সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে ভ্রমণ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা ধরনের বিভ্রান্তিমূলক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। অনেকে মনে করছেন, হাওরে আর হাউসবোট যেতে পারবে না। এ বিষয়ে বিভ্রান্তি দূর করেছে জেলা প্রশাসন। তারা জানিয়েছে, টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকদের ভ্রমণে কোনো বাধা নেই। তবে এড়িয়ে চলতে হবে কিছু এলাকা।
এ বিষয়ে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক (রুটিন দায়িত্বরত) মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণে পর্যটকদের কোনো বাধা নেই। তবে ওয়াচ টাওয়ার ও আশপাশের এলাকায় হাউসবোট আপাতত যেতে পারবে না। এ ছাড়া পরিবেশের ক্ষতি হয়, এমন কোনো কাজ করা যাবে না। এ জন্য আমরা কঠোর নজরদারি রাখব।’
আজ সোমবার (২৩ জুন) এক সংবাদ সম্মেলনেও টাঙ্গুয়ার হাওর নিয়ে কথা বলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
পর্যটনের নামে টাঙ্গুয়ার হাওরে যা ঘটছে তার সমালোচনা করেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটা হেরিটেজ সাইটে হাউসবোটের নামে লাউডস্পিকার, এসি! আসলে এরকম একটি হাওরে কয়টা যান্ত্রিক জলযান চলবে তারও একটা নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে। আমাদের যিনি হাওর অধিদপ্তরের ডিজি আছেন উনি আগামীকাল যাচ্ছেন। কিভাবে হাওর পর্যটন নিয়ন্ত্রণ করা যায় সেবিষয়ে তিনি জেলা প্রশাসন ও হাউসবোট অপারেটরদের সাথে কথা বলবেন।’
জেলা প্রশাসনের যেসব নির্দেশনা মানতে হবে
সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে আসা পর্যটকদের জন্য ‘অবশ্যপালনীয়’ ১২টি নির্দেশনা জারি করেছে জেলা প্রশাসন।
সংকটাপন্ন এই হাওরের জীববৈচিত্র্য, প্রকৃতি, পরিবেশ ও সৌন্দর্য রক্ষায় পর্যটকদের সচেতন করতে আজ শনিবার এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়।
নির্দেশনাগুলো হলো:
হাওরে পর্যটকদের জন্য ব্যবহৃত নৌযানের প্রশাসন নির্ধারিত নৌপথ ব্যবহার; পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য লাইফজ্যাকেট ব্যবহার; স্থানীয় গাইড ও পরিষেবা গ্রহণ; প্লাস্টিক পণ্য বর্জন; দূর থেকে পাখি ও প্রাণী পর্যক্ষেণ করা; ক্যাম্পফায়ার বা আগুন জ্বালানো থেকে বিরত থাকা; হাওরে উচ্চ শব্দে গানবাজনা না করা বা শোনা; হাওরের পানিতে অজৈব বা প্লাস্টিক–জাতীয় পণ্য ও বর্জ্য না ফেলা; মাছ ধরা, শিকার বা পাখির ডিম সংগ্রহ না করা ও পাখিদের স্বাভাবিক জীবনযাপনে কোনো ধরনের বিঘ্ন না ঘটানো; ডিটারজেন্ট, শ্যাম্পু বা রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার না করা; গাছ কাটা, গাছের ডাল ভাঙা বা বনজ সম্পদ সংগ্রহ না করা; হাওরে সংরক্ষিত (কোর জোন) অংশে প্রবেশ না করা; মনুষ্যসৃষ্ট বর্জ্য হাওরে না ফেলা।
এ প্রসঙ্গে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস মিয়া বলেন, ‘টাঙ্গুয়ার হাওর দেশের সম্পদ। তাই হাওরে এমন কোনো কিছু করা যাবে না যাতে প্রকৃতি, পরিবেশ ও হাওরের জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হয়। এটি আমরা হতে দেব না। এ জন্য সবার সচেতনতা ও সহযোগিতা প্রয়োজন।’
উল্লেখ্য, সুনামগঞ্জ শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে জেলার তাহিরপুর ও মধ্যনগর উপজেলায় এই হাওরের অবস্থান। এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট। এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৬৫৫ হেক্টর। হাওরে ছোট–বড় ১০৯টি বিল আছে।