তিস্তার দুই সেতুর কাছের বিচ্ছিন্ন জনপদে প্রকৃতি ও জীবনের ‘উষ্ণতা’   

  • নাসিমুল শুভ
  • আপডেট সময় ০৬:৫৫:১৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারী ২০২৫
  • 93

উত্তরে বইছে হিমেল হাওয়া, কনকনে শীত। এরমধ্যেই কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাটের দুর্গম চরাঞ্চলে উষ্ণতা বিলি শেষে প্রকৃতি ও জীবনের উষ্ণতার নৌকা পৌঁছায় রংপুরের ঢুষমারা চরে। তিস্তা রেল সেতু এবং সড়ক সেতুর নিচ থেকেই শুরু হয়েছে চর। উপর দিয়ে দু’টি সেতু লালমনিরহাটকে রংপুরের সাথে সুন্দরভাবে জুড়ে দিলেও সেতুর কাছাকাছি নিচের বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলের মানুষ এখনো যেন বিচ্ছিন্নই। এই চরাঞ্চলের একটি চর ঢুষমারা।

আপাতত শান্ত চেহারার তিস্তা যখন প্রবল খরস্রোতা হয় তখন ভাঙনে অস্তিত্ব হারানোর শঙ্কায় দুরুদুরু বুকে নির্ঘুম রাত পার করে ঢুষমারার কৃষিপ্রধান জনপদের মানুষেরা। বর্ষায় ভাঙনে জায়গা-জমি হারানো মানুষরা কেউ জীবিকার আশায় চলে আসে ঢাকায়। যারা থেকে যান চরে শীতে তাদের ঘরে নেমে নামে উত্তরের হাড় কাঁপানো শীত। একমাত্র চলাচল মাধ্যম নৌকা হওয়ায় সর্দি-কাশি-শ্বাসকষ্ট থেকে হুট করে নিউমোনিয়ার মতো মারাত্মক পরিস্থিতি কিংবা প্রসূতির জরুরী প্রসব পরিস্থিতিতে চর ঢুষমারাবাসী এখনও অসহায়।

দুর্গম চরের এই দুঃস্থ মানুষদের মাঝে উষ্ণতার ছোঁয়া পৌঁছে দিতে সকাল সকাল কাউনিয়ার তিস্তা রেলসেতুর নিচ থেকে ছাড়ল নৌকা। তাতে ৫০০ পিস কম্বল,জরুরি ওষুধ এবং চিকিৎসক ও স্বেচ্ছাসেবকরা, সেই সাথে কাউনিয়ায় জরুরী কাজে আসা ঢুষমারা চরের কয়েক বাসিন্দাও উঠলেন নৌকায়।

তিস্তা শান্ত থাকায় চরে পৌঁছাতে খুব একটা বেশি সময় লাগে না। তবে নৌকা চলে খুব সাবধানে, ধীর গতিতে। শীতে পানি কমে আসায় নিচে জাগা চরে নৌকার তলা ঠেকলেই বিপদ। কোনো রকমে চরে ঠেকে যাওয়া থেকে গা বাঁচিয়ে নৌকা ভিড়ল ঢুষমারা চরে। ঘাট বলতে যা বোঝায় সেরকম কিছুর দেখা পাওয়া উত্তরাঞ্চলের কোনো চরেই সম্ভব নয়।

ঘাট বলতে নদীর ভাঙা পাড়, বালু-কাদা পেরিয়ে কোথাও ঢাল বেয়ে সোজা উঠে যেতে হয়। ১০ বস্তা কম্বল, ওষুধের কার্টন নিয়ে চরে উঠতে না উঠতেই এক বাড়ির উঠান! এটাই যেন চরের প্রবেশপথ। এক সময় গ্রামের চেয়ে নদীর পাড় দূরে থাকলেও নদী এখন বাড়ির উঠানের পাশেই!

