ভারী বৃষ্টি এবং সীমান্ত নদীতে পাহাড়ি ঢলের কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে নদনদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। যদি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকে তবে শেরপুর, জামালপুর, নেত্রকোনা, সিলেট, সুনামগঞ্জে বন্যা দেখা দিতে পারে।
তিন দিনের ভারি বর্ষণ এবং ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরে আকস্মিক বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাহাড়ি নদী চেল্লাখালীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। এতে আতঙ্কে রয়েছে জেলার ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার নদীপাড়ের মানুষ। গত অক্টোবরের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া মহারশি ও ভোগাই নদীর বাঁধ মেরামতই এখনও শেষ হয়নি। এর মধ্যেই গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের ঘোলা পানিতে বন্যার আশঙ্কা আরও বেড়েছে।
সীমান্তঘেঁষা ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর বৃষ্টিতে আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এরইমধ্যে বৃষ্টির পানিতে নেতাই নদীর বাঁধ ভাঙার উপক্রম হয়েছে। বিভিন্ন নদ-নদীর পানিও বাড়তে শুরু করেছে। ফলে ময়মনসিংহে বন্যার আশঙ্কায় আতঙ্কে রয়েছেন নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দারা।
ভারি বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে সিলেটের একাধিক উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বাড়ছে নদ-নদীর পানি। ফলে সিলেটজুড়ে দেখা দিয়েছে আকস্মিক বন্যার শঙ্কা। প্রবল স্রোতে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন।
মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জের বেশকিছু নিচু এলাকা পানির নিচে চলে গেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জাফলং।
সোমবার সকাল থেকে ভারতের মেঘালয় থেকে নামা পাহাড়ি ঢল প্রবেশ করতে শুরু করে জাফলংয়ের পিয়াইন নদীতে। মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে নদীর পানি বিপজ্জনক হারে বাড়তে থাকে। ওইদিন সকালে জাফলংয়ের জিরো পয়েন্টসহ আশপাশের পর্যটন ও আবাসিক এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ে। ফলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সব ধরনের পর্যটন কার্যক্রম। প্রশাসনের নির্দেশে নিরাপত্তার স্বার্থে বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে, পিয়াইন নদীর প্রবল স্রোতে শুরু হয়েছে ভাঙন। নদী তীরবর্তী বসতি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো পড়েছে হুমকির মুখে। নদীর পানির গতি ও চাপ বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় অনেক কাঁচা ঘরবাড়ি ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভাঙনের খবর পাওয়া গেছে, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলাতেও।
কুড়িগ্রামেও গত তিন দিনের টানা ভারী বর্ষণ এবং উজানের ঢলে তিস্তা, জিঞ্জিরাম, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বেড়েছে। ইতোমধ্যে তিস্তার চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বাদাম, পাট, বোরো ধানসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ফসলি জমি ডুবে গেছে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও তিস্তাপারের পাঁচগাছি, গাবেরতল, দলদলিয়া, থেতরাই, বেগমগঞ্জ, মোল্লারহাট, সরিষাবাড়ী ও বিদ্যানন্দ এলাকায়।
ভারী বর্ষণে রংপুর নগরীর শ্যামাসুন্দরী খাল উপচে আশপাশের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। গত সোমবার রাতভর বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় নগরীর অন্তত ২০টি মহল্লা এক থেকে দেড় ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। জেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, জেলা সদর, গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলায় ৮৪ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষেত জলমগ্ন হয়েছে।