পাকিস্তানে টানা বৃষ্টি ও বন্যায় অন্তত ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।
পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। যেখানে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১০ জন শিশু। স্বাত উপত্যকায় হঠাৎ বন্যার পানির স্রোতে নদীর ধারে থাকা পরিবারগুলো ভেসে যাওয়ার ঘটনা স্থানীয় গণমাধ্যমে উঠে এসেছে।
ভারত সীমান্তসংলগ্ন পাঞ্জাবে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৮ জন শিশু বৃষ্টির সময় দেয়াল ও ছাদ ধসে পড়ে মারা গেছে। সিন্ধ ও বেলুচিস্তানে আরও অন্তত ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
দেশটির জাতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর সতর্ক করেছে, শনিবার পর্যন্ত ভারী বৃষ্টি ও হঠাৎ বন্যার ঝুঁকি রয়ে যাবে। গত মাসেও তীব্র ঝড়ে পাকিস্তানে ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় ক্রমবর্ধমান হারে চরম আবহাওয়ার ঘটনা বাড়ছে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলসহ নদী অববাহিকাগুলোতেও এমন অপ্রত্যাশিত বৃষ্টিপাত এবং হঠাৎ বন্যার ঝুঁকি রয়েছে, যা মোকাবেলায় পূর্বপ্রস্তুতি থাকা জরুরি।
পাকিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ আগামী ২৯ জুন থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত দেশজুড়ে ভারী বৃষ্টি, দমকা হাওয়া ও বজ্রঝড়ের সতর্কতা জারি করেছে। ইসলামাবাদ, কাশ্মীর, পাঞ্জাবের কিছু অংশ এবং খাইবার পাখতুনখোয়ার বিভিন্ন এলাকায় শহুরে বন্যা, হঠাৎ বন্যা এবং ভূমিধসের আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
দক্ষিণ সিন্ধের করাচি, হায়দ্রাবাদ, ঠাঠা ও বাদিনে ২ জুলাই থেকে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে, যা শহুরে বন্যার ঝুঁকি বাড়াবে।
এদিকে, ভারতের হিমাচলে ভারি বর্ষণের ফলে সৃষ্ট বন্যায় প্রাণহানি হয়েছে অন্তত ১৭ জনের। এছাড়াও বিভিন্ন রাজ্য থেকে উদ্ধার করা হয়েছে আরো ৭ জনের মৃতদেহ। বন্যায় ৩০০ কোটি টাকারও বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে রবিবার (২৯ জুন) সকাল পর্যন্ত অন্তত ৩৭টি রাস্তা এবং ৪৭টি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে, বিদ্যুৎ এবং পানি সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
বন্যা গবেষকরা বলছেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সমন্বিত দুর্যোগ প্রস্তুতি, তথ্য বিনিময় এবং জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো তৈরির জন্য এই ধরনের পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নেওয়া সময়ের দাবি। কারণ, পাকিস্তানের মতোই দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের নিম্নাঞ্চলগুলোও হঠাৎ বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে, যা মৌসুমি বৃষ্টিতে তীব্র আকার নিতে পারে।