ঘুম হলো মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর দৈনন্দিন জীবনের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, যেখানে শরীর ও মন বিশ্রাম নেয় এবং দিনের ক্লান্তি দূর করে। পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের জন্য অপরিহার্য, যা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। পর্যাপ্ত ঘুম শুধু আমাদের শারীরিক সুস্থতার জন্যই নয়, মানসিক প্রশান্তি এবং দৈনন্দিন জীবনের কার্যকারিতার জন্যও অপরিহার্য। সাধারণত, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। তবে, বয়সভেদে ঘুমের এই সময়সীমা ভিন্ন হতে পারে।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় ঘুম বঞ্চিতদের জন্য এক উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, মাত্র তিন রাত পর্যাপ্ত ঘুম না হলেই আপনার হৃদপিণ্ডের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। নতুন এই গবেষণায় দেখা গেছে, টানা তিন রাত গড়ে মাত্র ৪.২৫ ঘণ্টা ঘুমালে রক্তে ৯০ ধরনের প্রদাহজনক প্রোটিনের (inflammatory proteins) মাত্রা বেড়ে যায়। এর মধ্যে অনেকগুলো প্রোটিনই হার্ট ফেইলিউর, করোনারি আর্টারি ডিজিজ এবং অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশনের (অনিয়মিত হৃদস্পন্দন) মতো হৃদরোগের সঙ্গে সম্পর্কিত।
গবেষকরা আরও জানিয়েছেন, এমনকি তরুণ ও সুস্থ ব্যক্তিদের মধ্যেও ঘুমের অভাবে হৃদপিণ্ডের ক্ষতির লক্ষণ দেখা গেছে। এটি দেখায় যে, ঘুমের অভাব কতটা দ্রুত শরীরের ক্ষতি শুরু করতে পারে।ঘুমের অভাবে কেবল হার্টই নয়, শরীরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অপর্যাপ্ত ঘুম স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, রক্তে শর্করার ভারসাম্য নষ্ট করে এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে ব্যাঘাত ঘটায়। এর ফলে অতিরিক্ত খাওয়া, ওজন বৃদ্ধি এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এছাড়াও, ঘুম কম হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। মেজাজ, স্মৃতিশক্তি এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ব্যাহত হয়।
দীর্ঘদিন ধরে ঘুমের অভাবে শরীর অসুস্থতা বা আঘাত থেকে সেরে ওঠার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়। সহজ কথায়, ভালো ঘুম কেবল একটি বিলাসিতা নয়, এটি আপনার হৃদপিণ্ড এবং সার্বিক স্বাস্থ্যের এক শক্তিশালী রক্ষাকবচ।
ঘুম হার্ট ও রক্তনালিকে বিশ্রাম নিতে সাহায্য করে। ভালো ঘুম উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে পারে।ঘুম ক্ষুধার হরমোনগুলোকে (যেমন লেপটিন ও ঘ্রেলিন) প্রভাবিত করে। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে ঘ্রেলিন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা ক্ষুধা বাড়ায় এবং অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা সৃষ্টি করে। ফলে ওজন বাড়ার ঝুঁকি থাকে। ঘুমের সময় মস্তিষ্ক দিনের বেলায় শেখা তথ্যগুলোকে গুছিয়ে দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতিতে রূপান্তরিত করে। এটি নতুন তথ্য মনে রাখতে এবং শিখতে সাহায্য করে।