সেই উঠানেই বসলো শীত নিবারণের কম্বল বিতরণ এবং দিনব্যাপী মেডিকেল সেবা ক্যাম্প। কম্বল পাবেন, ডাক্তার দেখাতে পারবেন, বিনামূল্যে ওষুধ পাবেন শুনে ভিড় করে এই উঠানেই এলেন ঢুষমারার মানুষ। এখানেই শুরু হলো রোগী দেখা এবং বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ।

কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাটের দুই চরে আগের দু’দিন এই সামাজিক কার্যক্রম চালানোর সময় একটি বিষয় তেমন চোখে পড়েনি, যা ঢুষমারা চরে দেখা গেল। কয়েকজন প্রতিবন্ধী শিশুকে নিয়ে ডাক্তার দেখানোর লাইনে দাঁড়িয়েছেন কয়েকজন অসহায় মা। প্রতিবন্ধীতার নানা জটিলতার চিকিৎসা সেবা দেয়া আসলে ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল ক্যাম্পে হয়ে ওঠার কথা নয়। তবু এই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জ্বর-ঠাণ্ডার সমস্যা দূর করতে দেয়া হয় ওষুধ ও ভিটামিন।

১৩ বছর বয়সী জান্নাতকে নিয়ে মা জাহানারা ভিড়ের মাঝে লাইনে দাঁড়াতে পারছিলেন না। প্রতিবন্ধী জান্নাতকে একা ছাড়তেই সে মাটিতে গড়িয়ে পড়ে। তাই মেডিকেল টিমের সমন্বয়কই এগিয়ে গেলেন জান্নাতের কাছে। পাশেই বসে জাহানারা জানালেন মেয়ের সমস্যার কথা। সব শুনে ব্যবস্থাপত্র লিখে দিলেন চিকিৎসক,ওষুধ এনে দিলেন প্রকৃতি ও জীবন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের মেডিকেল টিমের কর্মীরা।

মেয়ের জন্য এতটুকু করতে পারায় কৃতজ্ঞতা জানান মা জাহানারা। তিনি প্রকৃতিবার্তাকে বলেন, ‘শিশু অবস্থাতেই জান্নাত এরকম, অন্যগের মতো না। ও অল্প বোঝে, মেয়ে বড় হয়িছে তবু ভালা হবার নয়। মাটিত বসি ঠাণ্ডা বাধাইছে, ওরে নিয়ে নৌকোয় চরের বাইরে যাওয়া যায় না। আজকে চরেই ডাক্তার দেকলো, ওষুধ দিলো। বড় উপকার হইল।’

প্রতিবন্ধি শিশু সাব্বির, শোয়েবকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে এসেছেন ওদের দাদা,নানা। সাব্বির পোলিও আক্রান্ত, ওর দাদা একাব্বর মুন্সী ডাক্তার আসবে শুনে নাতী কোলে চলে এসেছেন মেডিকেল ক্যাম্পে। শোয়েবের বয়স ৮ সাধারণ শিশুদের চেয়ে সে কিছুটা বিশেষ ধরনের, সেও ভুগছে সর্দি-কাশিতে। ডাক্তারের দেয়া ওষুধের ব্যাগটা হাতে নিয়ে ক্যামেরার দিকে চেয়ে হাসল যেন শোয়েব।

চরের বাসিন্দা বরকত আলী, জমিরুদ্দিন, শামসুদ্দিনের মতো বৃদ্ধরা জানালেন নৌকায় করে দূরে গিয়ে ডাক্তার দেখানোর ঝক্কি-ঝামেলা আর খরচের কথা। চরেই একদিনের জন্য ডাক্তার বিনামূল্যের ওষুধ পেয়ে তারা খুব খুশি।

মেডিকেল ক্যাম্পের ফাঁকে চলে দুঃস্থ মানুষদের মাঝে কম্বল বিতরণ। বেলা বাড়ার সঙ্গে বাড়তে থাকে ভিড়। উঠানে আর জায়গা না হওয়ায় কম্বল বিতরণের জন্য চরের ঘাট লাগোয়া নতুন জাগা চরটি বেছে নিয়ে সেখানেই নেয়া হয় কম্বলের বস্তাগুলো। শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা স্বেচ্ছাসেবীরা ব্যস্ত হয়ে যায়। দ্রুতই দৃশ্যমান হয়  কম্বল নিতে আসা শীতার্ত মানুষের কয়েক সারি।

লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে না থেকে বসে পড়েন তারা উষ্ণ বালুর ওপর। শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে তাদের হাতে হাতে পৌঁছে দেয়া হতে থাকে নানা রঙের কম্বল।

বৃদ্ধা আজিরন, মধ্যবয়সী সালেহা,আজমত মোল্লা, বিল্লালদের কাছে এই কম্বল শীতের নতুন সম্বলের মতোই। সকাল-রাতে যখন পা হিম হয়ে আসে তখন ওম দিতে এমন কম্বলই ভরসা বলে জানান তারা।

