সংবাদ শিরোনাম ::
Logo ইকোসিস্টেমকে রক্ষা করে প্রাকৃতিক সম্পদকে সুরক্ষার বার্তা দিলেন পরিবেশ সচিব Logo নতুন প্রজন্মকে সাথে নিয়ে এবছরের ‘সবুজে সাজাই বাংলাদেশ’ শুরু  Logo গাজীপুরে কৃষি প্রযুক্তি ও পুষ্টি মেলার উদ্বোধন Logo দাবি না মানলে জবি শিক্ষার্থীদের লাগাতার কর্মসূচির ঘোষণা Logo সাম্য হত্যার ঘটনায় শোক পালন করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন Logo অ্যান্টার্কটিকায় জলবায়ু পরিবর্তন স্পষ্ট, পূর্ব দিকের চেয়ে পশ্চিমে দ্রুত গলছে বরফ Logo প্রকৃতিকে ধ্বংস করে উন্নয়ন হলে সে উন্নয়ন টেকসই হবেনা: রিজওয়ানা হাসান Logo ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সম্মানসূচক ডি. লিট ডিগ্রি দিলো চবি Logo চিরতরে চলে গেলেন ‘সবচেয়ে গরিব প্রেসিডেন্ট’   Logo চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড: প্রধান উপদেষ্টা

গাধা দিবস! হাসি-তামাশা না করে, জেনে নেয়া যাক সভ্যতার সঙ্গীকে  

‘গাধা’ শব্দটি প্রায়ই ব্যবহার হয় তিরস্কারসূচক শব্দ হিসেবে। কেউ একটু বোকামি করলেই তাকে গাধার সঙ্গে তুলনা করতে ছাড়েন না অন্যরা। কোনো বোকামি বা তথাকথিত চালাকদের চেয়ে সরল হলেই ‘গাধা’ কোথাকার, ‘গাধা একটা’ এসব শুনেছেন অনেকেই। মানুষ গাধাকে যেভাবে বোকা ভাবে গাধা কি আসলেই সেরকম বোকা? সেটা নয়, কারণ, প্রাণীটি শত শত বছর ধরে মরুভূমির মতো প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে এখনো পৃথিবীতে টিকে আছে। চরম দুর্গম, রুক্ষ এলাকায় আজও তারা চড়ে বেড়ায়। যাযাবর কিংবা নগরসভ্যতায় মানুষ তাদের দিয়ে পণ্য বহনের কাজ করিয়ে নিচ্ছে, গাধা কিন্তু সেই কাজ ঠিকঠাক করে যাচ্ছে। স্পষ্টতই গাধা একটি পরিশ্রমী প্রাণী। অথচ মানুষ সেই গাধাকে নিষ্ক্রিয় ভাবে, বোকা ভাবে! বরং গাধা এমন একটি প্রাণী যারা সারাদিনের কঠোর পরিশ্রমকে ভয় পায় না। গাধারা গাড়ি টানে, গম ভাঙানো, তেল বের করার সনাতনী কলে কাজ করে  ও মাইলের পর মাইল পথ হেঁটে মালামাল বহন করে। এমনকি অন্য প্রাণী হাল ছেড়ে দিলেও গাধা হাল ছাড়ে না। তারা মালিকের প্রতি অনুগত থাকে। এমন একটি প্রাণীকে সম্মান জানাতেই প্রতিবছর ৮ মে পালিত হয় বিশ্ব গাধা দিবস।

২০১৮ সালের ৮ মে প্রথমবারের মতো পালিত হয় বিশ্ব গাধা দিবস। এই দিবসের সূচনা করেন প্রাণীবিজ্ঞানী আর্ক রাজিক। তিনি মরুভূমিতে বসবাসকারী প্রাণীদের নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে দেখেন, গাধারা মানুষের জন্য মূল্যবান কাজ করলেও যথাযথ সম্মান বা স্বীকৃতি পায় না। গাধাদের সম্মান জানাতে ও তাদের পরিশ্রমের মূল্যায়নে একটি ফেসবুক পেজ চালু করেছিলেন তিনি। সেই পেজে তিনি এই প্রাণীটির বিভিন্ন প্রজাতির কথা লিখতেন। অবশেষে ২০১৮ সালে বিশ্ব গাধা দিবস উদযাপনের ধারণা আসে এবং তখন থেকে দিবসটি উদযাপন হয়ে আসছে।

