মেলা শেষ হতে বাকি আর মাত্র দুই দিন। ৩১ জানুয়ারি শেষ হতে যাচ্ছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৯তম এই আসর। মেলায় প্রতিদিনই বাড়ছে দর্শক ক্রেতাদের ভিড়। ভিড় বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে বেচাকেনাও । দেশিও পণ্যের পাশাপাশি চাহিদা রয়েছে বিদেশি পণ্যেরও।
রাজধানীসহ দেশের বিভন্ন প্রান্ত থেকে আগত ক্রেতা-দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠছে বাণিজ্য মেলা প্রাঙ্গণ। মেলায় আসছেন শিশু বৃদ্ধসহ সব বয়সি মানুষ। কেউ আসছেন মেলা থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসটি কিনতে। কেউ আসছেন ঘুরতে।
দর্শকদের এই উপচে পড়া ভিড়ের কারণ হিসেবে বাণিজ্য মেলার ইনচার্জ বলেন, প্রতি বছরই মেলায় কিছু কিছু না নতুন ইনোভেশন যুক্ত থাকে। এবারের মেলায় রক্তাত্ত জুলাই-আগষ্ট বিপ্লব ও বিপ্লবীদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে রাখার জন্য কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসব উদ্যোগের মধ্যে জুলাই চত্ত্বর, ছত্রিশ চত্ত্বর এবং ইউথ প্যাভিলিয়ন নামে তিনটি পৃথক স্টল দেয়া হয়েছে।
এখানে জুলাই বিল্পবের নানা স্লোগান, গ্রাফিতি এবং বাণী প্রদর্শন করা হচ্ছে। সকল শ্রেণির মানুষ সেগুলো গভীর আগ্রহের সাথে পরিদর্শন করছেন। এছাড়া এবারে বাণিজ্য মেলায় সিনিয়র সিটিজেন কর্ণার, সোর্সিং জোন, উইমেন এন্টারপ্রেনারস কর্ণার এবং শিশু পার্কের ধারণা মেলাকে বিশেষ বৈশিষ্ট্য মন্ডিত করে তুলেছে।
তিনি আর বলেন, এবারের বাণিজ্য মেলায় দর্শক ক্রেতাদের উপস্থিতি বিগত বছরগুলোর চেয়ে অনেক বেশি। প্রতিদিন ১ থেকে দেড় লাখ মানুষের সমাগম ঘটছে মেলা প্রাঙ্গণে। শেষ মুহূর্তে এসে যেন ভিড়ও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। সেই সাথে বাড়ছে বেচা-বিক্রিও। ছুটির দিনগুলোতে সেই ভিড় ছাড়িয়ে যায় প্রত্যাশার চেয়েও অনেক বেশি।
মেলাপ্রাঙ্গণে দেখা যায়, ইলেকট্রনিক্স পণ্যের স্টলগুলোতে ভিড় কিছুটা বেশি। ইলেকট্রনিক্স পণ্যের নতুন ইনোভেশনগুলো ঘুরে ঘুরে দেখছেন দর্শনার্থীরা। শেষ সময়ে পণ্য বেচাকেনার হিড়িক পরেছে নানান অফার ও মূল্যছাড়ে।
পণ্যে ছাড় আর লোভনীয় অফারে জমে উঠেছে বাণিজ্যমেলা। মেলা উপলক্ষে ফ্যাশন হাউজগুলো নিয়ে এসেছে নিত্যনতুন সব ধরনের পোশাক। আর এসব পোশাকে ছাড়ও চলছে অবিশ্বাস্য। মেলায় ব্লেজারের স্টলে দেখা গেছে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড়। ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়ে মাত্র ১৩০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে ভিনিন্ন ডিজাইনের ব্লেজার। কমপ্লিট স্যুট পাওয়া যাচ্ছে ২৫০০ টাকায়।
বাণিজ্য মেলায় সিরামিক এর আসবাবপত্র ও প্লাস্টিক পণ্যে ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ মূল্য ছাড়ের পাশাপাশি ১টি কিনলে ১টি ফ্রি অফার।
ঢাকার আশেপাশের এলাকা থেকে মেলায় কেউ পরিবার আবার কেউ প্রিয়জনকে সাথে নিয়ে এসেছেন। কেনাকাটার পাশাপাশি নিজেদের মুহূর্তগুলো ফ্রেমে বন্দি করতেও ভুলছেন না তারা। এর বাইরেও পছন্দের পণ্য সুলভ মূল্যে পাওয়ার আশায় অনেকই আসছেন বাণিজ্য মেলায়।
