দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর হোয়াইট হাউসে প্রথমবারের মতো মন্ত্রিসভার পূর্ণাঙ্গ বৈঠক করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর এই বৈঠকে মন্ত্রীসভার কেউ না হয়েও প্রবল প্রতাপ দেখালেন, এমনকি নিজের প্রতি পুরো মন্ত্রীসভার গুরুত্ব টেনে নিলেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। এই বৈঠকে তাকে ন্যস্ত করা দায়িত্ব অর্থাৎ সরকারি ব্যয় কমানোর ওপর মাস্ক নিজে যেমন গুরুত্ব দিলেন তেমনি ট্রাম্পও তাকে আসলেই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে উপস্থাপন করলেন। একই সঙ্গে ইলন মাস্ককে নিয়ে অস্বস্তি, মানতে না পারার কানাঘুষাগুলোতেও ইতি টেনে দিলেন ট্রাম্প স্বয়ং।
ট্রাম্পের মন্ত্রীসভার প্রথম বৈঠকে ‘টেক সাপোর্ট’ লেখা এক কালো টি-শার্ট পরে গিয়েছিলেন ইলন মাস্ক। তবে মন্ত্রীদের টেবিলে না বসে টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেন তিনি। ‘প্রাণনাশের হুমকি পাচ্ছি অনেক, সমালোচনারও মুখোমুখি হচ্ছি। কিন্তু যা করছি, তা না করলে আমেরিকা দেউলিয়া হয়ে যাবে। তাই আমাদের এটা করতেই হবে,’ ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সির (ডিওজিই) কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রেসিডেন্ট ও মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যদের উদ্দেশ্যে এমনটাই বলেন মাস্ক।
মার্কিন মহাকাশ প্রযুক্তি কোম্পানি স্পেসএক্স ও বৈদ্যুতিক গাড়িনির্মাতা টেসলার প্রধান নির্বাহী মাস্ক এখন ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহচর। প্রেসিডেন্টের আদেশে তিনিই সরকারি ব্যয় ও অপচয় কমানোর উদ্দেশ্যে বানানো ডিওজিই’র কার্যক্রম দেখভাল করছেন।
ট্রাম্প ক্ষমতায় বসার পর থেকে এ পর্যন্ত মাস্কের এই ডিওজিই ফেডারেল সরকারের অনেক দপ্তর বন্ধ করে দিয়েছে, অনেক দপ্তরের বাজেট কমিয়েছে, ছাঁটাই করেছে হাজার হাজার কর্মীকে।
মাস্ক সম্প্রতি ফেডারেল কর্মীদেরকে লেখা এক ইমেইলে তাদের সাম্প্রতিক অর্জনের তালিকা লিখে পাঠাতে বলেছেন; নির্দেশ না মানলে চাকরিচ্যুতিরও হুমকি দিয়েছেন তিনি।
তার এই চিঠি প্রশাসনজুড়ে ব্যাপক বিভ্রান্তি ও উদ্বেগেরও জন্ম দেয়; পরে ট্রাম্প প্রশাসন জানায়, মাস্কের চিঠির উত্তর দেওয়াটা বাধ্যতামূলক নয়, ঐচ্ছিক।
এ নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই মাস্ক ট্রাম্পের মন্ত্রিসভা বৈঠকে হাজির হন। সরকারি ব্যয় কমানোর ব্যাপারে প্রত্যয়ী মাস্ক বলেন , ‘২ লাখ কোটি ডলার ঘাটতি বয়ে বেড়ানো আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। বর্তমানে জাতীয় ঋণের ওপর সুদ আমাদের প্রতিরক্ষা বিভাগের খরচ ছাড়িয়ে গেছে।’
মাস্কের ভূমিকা নিয়ে মন্ত্রিসভার কোনো সদস্যের অসন্তোষ আছে কিনা, এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের পর ট্রাম্প তার মন্ত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আছে কেউ ইলনের ওপর অসন্তুষ্ট? যদি থেকে থাকেন, তাহলে এখানেই বলে ফেলুন।”
প্রেসিডেন্ট যখন এমনটা বলছিলেন, তখন মন্ত্রিসভার অনেককে হাসতে ও করতালি দিতে দেখা যায়।
“কেউ কেউ একটু দ্বিমত পোষণ করে, কিন্তু আমি আপনাদের বলবো, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই, আমার মনে হয় সবাই কেবল খুশিই নয়, তারা রোমাঞ্চিতও,” বলেন রিপাবলিকান এ প্রেসিডেন্ট।
ট্রাম্প, তার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্স এবং মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে ঘণ্টাখানেকেরও বেশি সময় ধরে বৈঠক করেন, জবাব দেন উপস্থিত সাংবাদিকদের নানান ধরনের প্রশ্নের।
সেখানেই যুক্তরাষ্ট্রের এ প্রেসিডেন্ট জানান, খনিজ চুক্তি করতে ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি শুক্রবার হোয়াইট হাউজে আসছেন।