 

বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এখনও বিভিন্ন ধরণের গাধা বন্য অবস্থায় বাস করে, যার মধ্যে রয়েছে: ভারত ও নেপালে ‘কিয়াং’, আফ্রিকায় ‘সোমালি’ বন্য গাধা, মঙ্গোলিয়া, তুর্কিস্তান, ইরান এবং সিরিয়ায় বিপন্ন ‘ওনাগার’। বেশিরভাগ বন্য গাধা ১০২ সেমি থেকে ১৪২ সেমি পর্যন্ত লম্বা হয়।

বন্য অঞ্চলে, গাধা ঘোড়াদের মতো এত ঘনিষ্ঠ পালে বাস করে না, কারণ তারা প্রান্তিক মরুভূমিতে বাস করে যেখানে সাধারণত খাবারের অভাব থাকে। এজন্য গাধাকে সঙ্গী জুটাতে হয় কণ্ঠস্বর দিয়ে। গাধার ডাক তিন কিলোমিটারেরও বেশি দূর থেকে শুনতে পায় অন্য গাধা। এর ফলে তারা একে অপরের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারে। তাদের বড় কান তাদের প্রতিবেশীদের দূরবর্তী ডাক শুনতে সাহায্য করে। গাধা তাদের কানের নড়াচড়ার মাধ্যমে অন্য গাধার সঙ্গে যোগাযোগ করে, এছাড়া এই অঙ্গটি তাদের মরুভূমির উত্তাপের তীব্রতা কিছুটা কমাতে সাহায্য করে।গাধার হজম ব্যবস্থা খুবই ভাল, যা প্রায় অখাদ্য গাছপালা ভেঙে ফেলতে পারে এবং একই সাথে যতটা সম্ভব আর্দ্রতা আহরণ করে সংরক্ষণ করতে পারে।

 

আধুনিক গাধার দুটি পূর্বপুরুষ আছে। উভয়ই আফ্রিকান বন্য গাধার উপ-প্রজাতি এবং এগুলো হলো সোমালি বন্য গাধা ও নুবিয়ান বন্য গাধা। তারা মাইলের পর মাইল কার্গো টানতে সক্ষম। অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় বেশি সময় পরিশ্রম করতে পারে। তাদের চলার গতি ঘণ্টায় ৩১ মাইল পর্যন্ত হতে পারে। বন্য গাধার গড় আয়ু ৫০ থেকে ৫৪ বছরের মধ্যে হয়। তবে দরিদ্র দেশে কাজে লাগানো গাধা ১২-১৫ বছর বাঁচে।

চীনে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক গাধা আছে। সেখানে গাধার চামড়ায় থাকা একটি আঠালো পদার্থ ব্যবহৃত হয় ওষুধ তৈরিতে, যা হাঁপানি ও অনিদ্রার মতো রোগের চিকিৎসায় উপকারী। তবে ওষুধ শিল্পে অতিরিক্ত চাহিদার কারণে চীনে গাধার সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে।

 

হাজার বছর ধরে গাধা চাষাবাদ, পণ্য পরিবহন ও যাতায়াতে মানুষের সহকারী হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এখনো দরিদ্র কৃষক ও শ্রমজীবীদের জীবিকা নির্বাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

তবে প্রায়ই এই প্রাণীদের প্রতি অবহেলা ও নিষ্ঠুর ব্যবহার করা হয়। একটি আলাদা দিবস পালনের মাধ্যমে এই অবহেলিত প্রাণীদের প্রতি সদয় আচরণ এবং সঠিক যত্নের গুরুত্ব তুলে ধরা সম্ভব।

 

গাধা গ্রামীণ অঞ্চলের জন্য একটি পরিবেশবান্ধব ও টেকসই বাহন হিসেবেও পরিচিত। দিবসটি শুধু গাধার গুরুত্ব তুলে ধরেই থেমে থাকে না, বরং এটি শিশু ও সাধারণ মানুষকে সকল প্রাণীর প্রতি সহানুভূতি, যত্ন এবং পরিবেশ রক্ষার শিক্ষা দিতেও সহায়ক।

