সংবাদ শিরোনাম ::
Logo প্রকৃতির প্রতিশোধ: সংকটে জীববৈচিত্র্য Logo লঘুচাপ, ঘূর্ণিঝড়ের গুঞ্জন! কেমন যেতে পারে মাসের শেষ দিনগুলো, যা বলছে আবহাওয়ার পূর্বাভাস Logo প্রশাসনিক সমন্বয় ও সংস্কার ছাড়া পরিবেশ সংরক্ষণ সম্ভব নয় : পরিবেশ উপদেষ্টা Logo বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগে নারী কোটা বাতিল Logo প্রকৃতির সঙ্গে সুর মিলিয়ে চলার বার্তা নিয়ে এবছরের আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস Logo জাতীয় নির্বাচন, ‘মানবিক করিডোর’, মব সহিংসতা নিয়ে যা বললেন সেনাপ্রধান Logo রিট খারিজ, মেয়র হিসেবে ইশরাককে শপথ পড়ানোর বাধা নেই Logo প্রাক বর্ষায় রাজধানীসহ নানাস্থানে মাঝারি-ভারী বৃষ্টি Logo শিল্পে বিনামূল্যে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন বন্ধে নীতিমালা চূড়ান্ত হচ্ছে : রিজওয়ানা হাসান Logo শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন শপথবাক্য পাঠ করানোর নির্দেশ

চীনের ‘ক্লিন এনার্জি’ বোমা! ধ্বংসাত্মক অস্ত্রের পরিবেশবান্ধব তকমা, সত্যি নাকি রসিকতা?   

চীনের 'ক্লিন এনার্জি' বোমা! ধ্বংসাত্মক অস্ত্রের পরিবেশবান্ধব তকমা, সত্যি নাকি রসিকতা?   

তাইওয়ান ও যুক্তরাষ্ট্রকে ঘিরে উত্তেজনার মধ্যে চীন হাইড্রোজেনভিত্তিক নতুন এক বোমার সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। ভয়ঙ্কর শক্তিশালী এই বোমাকে ‘ক্লিন এনার্জি’ বোমার তকমা দিয়েছে চীন। তাদের ভাষ্য এই বোমা পারমাণবিক নয়। এটি মূলত ম্যাগনেশিয়াম হাইড্রাইড নামক একটি পদার্থ দিয়ে তৈরি।

 

সম্প্রতি চালানো এই হাইড্রোজেন বোমার পরীক্ষা পরিচালনা করেছে চীনের সামরিক বাহিনী পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) এবং এটি তৈরির পেছনে কাজ করেছে চীনা রাষ্ট্রীয় সংস্থা চায়না স্টেট শিপবিল্ডিং কর্পোরেশনের ৭০৫ নম্বর গবেষণা ইনস্টিটিউট।

এটি অত্যন্ত উচ্চ তাপমাত্রার (১০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি) আগুনের গোলা তৈরি করতে পারে যা দুই সেকেন্ড ধরে জ্বলতে থাকে।

 

প্রথাগত পরমাণু অস্ত্রের সঙ্গে বেশ ফারাক রয়েছে হাই়ড্রোজেন বোমার।  চিনে প্রতিরক্ষা গবেষকেরা পরীক্ষার জন্য ব্যবহৃত বোমায় কঠিন অবস্থার ম্যাগনেশিয়ামভিত্তিক হাইড্রোজেন ব্যবহার করেছেন, যার বৈজ্ঞানিক নাম ম্যাগনেশিয়াম হাইড্রাইড। চাপযুক্ত ট্যাংকের চেয়ে এই মাধ্যমে বেশি পরিমাণে হাইড্রোজেন সংরক্ষণ করতে সক্ষম হন তারা। এতে ব্যবহার করা হয় মাত্র দুই কিলোগ্রাম বিস্ফোরক।

চীনের একটি হাইড্রোজেন বোমার নমুনা

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পরীক্ষার সময়ে হাইড্রোজেন বোমাটি সাদা রঙের অগ্নিগোলক তৈরি করে। এর স্থায়িত্ব ছিল দু’সেকেন্ডের বেশি। এই অল্প সময়ের মধ্যে টিএনটি (ট্রাইনাইট্রোটলুইন) বিস্ফোরণের তুলনায় বোমাটি থেকে ১৫ গুণ বেশি শক্তি নির্গত হয়েছে।

 