ঘরে বসেই অনলাইনে সহজেই টিকেট কাটা যাচ্ছে। তাই টিকেট কাটা নিয়ে ঝাক্কি ঝামেলাও কম হচ্ছে।
বাণিজ্য মেলায় দেখা গেছে বাহারি পণ্য আর মূল্য ছাড়ের ছড়াছড়ি। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে ও আয়োজকদের ছিল নানা উদ্যোগ। এবার দেশি পণ্যের পাশাপাশি ক্রেতাদের চাহিদার তালিকায় রয়েছে কার্পেট, শাল, বাহারি বাতি, গৃহস্থালি সাজ সজ্জার বিদেশী পণ্য।
দেশীয় পণ্যের পাশাপাশি এবারের বাণিজ্যমেলায় ভারত, সিঙ্গাপুর, তুরস্ক, ইরান, পাকিস্তান, হংকং, ইন্দোনেশিয়া, সহ বিভিন্ন দেশ অংশ নিয়েছে। এসব দেশের বস্ত্র, মেশিনারিজ, কার্পেট, কসমেটিকস অ্যান্ড বিউটি এইডস, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস, ফার্নিচার, পাট ও পাটজাত পণ্য, গৃহসামগ্রী, চামড়া/আর্টিফিসিয়াল চামড়া ও জুতাসহ চামড়াজাত পণ্য প্রদর্শিত হচ্ছে।
এছাড়াও রয়েছে স্পোর্টস গুডস, স্যানিটারি ওয়্যার, খেলনা, স্টেশনারি, ক্রোকারিজ, প্লাস্টিক, মেলামাইন পলিমার, হারবাল ও টয়লেট্রিজ, ইমিটেশন জুয়েলারি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, ফাস্টফুড, হস্তশিল্পজাত পণ্য, হোম ডেকর ইত্যাদি পণ্য।
যেভাবে আসবেন বাণিজ্য মেলায়
রাজধানীর বাইরে হওয়ায় বিড়ম্বনায় পড়ার ভয়ে অনেকে মেলায় আসতে চাচ্ছেন না। সেটি বিবেচনায় রেখে অন্যান্য বছরের মতো এবারও যাতায়াতের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রেখেছে মেলা কর্তৃপক্ষ। বাণিজ্য মেলায় আসতে বিশেষ করে চারটি স্থান থেকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিসি) দুই শতাধিক বাস চলাচল করছে। উবারের মাধ্যমে ৫০ শতাংশ ছাড়ে মেলায় যাত্রী পরিবহন করা হয়। এ ছাড়া ব্যক্তিগত গাড়ি ও বিভিন্ন পরিবহনে মেলায় আসতে পারবেন। তবে কুড়িল বিশ্বরোড থেকে আসা যায় সহজে।
মেলা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মেলায় আসা-যাওয়ার জন্য বিআরটিসির ডেডিকেটেড বাস সার্ভিসের পাশাপাশি বিশেষ ছাড়ে উবার সার্ভিস চালু করা হয়েছে। কুড়িল বিশ্বরোড, ফার্মগেট, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী থেকে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বাণিজ্য মেলার উদ্দেশ্যে বিআরটিসির ২০০টির বেশি ডেডিকেটেড শাটল বাস চলছে। মেলা প্রাঙ্গণ থেকে বাসের সর্বশেষ ট্রিপ ছেড়ে যাচ্ছে রাত ১১টায়।
ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার পরিচালক বিবেক সরকার জানান,মেলায় যাতায়াতে কোনও ভোগান্তি নেই। বিআরটিসির দুই শতাধিক বাস প্রতিদিন চলাচল করছে। এ ছাড়া উবারের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়েছে। তারা ৫০ শতাংশ ছাড়ে যাত্রীদের নিয়ে আসবেন বাণিজ্য মেলায়।’
টিকিটের দাম কত
মাসব্যাপী এই মেলা সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন খোলা থাকছে রাত ১০টা পর্যন্ত। মেলায় প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য টিকিটের মূল্য ৫০ টাকা এবং ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা তাদের কার্ড দেখিয়ে বিনামূল্যে মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন।