থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে দেশটির সাংবিধানিক আদালত। মঙ্গলবার (১ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগে ৩৬ জন সিনেটরের একটি দল পেতাংতার্নের বিরুদ্ধে নৈতিক মানদণ্ড লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলে। থাইল্যান্ডের সাংবিধানিক আদালতে অভিযোগটি গ্রহণ করা হয়। এবিষয়ে চূড়ান্ত রায়ের আগ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পেতাংতার্নের দায়িত্ব স্থগিত থাকবে বলে জানানো হয় সাংবিধানিক আদালতের পক্ষ থেকে।
শক্তিশালী সেনাবাহিনীর কবলে থাকা থাইল্যান্ডে সিনাওয়াত্রা পরিবার দেশটির রাজনীতিতে বিকল্প শক্তি। সেনাবাহিনীর প্রবল বাঁধা পেরিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা।
কিন্তু সম্প্রতি তাকে বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে একটি ফোনকল ফাঁসের ঘটনা। ক্যাম্বোডিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের সঙ্গে ফোনে কথোপকথনের একটি অডিও ফাঁসকে কেন্দ্র করে ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে আদালতের পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্তে এলো।
ফাঁস হওয়া ওই ফোন কলকে ঘিরে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করার পর্বতসম চাপে ছিলেন তিনি। ফোনে সীমান্ত বিরোধ নিয়ে হুন সেনের সঙ্গে পেতংতার্নের কথা হয়েছিল। ফোনালাপের সময় পারিবারিকভাবে পরিচিত হুন সেনকে ‘আঙ্কেল’ সম্বোধন করে তাকে ‘সহযোগিতা’ করার আশ্বাস দিয়েছিলেন থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী।
এছাড়া ক্যাম্বোডিয়ার সঙ্গে সীমান্ত বিরোধ প্রসঙ্গে নিজ দেশের সামরিক বাহিনীর এক কমান্ডারের তীব্র সমালোচনাও করেছিলেন পেতংতার্ন। এই ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর ক্ষোভের সৃষ্টি হয় সেনাবাহিনী সমর্থকদের মাঝে। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে রাজধানী ব্যাংককে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন হাজার হাজার মানুষ।
পেতংতার্ন হলেন শক্তিশালী সিনাওয়াত্রা বংশের তৃতীয় ব্যক্তি, যারা গত দুই দশক ধরে থাই রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করেছে। সাংবিধানিক আদালত তাকে বরখাস্ত করার জন্য ৭-২ ভোটে ভোট দিয়েছে এবং তার বরখাস্তের মামলাটি বিবেচনা করছে। তবে, পেতংতার্নের আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য ১৫ দিন সময় রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী সাময়িক বরখাস্তের কারণে এখন উপ-প্রধানমন্ত্রী সুরিয়া জুংরুংরুয়াংকিট দেশের ভারপ্রাপ্ত নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
যদি তাকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয় তাহলে গত বছরের আগস্টের পর থেকে পেতংতার্ন হবেন ফিউ থাই পার্টির দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী যিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারিত হবেন। ৩৮ বছর বয়সী থাইল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ এই প্রধানমন্ত্রী তার খালা ইংলাক সিনাওয়াত্রার পর দেশটির দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
পেতংতার্নের বাবা থাকসিন সিনাওয়াত্রা, যিনি ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন। এরপর ‘দুর্নীতির’ দায়ে দায়েরকৃত মামলায় কারাগারে যাওয়া এড়াতে থাকসিনকে দেশও ছাড়তে হয়েছিল।