বোমাটি একবার বিস্ফোরিত হলে এটি নিজেই একটি চক্রাকারে হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন করে আগুন বাড়াতে থাকে। এর ফলে বিস্ফোরণের মাত্রা ও প্রভাব একাধিক ধাপে বাড়ে। চীনের গবেষকরা বলছেন, এই বোমার আগুনের তীব্রতা এতটাই বেশি, যা অ্যালুমিনিয়ামের মতো ধাতুও গলিয়ে ফেলতে পারে। ফলে  বিশাল এলাকা জুড়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর ক্ষমতা রয়েছে এটির।

 

ম্যাগনেশিয়াম হাইড্রাইড অতি তাপমাত্রায় জ্বলতে থাকার কারণে খোলা জায়গায় ছড়িয়ে থাকা সেনাদের দমন, রাস্তাঘাট বা সেতু ধ্বংস, কিংবা একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে ‘সার্জিক্যাল’ হামলার জন্য কার্যকর হতে পারে অ-পারমাণবিক এই বোমা।

 

ধ্বংসাত্মক আবার নাকি পরিবেশবান্ধব!

 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন ক্লিন এনার্জি ব্যবহার করে সামরিক শক্তিকে আধুনিকায়ন করার চেষ্টা করেছে। এবার হাইড্রোজেনভিত্তিক বিস্ফোরক তৈরি করার মাধ্যমে চীন প্রমাণ করলো প্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক যুগে পরিবেশবান্ধব শক্তি ব্যবহার করা সম্ভব।

আর এ বিষয়টি মাথায় রেখে এমন বোমা তৈরির দিকে আরও অগ্রসর হচ্ছে বেইজিং। এরই ধারাবাহিকতায় দেশটির সেনাবাহিনীর জন্য ম্যাগনেশিয়াম হাইড্রাইডের বাণিজ্যিক উৎপাদনও শুরু হয়েছে। এই পদার্থ প্রতি বছর এখন ১৫০ টন পর্যন্ত উৎপাদন করা সম্ভব বলে দাবি করেছে চীন। এর আগে কেবল ল্যাবেই তৈরি হতো ম্যাগনেশিয়াম হাইড্রাইড।

 

যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পাওয়া তাইওয়ানকে ঘিরে ভবিষ্যৎ সংঘাতের আশঙ্কা থেকেই সমরাস্ত্র বাড়ানোর দিকে আরও বেশি ঝুঁকছে চীন। মূলত পরমাণু অস্ত্র ছাড়া কৌশলগত অবস্থান তৈরির অংশ হিসেবে এমন পরিকল্পনায় এগোচ্ছে চীন। তাছাড়া এ ধরনের বোমা তৈরি ও পরীক্ষায় আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া সীমিত থাকে।

 

এই মাসেই চীন তাইওয়ান উপকূলে বড় পরিসরের যুদ্ধ মহড়া ও লাইভ ফায়ার ড্রিল চালিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এটিকে ‘ভয় দেখানো কৌশল’ হিসেবে অভিহিত করে বলেছে, তারা তাইওয়ানের পাশে থাকবে। এই উত্তেজনার মধ্যেই চীন স্পষ্ট করে দিয়েছে— তারা শুধু পরমাণু নয়, যুদ্ধের আরও উন্নত বিকল্প কৌশলের প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে।

আপলোডকারীর তথ্য

Shuvo

প্রকৃতির প্রতিশোধ: সংকটে জীববৈচিত্র্য

চীনের ‘ক্লিন এনার্জি’ বোমা! ধ্বংসাত্মক অস্ত্রের পরিবেশবান্ধব তকমা, সত্যি নাকি রসিকতা?   

আপডেট সময় ০৬:৪০:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫

তাইওয়ান ও যুক্তরাষ্ট্রকে ঘিরে উত্তেজনার মধ্যে চীন হাইড্রোজেনভিত্তিক নতুন এক বোমার সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। ভয়ঙ্কর শক্তিশালী এই বোমাকে ‘ক্লিন এনার্জি’ বোমার তকমা দিয়েছে চীন। তাদের ভাষ্য এই বোমা পারমাণবিক নয়। এটি মূলত ম্যাগনেশিয়াম হাইড্রাইড নামক একটি পদার্থ দিয়ে তৈরি।

 

সম্প্রতি চালানো এই হাইড্রোজেন বোমার পরীক্ষা পরিচালনা করেছে চীনের সামরিক বাহিনী পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) এবং এটি তৈরির পেছনে কাজ করেছে চীনা রাষ্ট্রীয় সংস্থা চায়না স্টেট শিপবিল্ডিং কর্পোরেশনের ৭০৫ নম্বর গবেষণা ইনস্টিটিউট।

এটি অত্যন্ত উচ্চ তাপমাত্রার (১০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি) আগুনের গোলা তৈরি করতে পারে যা দুই সেকেন্ড ধরে জ্বলতে থাকে।

 

