সংবাদ শিরোনাম ::
Logo প্রকৃতির প্রতিশোধ: সংকটে জীববৈচিত্র্য Logo লঘুচাপ, ঘূর্ণিঝড়ের গুঞ্জন! কেমন যেতে পারে মাসের শেষ দিনগুলো, যা বলছে আবহাওয়ার পূর্বাভাস Logo প্রশাসনিক সমন্বয় ও সংস্কার ছাড়া পরিবেশ সংরক্ষণ সম্ভব নয় : পরিবেশ উপদেষ্টা Logo বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগে নারী কোটা বাতিল Logo প্রকৃতির সঙ্গে সুর মিলিয়ে চলার বার্তা নিয়ে এবছরের আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস Logo জাতীয় নির্বাচন, ‘মানবিক করিডোর’, মব সহিংসতা নিয়ে যা বললেন সেনাপ্রধান Logo রিট খারিজ, মেয়র হিসেবে ইশরাককে শপথ পড়ানোর বাধা নেই Logo প্রাক বর্ষায় রাজধানীসহ নানাস্থানে মাঝারি-ভারী বৃষ্টি Logo শিল্পে বিনামূল্যে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন বন্ধে নীতিমালা চূড়ান্ত হচ্ছে : রিজওয়ানা হাসান Logo শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন শপথবাক্য পাঠ করানোর নির্দেশ

গাজার পরিবেশ: টনকে টন বোমা, ধ্বংসস্তুপে পচাগলা লাশ, পানি-বাতাসে বিপদ  

গাজার পরিবেশ: টনকে টন বোমা, ধ্বংসস্তুপে পচাগলা লাশ, পানি-বাতাসে বিপদ  

যুদ্ধবিরতির পর গাজায় ফিরছে মানুষ, কিন্তু গাজা আর বাসযোগ্য নেই। গাজায় মানবিক বিপর্যয়ের সঙ্গে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটেছে, একেবারে সমুদ্রতীরের দেখা যাচ্ছে ভয়াবহ ধ্বংসলীলার চিত্র। এই অবস্থায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর গাজায় ফিরে যাচ্ছেন বাসিন্দারা। প্রায় পুরো এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বহু মানুষের খোঁজ নেই। ধারণা করা হচ্ছে, ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে আছে অনেকে। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির পর গাজায় ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকা হাজার হাজার গাজাবাসীর সন্ধান শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত হতভাগ্য ১২০ জনের পচাগলা মরদেহ খুঁজে পাওয়া গেছে।

ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দেহাবশেষ খুঁজতে কাজ করছেন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানায়, যুদ্ধবিরতি শুরুর আগে হারানো স্বজনদের খুঁজতে অসংখ্য পরিবারের শতাধিক ফোন পেয়েছেন বলে জানান স্বেচ্ছাসেবকরা। এক স্বেচ্ছাসেবী জানিয়েছেন, দুই দিনে গাজায় ১২০টি পচাগলা মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। অনেক মরদেহের কঙ্কাল ছাড়া আর কোনো কিছু অবশিষ্ট নেই বলে জানান ওই স্বেচ্ছাসেবী।

নিজ নিজ বাড়িতে বসবাস করতে এরইমধ্যে ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। তবে ভারী যন্ত্রপাতির অভাবে ধ্বংসাবশেষ সরানোর কাজে বেগ পেতে হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

গত ১৫ মাসের ইসরায়েলি হামলায় গাজার প্রায় ২০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, ৯০ শতাংশ বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে। সেই সঙ্গে ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপা পড়ে আছে হাজার হাজার অবিস্ফোরিত বোমা। ধ্বংসস্তুপের নিচে থাকা হাজার হাজার অবিস্ফোরিত বোমা সরাতে প্রায় এক দশক সময় লাগতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞরা।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজা থেকে চার কোটি ২০ লাখ টনের বেশি ধ্বংসাবশেষ সরাতে হবে। এতে সময় লেগে যেতে পারে ১০ বছর। এই পরিমাণ ধ্বংসাবশেষ সরাতে অর্থ লাগবে প্রায় ৭০ কোটি ডলার।

এনভায়রনমেন্টাল কোয়ালিটি অথরিটি অব প্যালেস্টাইনের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় অন্তত ৮৫ হাজার টন বোমা ফেলেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এর মধ্যে অনেক বোমা ধ্বংসস্তূপের নিচে অবিস্ফোরিত অবস্থায় আছে। এসব বোমা নিষ্ক্রিয় কিংবা অপসারণ করা বেশ জটিল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সেই সঙ্গে প্রক্রিয়াটি বেশ ব্যয়বহুল। তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তহবিল সহযোগিতা অপরিহার্য বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

জাতিসংঘের এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম (ইউএনইপি) এর নির্বাহী পরিচালক ইনগার অ্যান্ডারসেন বলেছেন , গাজার উপকূলীয় অঞ্চল, মাটি এবং বাস্তুতন্ত্র মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়েছে। এই সবই মানুষের স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা এবং গাজার স্থিতিস্থাপকতাকে গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

