দীর্ঘ ১৫ মাসের বিরামহীন রক্তপাত, ধ্বংসযজ্ঞে প্রায় নিশ্চিহ্ন গাজা উপত্যকায় অবশেষে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে হামাস ও ইসরায়েল। ইসরায়েলের সঙ্গে ফিলিস্তিনির গাজার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের শর্তে রাজি হয়েছে হামাস। কাতার, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্ততায় আপাতত অবসান হতে যাচ্ছে ইসরায়েলি তাণ্ডবলীলার।
১৯ জানুয়ারি, রোববার থেকে এ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে। অর্থাৎ ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণের একদিন আগেই ঘটতে যাচ্ছে বহুল প্রতিক্ষীত এই যুদ্ধবিরতি।
এদিকে যুদ্ধবিরতি চুক্তির ঘোষণায় গাজার ফিলিস্তিনিরা উৎসব শুরু করলেও ইসরায়েল হামলা অব্যাহত রেখেছে।
কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান আল থানি জানিয়েছেন, ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা যুদ্ধবিরতি চুক্তিটি অনুমোদন করার পর এটি কার্যকর হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, “এই চুক্তি গাজায় লড়াই থামাবে, ফিলিস্তিনি বেসামরিকদের অতি প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি করবে এবং জিম্মিদের তাদের পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলিত করবে।”
চুক্তির চূড়ান্ত অংশের বিস্তারিত নিয়ে এখনও কাজ চলছে, এমনটি জানালেও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহ এটি ‘সমর্থন’ করার জন্য বাইডেনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
হামাসের নেতা খলিল আল-হাইয়া বলেছেন, এটি ফিলিস্তিনিদের ‘দৃঢ়তার’ ফল।
বহু ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি জিম্মিদের পরিবারগুলো যুদ্ধবিরতি চুক্তির খবরে উদযাপন শুরু করলেও গাজায় হামলা বন্ধ করেনি ইসরায়েল। পুরো ভূখণ্ডটিজুড়ে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে তারা।
চুক্তি ঘোষণার পর থেকে গাজাজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৩০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে আল জাজিরা জানিয়েছে।
এসব হামলার বিষয়ে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি, জানিয়েছে বিবিসি।
রয়টার্স জানায়, যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির চুক্তি ঘোষণা করার কয়েক ঘণ্টা পর ইসরায়েল গাজায় হামলা তীব্র করে তোলে বলে ফিলিস্তিনি ছিটমহলটির বাসিন্দারা ও কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। মধ্যস্থতাকারীরা রোববার যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার আগে লড়াই থামানোর আহ্বান জানিয়েছে।
হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে হওয়া এ চুক্তিতে প্রাথমিকভাবে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির কথা বলা হয়েছে, এ সময় গাজা থেকে ধীরে ধীরে বাহিনী প্রত্যাহার করবে ইসরায়েল। ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তির বিনিময়ে হামাসের হাতে থাকা ৩৩ জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে।
যুদ্ধবিরতির খবরে উল্লাস করেছে সাধারণ ইসরায়েলি এবং জিম্মিদের স্বজনরাও। অনেকেই রাজপথে নেমে আসেন, কান্নারত অনেককে দেখা গেছে একে অন্যকে জড়িয়ে ভয়াবহ যুদ্ধাবস্থার পর মুক্তির আনন্দ ভাগাভাগি করতে।
যুদ্ধবিরতির সারসংক্ষেপ জানিয়ে দোহায় এক সংবাদ সম্মেলনে কাতারের প্রধানমন্ত্রী আল থানি জানিয়েছেন, চুক্তি বাস্তবায়ন করার ধাপগুলো নিয়ে আলোচকরা ইসরায়েল ও হামাসের সঙ্গে কাজ করছেন।
গাজায় অস্ত্রবিরতি ও পণবন্দি চুক্তির ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। বুধবার (১৫ জানুয়ারি) এই চুক্তিকে স্বাগত জানান তিনি। খবর-ভয়েস অব আমেরিকা
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘আমি, মিশর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতাকারীদের এই চুক্তি সম্ভব করার লক্ষ্যে তাদের নিবেদিত প্রচেষ্টার প্রশংসা করছি। একটি কূটনৈতিক নিস্পত্তি খুঁজে পেতে তাদের অবিচল প্রতিশ্রুতি এই অর্জনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমি সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, তাদের প্রতিশ্রুতিকে বহাল রাখতে এবং এটা নিশ্চিত করতে যে এই চুক্তি যেন সম্পুর্ণ ভাবে বাস্তবায়িত হয়’।
ইসরায়েল চুক্তিটি গ্রহণ করলেও এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে এতে সম্মতি দেয়নি। দেশটির নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা ও সরকার এটি অনুমোদন করার পর তারা আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তিটিতে সম্মতি দেবে। বৃহস্পতিবার চুক্তিটি নিয়ে ভোটাভুটি হওয়ার কথা রয়েছে বলে এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দখলকৃত ভূখণ্ডে ঢুকে এক নজিরবিহীন হামলা চালায় গাজার সশস্ত্রগোষ্ঠী হামাস। ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামের ওই হামলার জবাবে শুরুতে বিমান হামলা এবং পরে স্থলঅভিযান শুরু করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। গাজার স্বাস্থ্য দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, এই সময়কালে ইসরায়েলী হামলায় প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ৪৭ হাজার ফিলিস্তিনি। বাস্তুচ্যুত হয়েছে ২০ লাখের বেশি গাজাবাসী।