ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গি উপজেলার হরিণমারীর নয়াবাড়ী গ্রামে পাহাড় সমান আকার নিয়ে ২০০ বছরেরও পুরনো সূর্যপুরী আমগাছ। অক্টোপাসের মতো মাটিতে নেমে এসেছে এর ১৯টি মোটা ডাল। এই গাছ দিয়ে আসছে রসালো ও সুস্বাদু আম।
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গি উপজেলার নয়াবাড়ী গ্রামের ২০০ বছরের পুরনো সূর্যপুরী আমগাছ ইতিহাস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শুধু ঐতিহাসিকতার স্পর্শই নয়, এই জেলায় এটি একটি অতি প্রাচীন গাছ। গাছটির বয়স আনুমানিক ২০০ বছরেরও বেশি। তা-ও আবার বট কিংবা অশ্বত্থগাছ নয়, একেবারে জীবন্ত সূর্যপুরী আমগাছ। এইট অবস্থান ঠাকুরগাঁও থেকে বালিয়াডাঙ্গি উপজেলার দূরত্ব ২৫ কিলোমিটারের মতো। উপজেলা সদর থেকে একটু ভেতরে হরিণমারী ইউনিয়ন। একটি ছোট সেতু পেরোতেই হরিণমারীর পিচঢালা পথ। দুই দিকে সারি সারি কাঁঠালগাছ। পাখপাখালি খেলা করছে গাছের ডালগুলোতে। দূরে বেশ কয়েকটি ঘন সবুজ বাঁশঝাড়। এসব প্রাণ-জুড়ানো নানা দৃশ্য পেরিয়ে হরিণমারীর নয়াবাড়ী গ্রাম।
দূর থেকে মনে হচ্ছে উঁচু আমগাছের বাগান। কিন্তু কাছে যেতেই চোখ ছানাবড়া। বাগান কোথায়, পাহাড় সমান আকার নিয়ে একটি আমগাছই যেন আকাশ ছুঁতে চাচ্ছে। প্রায় দুই বিঘা জায়গাজুড়ে দাঁড়িয়ে থাকা ২০০ বছরের পুরনো আমগাছটি। অক্টোপাসের মতো মাটিতে নেমে এসেছে এর ১৯টি মোটা ডাল। স্থানীয়রা বলছে, গাছটির উচ্চতা আনুমানিক ৮০ ফুট আর ঘের ৩০ ফুটের মতো।
গাছের বৈশিষ্ট: সূর্যপুরী জাতের লতানো বিশাল আকৃতির আম গাছটি প্রায় দুই বিঘারও বেশি জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। দূর থেকে দেখলে সবুজ টিলার মত মনে হয়। আম গাছটির উচ্চতা ৭০ ফুট, এবং প্রশস্ত ১৯.৮ ফুট। পরিধি ৫১৫ ফুট। মোট ১৯ টি মোটা ডাল গাছটির প্রধান কান্ড থেকে বের হয়ে অক্টোপাসের মত মাটি আঁকড়ে ধরেছে, যা গাছটিকে এক বৈচিত্রময় বৈশিষ্ট্য দান করেছে। প্রত্যেক ডালগুলো প্রধান কান্ড থেকে দূরে গিয়ে মাটিতে নুয়ে পড়ে নতুন শিকড়ের জন্ম দিয়েছে, যা একেকটি স্বতন্ত্র বৃক্ষের মত মনে হয়। অক্টোপাসেরর মত বের হওয়া, মাটিতে শায়িত প্র্রত্যেক ডাল থেকে শিকড় বের হওয়া গাছটির আরও কয়েকশত বছর বেঁচে থাকার ইঙ্গিত বহন করে ।
ফলন: বছর ভেদে প্রায় ১০০-১২০ মণ আম ধরে। গাছের বয়স বেশি হলেও ফলনে তেমন কোন তারতম্য ঘটেনি।
আমের বৈশিষ্ট: আমটি ছোট,মাঝারি আকারের প্রতিটি আমের ওজন প্রায় ১৪০-১৬০ গ্রাম হয়ে থাকে| হালকা শাসঁযুক্ত হলেও আমটি খেতে বেশ সুস্বাদু, রসালো, সুগন্ধিযুক্ত পাতলা খোসা ও ছোট্ট আঁটি । এ সকল বৈশিষ্ট আমটিকে বিশেষ মযার্দা দান করেছে। এই আমের খাদ্যাংশ ৫৬ শতাংশ এবং মিষ্টিতা ১৭ শতাংশ। সাধারণত জুন মাসের শেষ হতে আম পাকা শুরু করে এবং জুলাই এর শেষ পযর্ন্ত আম পাওয়া যায়। অধিক জনপ্রিয়তার কারণে এই সূর্যপুরী আমকে ঘিরেই ঠাকুরগাঁও জেলার ব্রান্ডিংও করা হয়েছে। সুস্বাদু, সুগন্ধী, রসালো আর ছোট আটি জাতটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সেই