তিনি আরও জানান, গাজার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ভারী ধাতু এবং বিস্ফোরক রাসায়নিক সমন্বিত যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, যা মাটি ও পানির উৎসকে দূষিত করেছে এবং মানব স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি তৈরি করেছে। যা যুদ্ধ বন্ধ হওয়ার পরও দীর্ঘকাল ধরে থাকবে। অবিস্ফোরিত বোমা শিশুদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করেছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত ৪৭,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজা পুনর্গঠনে কয়েক দশক সময় লাগতে পারে এবং এ জন্য প্রয়োজন হবে কয়েক কোটি ডলার। ধ্বংসস্তূপ সরাতে ২১ বছর এবং ১.২ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হতে পারে বলে জানানো হয়েছে।

আপলোডকারীর তথ্য

Shuvo

প্রকৃতির প্রতিশোধ: সংকটে জীববৈচিত্র্য

গাজার পরিবেশ: টনকে টন বোমা, ধ্বংসস্তুপে পচাগলা লাশ, পানি-বাতাসে বিপদ  

আপডেট সময় ১২:৪০:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫

যুদ্ধবিরতির পর গাজায় ফিরছে মানুষ, কিন্তু গাজা আর বাসযোগ্য নেই। গাজায় মানবিক বিপর্যয়ের সঙ্গে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটেছে, একেবারে সমুদ্রতীরের দেখা যাচ্ছে ভয়াবহ ধ্বংসলীলার চিত্র। এই অবস্থায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর গাজায় ফিরে যাচ্ছেন বাসিন্দারা। প্রায় পুরো এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বহু মানুষের খোঁজ নেই। ধারণা করা হচ্ছে, ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে আছে অনেকে। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির পর গাজায় ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকা হাজার হাজার গাজাবাসীর সন্ধান শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত হতভাগ্য ১২০ জনের পচাগলা মরদেহ খুঁজে পাওয়া গেছে।

ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দেহাবশেষ খুঁজতে কাজ করছেন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানায়, যুদ্ধবিরতি শুরুর আগে হারানো স্বজনদের খুঁজতে অসংখ্য পরিবারের শতাধিক ফোন পেয়েছেন বলে জানান স্বেচ্ছাসেবকরা। এক স্বেচ্ছাসেবী জানিয়েছেন, দুই দিনে গাজায় ১২০টি পচাগলা মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। অনেক মরদেহের কঙ্কাল ছাড়া আর কোনো কিছু অবশিষ্ট নেই বলে জানান ওই স্বেচ্ছাসেবী।

নিজ নিজ বাড়িতে বসবাস করতে এরইমধ্যে ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। তবে ভারী যন্ত্রপাতির অভাবে ধ্বংসাবশেষ সরানোর কাজে বেগ পেতে হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

গত ১৫ মাসের ইসরায়েলি হামলায় গাজার প্রায় ২০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, ৯০ শতাংশ বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে। সেই সঙ্গে ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপা পড়ে আছে হাজার হাজার অবিস্ফোরিত বোমা। ধ্বংসস্তুপের নিচে থাকা হাজার হাজার অবিস্ফোরিত বোমা সরাতে প্রায় এক দশক সময় লাগতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞরা।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজা থেকে চার কোটি ২০ লাখ টনের বেশি ধ্বংসাবশেষ সরাতে হবে। এতে সময় লেগে যেতে পারে ১০ বছর। এই পরিমাণ ধ্বংসাবশেষ সরাতে অর্থ লাগবে প্রায় ৭০ কোটি ডলার।

এনভায়রনমেন্টাল কোয়ালিটি অথরিটি অব প্যালেস্টাইনের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় অন্তত ৮৫ হাজার টন বোমা ফেলেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এর মধ্যে অনেক বোমা ধ্বংসস্তূপের নিচে অবিস্ফোরিত অবস্থায় আছে। এসব বোমা নিষ্ক্রিয় কিংবা অপসারণ করা বেশ জটিল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সেই সঙ্গে প্রক্রিয়াটি বেশ ব্যয়বহুল। তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তহবিল সহযোগিতা অপরিহার্য বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

জাতিসংঘের এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম (ইউএনইপি) এর নির্বাহী পরিচালক ইনগার অ্যান্ডারসেন বলেছেন , গাজার উপকূলীয় অঞ্চল, মাটি এবং বাস্তুতন্ত্র মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়েছে। এই সবই মানুষের স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা এবং গাজার স্থিতিস্থাপকতাকে গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

তিনি আরও জানান, গাজার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ভারী ধাতু এবং বিস্ফোরক রাসায়নিক সমন্বিত যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, যা মাটি ও পানির উৎসকে দূষিত করেছে এবং মানব স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি তৈরি করেছে। যা যুদ্ধ বন্ধ হওয়ার পরও দীর্ঘকাল ধরে থাকবে। অবিস্ফোরিত বোমা শিশুদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করেছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত ৪৭,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজা পুনর্গঠনে কয়েক দশক সময় লাগতে পারে এবং এ জন্য প্রয়োজন হবে কয়েক কোটি ডলার। ধ্বংসস্তূপ সরাতে ২১ বছর এবং ১.২ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হতে পারে বলে জানানো হয়েছে।