টেকসই চামড়া শিল্প গড়ে তোলার লক্ষ্যে পরিবেশগত প্রভাব ও অধিকার শীর্ষক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারী) রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে চ্যানেল আই ভবনে, আই স্ক্রিন ষ্টুডিও তে ‘এডভোকেসি ডায়লগ অন এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট এন্ড রাইটস অফ লেদার সেক্টর ইন বাংলাদেশ ’ শিরোনামে এই সভার আয়োজন করা হয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সলিডার সুইসের তত্ত্বাবধানে ওশি ফাউন্ডেশনের পরিচালনায়, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে “বিল্ডিং এ সাসটেইনেবল লেদার সেক্টর ইন বাংলাদেশ” প্রকল্পের আওতায় আয়োজিত এই সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রম সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ।
চামড়া শিল্পের উন্নয়নে বাধা দূরীকরণ, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা, এবং এই শিল্পের টেকসই উন্নয়নের জন্য করণীয় নিয়ে সংলাপে আলোচনা হয়।
সংলাপে বক্তারা উল্লেখ করেন, টেকসই চামড়া শিল্প গড়ে তোলার জন্য পরিবেশগত ক্ষতির কারণগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করা প্রয়োজন। শ্রমিকদের সুরক্ষা, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার এবং তৃণমূল পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই শিল্পকে আরও টেকসই করা সম্ভব।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. আইনুন নিশাত বলেন, চামড়া শিল্প দেশের দ্বিতীয় প্রধান রপ্তানি খাত প্রধান রপ্তানি খাত পোশাক শিল্প থেকে অনেক অনেক চামড়া শিল্প পিছনে। প্রকৃতপক্ষে পোশাক শিল্পের কাছাকাছি পৌঁছানোর সম্ভাবনা চামড়া শিল্পের রয়েছে। প্রচুর কাঁচামাল রয়েছে আমাদের, চামড়া শিল্প প্রচুর সম্ভাবনাময় শিল্প খাত।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিবেশ ছাড়পত্র) মাসুদ ইকবাল মোঃ শামীম বলেন, চামড়া শিল্প আমাদের দেশের অনেক পুরাতন শিল্প। আমাদের দেশে এখনো চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ সনাতন পদ্ধতিতেই করা হয় । যাতে প্রচুর পানি ব্যবহার করা হয় এবং কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়, যা শুধু পানি না আমাদের বায়ুকেও দূষিত করে।
আমাদের শ্রমিকরা যেখানে কাজ করে সেখানকার পরিবেশটা যদি ভালো না থাকে তাহলে শ্রমিকরা অসুস্থ হয়ে যেতে পারে, এমনকি মারাও যেতে পারে। তিনি আর বলেন, বুড়িগঙ্গি নদীকে দূষণের হাত থেকে বাঁচাতে চামড়া শিল্পকে রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে স্থানান্তর করে সাভারে আনা হয়েছিল কিন্তু এখন দুষিত হচ্ছে ধলেশ্বরী নদী এবং এর আশেপাশের নদীগুলো। পরিবেশ অধিদপ্তর নদীগুলোকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করতে কাজ করছে।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের মহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা এবং গবেষণা) বলেন, আমাদের চামড়াকে আফ্রিকা মহাদেশেও নিয়ে যেতে পারি কিন্তু আমরা ইউরোপ ও আমেরিকা নিয়ে পরে আছি । চামড়া শিল্পের মালিকপক্ষের অসহযোগিতার কারনে বিসিক সঠিক ভাবে কাজ করতে পারছে না । বকেয়া বিল প্রদানে মালিকপক্ষে খুবই উদাসীন । তারপরও বিসিক কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার রক্ষণাবেক্ষণের মাধমে দূষণের মাত্রা কমিয়ে আনতে কাজ করছে।
সমাপনী বক্তব্যে সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান প্রকৃতিবন্ধু মুকিত মজুমদার বাবু বলেন, পরিবেশ রক্ষায় গাছের গুরুত্ব অপরিসীম। ট্যানারির কারখানাগুলোর আশেপাশে গাছ লাগানো যায়। গাছ এমন একটি উপাদান যেটা সব জায়গায় লাগানো সম্ভব। গাছের থেকে আমরা যে উপকার পাই, সেটা তো আমরা মোটামুটি সবাই জানি, গাছ আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেন দিচ্ছে, কার্বন ডাই অক্সাইড শুষে নিচ্ছে, মাটিকে ধরে রাখছে এবং নানা ধরণের পলিউশন শুষে নিচ্ছে। সব কিছু মিলিয়ে গাছের উপকারিতার শেষ নেই, তার সাথে ফল ফুল এবং অন্যান্য বিষয় তো আছেই।
মুকিত মজুমদার বাবু, আজকের এই সংলাপে ৫০টার মতো পয়েন্ট উঠে এসেছে যা চামড়া শিল্পের সমস্যাকে সমাধান করে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে।
প্রকৃতিবন্ধু বলেন, নানা রকমের সমস্যার কারণে চামড়া শিল্প এগিয়ে যাওয়ার বদলে পিছিয়ে যাচ্ছে ।আমরা সবাই মিলে হাতে হাত মিলালেই কিন্তু আমাদের পক্ষে এই ধরণের সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব এবং যেটা আমাদের জন্য দরকার, আমাদের দেশের জন্য দরকার, আমাদের এই ইন্ডাস্ট্রিগুলোকে বাঁচানোর জন্য দরকার । আর সে কাজটি করতে হলে আমাদের এক হতে হবে, এক সাথে এগিয়ে আসতে হবে, এক সাথে কাজ করতে হবে।
সলিডার সুইসের হেড অফ প্রোগ্রাম এস এম কামরুল আহসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের প্রকাশনা ও জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহীন মাহফুজ।
অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের হেড অফ ইভেন্ট খন্দকার আহমেদ শাহেদ, প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর খায়রুল আনাম এবং ক্রিয়েটিভ রাইটার শারমিন বন্যা।
সংলাপে সরকারি পর্যায়ের প্রতিনিধি, শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি, বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক এবং প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।