প্রথাগত পরমাণু অস্ত্রের সঙ্গে বেশ ফারাক রয়েছে হাই়ড্রোজেন বোমার।  চিনে প্রতিরক্ষা গবেষকেরা পরীক্ষার জন্য ব্যবহৃত বোমায় কঠিন অবস্থার ম্যাগনেশিয়ামভিত্তিক হাইড্রোজেন ব্যবহার করেছেন, যার বৈজ্ঞানিক নাম ম্যাগনেশিয়াম হাইড্রাইড। চাপযুক্ত ট্যাংকের চেয়ে এই মাধ্যমে বেশি পরিমাণে হাইড্রোজেন সংরক্ষণ করতে সক্ষম হন তারা। এতে ব্যবহার করা হয় মাত্র দুই কিলোগ্রাম বিস্ফোরক।

চীনের একটি হাইড্রোজেন বোমার নমুনা

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পরীক্ষার সময়ে হাইড্রোজেন বোমাটি সাদা রঙের অগ্নিগোলক তৈরি করে। এর স্থায়িত্ব ছিল দু’সেকেন্ডের বেশি। এই অল্প সময়ের মধ্যে টিএনটি (ট্রাইনাইট্রোটলুইন) বিস্ফোরণের তুলনায় বোমাটি থেকে ১৫ গুণ বেশি শক্তি নির্গত হয়েছে।

 

বোমাটি একবার বিস্ফোরিত হলে এটি নিজেই একটি চক্রাকারে হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন করে আগুন বাড়াতে থাকে। এর ফলে বিস্ফোরণের মাত্রা ও প্রভাব একাধিক ধাপে বাড়ে। চীনের গবেষকরা বলছেন, এই বোমার আগুনের তীব্রতা এতটাই বেশি, যা অ্যালুমিনিয়ামের মতো ধাতুও গলিয়ে ফেলতে পারে। ফলে  বিশাল এলাকা জুড়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর ক্ষমতা রয়েছে এটির।

 

ম্যাগনেশিয়াম হাইড্রাইড অতি তাপমাত্রায় জ্বলতে থাকার কারণে খোলা জায়গায় ছড়িয়ে থাকা সেনাদের দমন, রাস্তাঘাট বা সেতু ধ্বংস, কিংবা একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে ‘সার্জিক্যাল’ হামলার জন্য কার্যকর হতে পারে অ-পারমাণবিক এই বোমা।

 

ধ্বংসাত্মক আবার নাকি পরিবেশবান্ধব!

 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন ক্লিন এনার্জি ব্যবহার করে সামরিক শক্তিকে আধুনিকায়ন করার চেষ্টা করেছে। এবার হাইড্রোজেনভিত্তিক বিস্ফোরক তৈরি করার মাধ্যমে চীন প্রমাণ করলো প্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক যুগে পরিবেশবান্ধব শক্তি ব্যবহার করা সম্ভব।

আর এ বিষয়টি মাথায় রেখে এমন বোমা তৈরির দিকে আরও অগ্রসর হচ্ছে বেইজিং। এরই ধারাবাহিকতায় দেশটির সেনাবাহিনীর জন্য ম্যাগনেশিয়াম হাইড্রাইডের বাণিজ্যিক উৎপাদনও শুরু হয়েছে। এই পদার্থ প্রতি বছর এখন ১৫০ টন পর্যন্ত উৎপাদন করা সম্ভব বলে দাবি করেছে চীন। এর আগে কেবল ল্যাবেই তৈরি হতো ম্যাগনেশিয়াম হাইড্রাইড।

 

যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পাওয়া তাইওয়ানকে ঘিরে ভবিষ্যৎ সংঘাতের আশঙ্কা থেকেই সমরাস্ত্র বাড়ানোর দিকে আরও বেশি ঝুঁকছে চীন। মূলত পরমাণু অস্ত্র ছাড়া কৌশলগত অবস্থান তৈরির অংশ হিসেবে এমন পরিকল্পনায় এগোচ্ছে চীন। তাছাড়া এ ধরনের বোমা তৈরি ও পরীক্ষায় আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া সীমিত থাকে।

 

এই মাসেই চীন তাইওয়ান উপকূলে বড় পরিসরের যুদ্ধ মহড়া ও লাইভ ফায়ার ড্রিল চালিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এটিকে ‘ভয় দেখানো কৌশল’ হিসেবে অভিহিত করে বলেছে, তারা তাইওয়ানের পাশে থাকবে। এই উত্তেজনার মধ্যেই চীন স্পষ্ট করে দিয়েছে— তারা শুধু পরমাণু নয়, যুদ্ধের আরও উন্নত বিকল্প কৌশলের প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে।