এবং কিছু ক্যানসারের সঙ্গেও সম্পর্কিত।

মানুষ PFAS-এর সংস্পর্শে আসে নানা উপায়ে, তবে খাবার পানি একটি বড় মাধ্যম। ২০২৩ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় অর্ধেক ট্যাপের পানিই PFAS দ্বারা দূষিত।

রুইল বলেন, ওষুধ কোম্পানিগুলো PFAS শ্রেণির যৌগ ব্যবহার করে, কারণ সেগুলো সহজে ভাঙে না। এ কারণে ওষুধ শরীরে বেশি সময় ধরে সক্রিয় থাকে।

যদিও এটি ওষুধের কার্যকারিতার জন্য উপকারী, কিন্তু অন্য দিক থেকে সমস্যাজনক। যেসব অণু দেহে সহজে ভাঙে না, সেগুলো নদী, হ্রদ কিংবা পরিশোধনাগারেও ভাঙে না।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তন এই রাসায়নিকের সংস্পর্শ বাড়াতে পারে। খরার সময় নদী ও হ্রদ শুকিয়ে গেলেও মানুষের উৎপাদিত বর্জ্যপানির পরিমাণ কমে না।

ফলে, প্রাকৃতিক পানি কম থাকায় বর্জ্যপানিতে থাকা রাসায়নিকগুলো যথাযথভাবে পাতলা হওয়ার সুযোগ পায় না। পরে সেগুলো সরাসরি খাবার পানির প্লান্টে প্রবেশ করে।

রুইল এর মতে, এখনো অনেক গবেষণা দরকার। “অনেক PFAS রয়েছে যেগুলো আরও বেশি প্রচলিত, এবং বড় উৎসগুলোতে সেগুলো পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের জানতে হবে, স্বাস্থ্যের ওপর এগুলোর আলাদা কী প্রভাব রয়েছে।”

মানুষ চাইলে ট্যাপের পানি ছেঁকে নিতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, PFAS-এর পরিবেশে প্রবেশ ঠেকানোই সবচেয়ে কার্যকর সমাধান।

রুইল বলেন, “আমাদের এই সমস্যার মূলে পৌঁছাতে হবে। খাবার পানির প্লান্টে আরও ব্যয়বহুল, উন্নত প্রযুক্তি বসিয়ে, বা মানুষকে বাড়িতে বিশেষ ফিল্টার ব্যবহারে বাধ্য করলেই এর সমাধান হবে না।”

আপলোডকারীর তথ্য

Shuvo

প্রধান উপদেষ্টা ‘অবশ্যই’ থাকছেন: পরিকল্পনা উপদেষ্টা  

খাবার পানিতে ‘চিরস্থায়ী’ বিষ! পরিশোধন প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা ফাঁস

আপডেট সময় ১১:৪১:১৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ মে ২০২৫

সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫% কলের পানিতে এক ধরণের রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে, যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক বলে বিবেচিত।

নতুন এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রেসক্রাইব করা ওষুধ থেকে আসা কিছু চিরস্থায়ী রাসায়নিক লক্ষ লক্ষ মানুষের খাবার পানিকে দূষিত করছে। এর কারণ, বর্জ্য পরিশোধনাগুলো সেগুলো দূর করতে ব্যর্থ হচ্ছে।

বিজ্ঞানীরা যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে আটটি বড়, সরকার-চালিত বর্জ্য পরিশোধনাগার থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করে সেগুলো বিশ্লেষণ করেন।

সেখান থেকে দেখা যায়, উন্নত পরিশোধন প্রযুক্তি ব্যবহারের পরেও চিরস্থায়ী রাসায়নিক এর উপস্থিতি আছে। সেই পানি নদী ও হ্রদে নিষ্কাশিত হচ্ছে, যেখান থেকে তা আবার খাবার পানির সরবরাহে ফিরে আসতে পারে।

শুধু বর্জ্য পানি থেকেই প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ আমেরিকান এই রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসতে পারে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

“আমরা বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক শনাক্ত করছি যেগুলো সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান খুবই সীমিত,” বলেন গবেষণার সহলেখক এবং নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ প্রকৌশল বিজ্ঞানী, ব্রিজার রুইল।

চিরস্থায়ী রাসায়নিকগুলোর নাম এসেছে তাদের পরিবেশে এবং মানুষের দেহে বহু বছর ধরে টিকে থাকার ক্ষমতার কারণে। এ ধরনের প্রায় ১৫,০০০ রাসায়নিক রয়েছে, যেগুলোকে সম্মিলিতভাবে PFAS (perfluoroalkyl and polyfluoroalkyl substances) বলা হয়।

১৯৫০-এর দশক থেকে PFAS ব্যবহার হয়ে আসছে বিভিন্ন ভোক্তাপণ্য তৈরিতে – এদের তেল, চর্বি, তাপ ও পানি প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য। এরা কাপড়কে পানি-রোধী করে, কার্পেটকে দাগরোধী করে, আর রান্নার পাত্রকে নন-স্টিক করে।

কিন্তু এদের ব্যাপক ব্যবহার মানবস্বাস্থ্যের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলেছে। অতি অল্প মাত্রায় হলেও, এই রাসায়নিকগুলো থাইরয়েড সমস্যা, বন্ধ্যাত্ব এবং কিছু ক্যানসারের সঙ্গেও সম্পর্কিত।

মানুষ PFAS-এর সংস্পর্শে আসে নানা উপায়ে, তবে খাবার পানি একটি বড় মাধ্যম। ২০২৩ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় অর্ধেক ট্যাপের পানিই PFAS দ্বারা দূষিত।

রুইল বলেন, ওষুধ কোম্পানিগুলো PFAS শ্রেণির যৌগ ব্যবহার করে, কারণ সেগুলো সহজে ভাঙে না। এ কারণে ওষুধ শরীরে বেশি সময় ধরে সক্রিয় থাকে।

যদিও এটি ওষুধের কার্যকারিতার জন্য উপকারী, কিন্তু অন্য দিক থেকে সমস্যাজনক। যেসব অণু দেহে সহজে ভাঙে না, সেগুলো নদী, হ্রদ কিংবা পরিশোধনাগারেও ভাঙে না।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তন এই রাসায়নিকের সংস্পর্শ বাড়াতে পারে। খরার সময় নদী ও হ্রদ শুকিয়ে গেলেও মানুষের উৎপাদিত বর্জ্যপানির পরিমাণ কমে না।

ফলে, প্রাকৃতিক পানি কম থাকায় বর্জ্যপানিতে থাকা রাসায়নিকগুলো যথাযথভাবে পাতলা হওয়ার সুযোগ পায় না। পরে সেগুলো সরাসরি খাবার পানির প্লান্টে প্রবেশ করে।

রুইল এর মতে, এখনো অনেক গবেষণা দরকার। “অনেক PFAS রয়েছে যেগুলো আরও বেশি প্রচলিত, এবং বড় উৎসগুলোতে সেগুলো পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের জানতে হবে, স্বাস্থ্যের ওপর এগুলোর আলাদা কী প্রভাব রয়েছে।”

মানুষ চাইলে ট্যাপের পানি ছেঁকে নিতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, PFAS-এর পরিবেশে প্রবেশ ঠেকানোই সবচেয়ে কার্যকর সমাধান।

রুইল বলেন, “আমাদের এই সমস্যার মূলে পৌঁছাতে হবে। খাবার পানির প্লান্টে আরও ব্যয়বহুল, উন্নত প্রযুক্তি বসিয়ে, বা মানুষকে বাড়িতে বিশেষ ফিল্টার ব্যবহারে বাধ্য করলেই এর সমাধান হবে না।”