 

এই অপ্রচলিত হলেও তাৎপর্যপূর্ণ দিবসটি মানুষের আগ্রহ জাগিয়ে তুলতে পারে এবং “প্রতিটি প্রাণীই মূল্যবান”—এই বার্তা ছড়িয়ে দিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

আপলোডকারীর তথ্য

Shuvo

ইকোসিস্টেমকে রক্ষা করে প্রাকৃতিক সম্পদকে সুরক্ষার বার্তা দিলেন পরিবেশ সচিব

গাধা দিবস! হাসি-তামাশা না করে, জেনে নেয়া যাক সভ্যতার সঙ্গীকে  

আপডেট সময় ০৩:৪৪:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ মে ২০২৫

‘গাধা’ শব্দটি প্রায়ই ব্যবহার হয় তিরস্কারসূচক শব্দ হিসেবে। কেউ একটু বোকামি করলেই তাকে গাধার সঙ্গে তুলনা করতে ছাড়েন না অন্যরা। কোনো বোকামি বা তথাকথিত চালাকদের চেয়ে সরল হলেই ‘গাধা’ কোথাকার, ‘গাধা একটা’ এসব শুনেছেন অনেকেই। মানুষ গাধাকে যেভাবে বোকা ভাবে গাধা কি আসলেই সেরকম বোকা? সেটা নয়, কারণ, প্রাণীটি শত শত বছর ধরে মরুভূমির মতো প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে এখনো পৃথিবীতে টিকে আছে। চরম দুর্গম, রুক্ষ এলাকায় আজও তারা চড়ে বেড়ায়। যাযাবর কিংবা নগরসভ্যতায় মানুষ তাদের দিয়ে পণ্য বহনের কাজ করিয়ে নিচ্ছে, গাধা কিন্তু সেই কাজ ঠিকঠাক করে যাচ্ছে। স্পষ্টতই গাধা একটি পরিশ্রমী প্রাণী। অথচ মানুষ সেই গাধাকে নিষ্ক্রিয় ভাবে, বোকা ভাবে! বরং গাধা এমন একটি প্রাণী যারা সারাদিনের কঠোর পরিশ্রমকে ভয় পায় না। গাধারা গাড়ি টানে, গম ভাঙানো, তেল বের করার সনাতনী কলে কাজ করে  ও মাইলের পর মাইল পথ হেঁটে মালামাল বহন করে। এমনকি অন্য প্রাণী হাল ছেড়ে দিলেও গাধা হাল ছাড়ে না। তারা মালিকের প্রতি অনুগত থাকে। এমন একটি প্রাণীকে সম্মান জানাতেই প্রতিবছর ৮ মে পালিত হয় বিশ্ব গাধা দিবস।

২০১৮ সালের ৮ মে প্রথমবারের মতো পালিত হয় বিশ্ব গাধা দিবস। এই দিবসের সূচনা করেন প্রাণীবিজ্ঞানী আর্ক রাজিক। তিনি মরুভূমিতে বসবাসকারী প্রাণীদের নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে দেখেন, গাধারা মানুষের জন্য মূল্যবান কাজ করলেও যথাযথ সম্মান বা স্বীকৃতি পায় না। গাধাদের সম্মান জানাতে ও তাদের পরিশ্রমের মূল্যায়নে একটি ফেসবুক পেজ চালু করেছিলেন তিনি। সেই পেজে তিনি এই প্রাণীটির বিভিন্ন প্রজাতির কথা লিখতেন। অবশেষে ২০১৮ সালে বিশ্ব গাধা দিবস উদযাপনের ধারণা আসে এবং তখন থেকে দিবসটি উদযাপন হয়ে আসছে।

 

বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এখনও বিভিন্ন ধরণের গাধা বন্য অবস্থায় বাস করে, যার মধ্যে রয়েছে: ভারত ও নেপালে ‘কিয়াং’, আফ্রিকায় ‘সোমালি’ বন্য গাধা, মঙ্গোলিয়া, তুর্কিস্তান, ইরান এবং সিরিয়ায় বিপন্ন ‘ওনাগার’। বেশিরভাগ বন্য গাধা ১০২ সেমি থেকে ১৪২ সেমি পর্যন্ত লম্বা হয়।

বন্য অঞ্চলে, গাধা ঘোড়াদের মতো এত ঘনিষ্ঠ পালে বাস করে না, কারণ তারা প্রান্তিক মরুভূমিতে বাস করে যেখানে সাধারণত খাবারের অভাব থাকে। এজন্য গাধাকে সঙ্গী জুটাতে হয় কণ্ঠস্বর দিয়ে। গাধার ডাক তিন কিলোমিটারেরও বেশি দূর থেকে শুনতে পায় অন্য গাধা। এর ফলে তারা একে অপরের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারে। তাদের বড় কান তাদের প্রতিবেশীদের দূরবর্তী ডাক শুনতে সাহায্য করে। গাধা তাদের কানের নড়াচড়ার মাধ্যমে অন্য গাধার সঙ্গে যোগাযোগ করে, এছাড়া এই অঙ্গটি তাদের মরুভূমির উত্তাপের তীব্রতা কিছুটা কমাতে সাহায্য করে।গাধার হজম ব্যবস্থা খুবই ভাল, যা প্রায় অখাদ্য গাছপালা ভেঙে ফেলতে পারে এবং একই সাথে যতটা সম্ভব আর্দ্রতা আহরণ করে সংরক্ষণ করতে পারে।

 

আধুনিক গাধার দুটি পূর্বপুরুষ আছে। উভয়ই আফ্রিকান বন্য গাধার উপ-প্রজাতি এবং এগুলো হলো সোমালি বন্য গাধা ও নুবিয়ান বন্য গাধা। তারা মাইলের পর মাইল কার্গো টানতে সক্ষম। অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় বেশি সময় পরিশ্রম করতে পারে। তাদের চলার গতি ঘণ্টায় ৩১ মাইল পর্যন্ত হতে পারে। বন্য গাধার গড় আয়ু ৫০ থেকে ৫৪ বছরের মধ্যে হয়। তবে দরিদ্র দেশে কাজে লাগানো গাধা ১২-১৫ বছর বাঁচে।

চীনে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক গাধা আছে। সেখানে গাধার চামড়ায় থাকা একটি আঠালো পদার্থ ব্যবহৃত হয় ওষুধ তৈরিতে, যা হাঁপানি ও অনিদ্রার মতো রোগের চিকিৎসায় উপকারী। তবে ওষুধ শিল্পে অতিরিক্ত চাহিদার কারণে চীনে গাধার সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে।

 

হাজার বছর ধরে গাধা চাষাবাদ, পণ্য পরিবহন ও যাতায়াতে মানুষের সহকারী হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এখনো দরিদ্র কৃষক ও শ্রমজীবীদের জীবিকা নির্বাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

তবে প্রায়ই এই প্রাণীদের প্রতি অবহেলা ও নিষ্ঠুর ব্যবহার করা হয়। একটি আলাদা দিবস পালনের মাধ্যমে এই অবহেলিত প্রাণীদের প্রতি সদয় আচরণ এবং সঠিক যত্নের গুরুত্ব তুলে ধরা সম্ভব।

 

গাধা গ্রামীণ অঞ্চলের জন্য একটি পরিবেশবান্ধব ও টেকসই বাহন হিসেবেও পরিচিত। দিবসটি শুধু গাধার গুরুত্ব তুলে ধরেই থেমে থাকে না, বরং এটি শিশু ও সাধারণ মানুষকে সকল প্রাণীর প্রতি সহানুভূতি, যত্ন এবং পরিবেশ রক্ষার শিক্ষা দিতেও সহায়ক।

 

এই অপ্রচলিত হলেও তাৎপর্যপূর্ণ দিবসটি মানুষের আগ্রহ জাগিয়ে তুলতে পারে এবং “প্রতিটি প্রাণীই মূল্যবান”—এই বার্তা ছড়িয়ে দিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।