সূর্যপুরী জাতের লতা বোম্বাই জাতীয় লতানো বিশাল আকৃতির আমগাছটি দাঁড়িয়ে আছে প্রায় দুই বিঘারও বেশী জায়গা জুড়ে। উচ্চতা আনুমানিক ৮০-৯০ ফুট। আর পরিধি ৩৫ ফুটের কম নয়। মুল গাছের ০৩ দিকে ১৯টি মোটা মোটা ডালপালা বেড় হয়ে অক্টোপাসের মত মাটি আঁকড়ে ধরেছে। বয়সের ভারে গাছের ডালপালা গুলো নুয়ে পড়লেও গাছটির শীর্ষভাগে সবুজের সমারোহ, সবুজ আমে টইটম্বুর। আমগুলোর ওজন ২০০ গ্রাম থেকে ২৫০ গ্রাম।
মজার বিষয় হলো, গাছটির ডালগুলো মাটিতে নুয়ে পড়লেও সেখান থেকে নতুন কোনো গাছ জন্মায়নি। নুয়ে পড়া ডালগুলো দেখলেই মনে হয়, গাছটি অতি প্রাচীন। ডালগুলো মৃত মনে হলেও গাছটির শীর্ষভাগ এখনো চিরসবুজ। এরই মধ্যে এবারও মুকুল এসেছে গাছজুড়ে। কালের সাক্ষী আমগাছটির বড় মলিন ডালগুলো এখনো আম দিচ্ছে।
আমগাছটির ছায়ায় বসলেই দেখা যায় এর অবয়ব। সবার মনে একই প্রশ্ন, কত জীবনীশক্তি নিয়ে গাছটি বেঁচে আছে! গাছটি নিয়ে প্রচলিত আছে একটি কল্পকাহিনিও। আমগাছটির নিচে নাকি মোহরের কলস রেখে গাছটি লাগানো হয়েছিল। এ কারণেই আমগাছটি অন্য রকম শক্তি নিয়ে বেঁচে আছে। পূর্বপুরুষদের কোন আমলে আমগাছটি লাগানো হয়েছে থাকতে পারে। ধারণা করা হয়, আমগাছটির বয়স ২০০ বছরেরও বেশি। যুগ যুগ ধরে এই সূর্যপুরী আমগাছটিই দিয়ে আসছে রসালো ও সুস্বাদু আম। এখনো এই গাছ থেকে প্রতিবছর প্রায় ৪০০ মণ আম পাওয়া যায়। ৪০০ মণ আম! অবাক হতেই পারেন। চাইলে আপনারা এই ঠিকানায় ছুটে যেতে পারেন।
এশিয়ার বৃহত্তম ঐতিহ্যবাহী প্রচীন লতা সূর্যপুরী আম গাছ
অবস্থান: গ্রাম: মন্ডুমালা, ব্লক: হরিণমারী, উপজেলা: বালিয়াডাঙ্গী, জেলা: ঠাকুরগাঁও।
জাতের নাম: সূর্যপুরী
বৈজ্ঞানিক নাম: Mangifera indica (ম্যাঙ্গিফেরা ইন্ডিকা)
গাছের বয়স: আনুমানিক ২২০ (দুইশত কুড়ি বছর)
বর্তমানে চতুর্থ প্রজন্ম গাছটির স্বত্ত্বাধিকারী।
স্থানীয়দের কাছে এই আমগাছের ইতিহাস অনেক পুরোনো। মাটি আঁকড়ে থাকা মোটা ডালপালা গুলো দেখে অনেকেই গাছটির বয়স অনুমান করতে চেষ্টা করেন। কেউ বলেন ১৫০ বছর, আবার কেউ বলেন ২৫০ বছর। তবে এলাকার বায়োজোষ্ঠ্যরাও গাছটির বয়স কত তার সঠিক ভাবে বলতে পারেন না। তাঁরা বলেন কোন সময় আমগাছটি লাগানো হয়েছে তা জানা নেই। প্রাচীন এই গাছটি সম্পর্কে তারা জেনেছেন তাঁদের বাপ-দাদার কাছ থেকে। তারা আরো জানান, এই আমগাছের চারা থেকে পাশে কয়েকটি গাছ লাগানো হয়েছিলো। ১৫ বছর পর সেটাও একই ভাবে ডালপালা মাটির দিকে নুয়ে পড়ছে। ১৫ বছর আগে লাগানো আমগাছটির আকৃতি দেখে সহজেই মূল গাছটির বয়স অনুমান করা যায়, গাছটির বয়স ২০০ বছরের কম নয়।
আমগাছের ছায়ার স্নিগ্ধতায় মন ভরে যাক সবার। গাছটি দেখতে অনেক দর্শনার্থী ভিড় জমায় গাছটির নিচে। সবাই মুগ্ধ হয়ে দেখছে আমগাছটি। সবার শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় বেঁচে থাকুক যুগে যুগে কালে কালে। আমগাছটির ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য শুধু দেশের পর্যটক নয়, বিদেশের অনেক অতিথিকেও আকৃষ্ট করুক।