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার এই চরে গত ২৯ ডিসেম্বর দিনব্যাপী চলে মেডিকেল ক্যাম্প ও শীতবস্ত্র বিতরণ। মেডিকেল টিমের সমন্বয়ক বলেন, ‘প্রকৃতি ও জীবনের স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র দেড় যুগের বেশি সময় ধরে চরাঞ্চলের অসহায়-দুঃস্থ মানুষের জন্য কাজ করছি। আমরা দুর্গম চরে গিয়ে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা, ওষুধ এবং শীত নিবারণে শীতবস্ত্র দেই। আজকে ফলিমারি চরে কয়েকশ মানুষকে ন্যূনতম স্বাস্থ্যসেবা এবং বিনামূল্যে ওষুধ দিলাম। ৫০০ কম্বল বিতরণ করা হলো। মানবতার জন্য কষ্ট করে এসেও চরবাসীর মুখের হাসি দেখে আমরাও ভীষণ আনন্দিত।’

এভাবে প্রতিবছরই শীতে দেশের দুর্গম অঞ্চলগুলোর সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কাছে সাধ্যমতো উষ্ণতা নিয়ে হাজির হয় প্রকৃতি ও জীবন ক্লাব। আর বছরজুড়েই দেশের প্রান্তিক জনপদের মানুষের জন্য নূন্যতম স্বাস্থ্যসেবা দিতে কাজ করছে প্রকৃতি ও জীবন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। তিস্তাবুকের ঢুষমারা চরের সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের জন্য সরকারি-বেসরকারি অন্যান্য সংস্থাগুলোকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন আয়োজকরা।

আপলোডকারীর তথ্য

Shuvo

চবি’র কলোনি থেকে ৯ ফুট লম্বা অজগর উদ্ধার  

তিস্তার দুই সেতুর কাছের বিচ্ছিন্ন জনপদে প্রকৃতি ও জীবনের ‘উষ্ণতা’   

আপডেট সময় ০৬:৫৫:১৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারী ২০২৫

উত্তরে বইছে হিমেল হাওয়া, কনকনে শীত। এরমধ্যেই কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাটের দুর্গম চরাঞ্চলে উষ্ণতা বিলি শেষে প্রকৃতি ও জীবনের উষ্ণতার নৌকা পৌঁছায় রংপুরের ঢুষমারা চরে। তিস্তা রেল সেতু এবং সড়ক সেতুর নিচ থেকেই শুরু হয়েছে চর। উপর দিয়ে দু’টি সেতু লালমনিরহাটকে রংপুরের সাথে সুন্দরভাবে জুড়ে দিলেও সেতুর কাছাকাছি নিচের বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলের মানুষ এখনো যেন বিচ্ছিন্নই। এই চরাঞ্চলের একটি চর ঢুষমারা।

আপাতত শান্ত চেহারার তিস্তা যখন প্রবল খরস্রোতা হয় তখন ভাঙনে অস্তিত্ব হারানোর শঙ্কায় দুরুদুরু বুকে নির্ঘুম রাত পার করে ঢুষমারার কৃষিপ্রধান জনপদের মানুষেরা। বর্ষায় ভাঙনে জায়গা-জমি হারানো মানুষরা কেউ জীবিকার আশায় চলে আসে ঢাকায়। যারা থেকে যান চরে শীতে তাদের ঘরে নেমে নামে উত্তরের হাড় কাঁপানো শীত। একমাত্র চলাচল মাধ্যম নৌকা হওয়ায় সর্দি-কাশি-শ্বাসকষ্ট থেকে হুট করে নিউমোনিয়ার মতো মারাত্মক পরিস্থিতি কিংবা প্রসূতির জরুরী প্রসব পরিস্থিতিতে চর ঢুষমারাবাসী এখনও অসহায়।

দুর্গম চরের এই দুঃস্থ মানুষদের মাঝে উষ্ণতার ছোঁয়া পৌঁছে দিতে সকাল সকাল কাউনিয়ার তিস্তা রেলসেতুর নিচ থেকে ছাড়ল নৌকা। তাতে ৫০০ পিস কম্বল,জরুরি ওষুধ এবং চিকিৎসক ও স্বেচ্ছাসেবকরা, সেই সাথে কাউনিয়ায় জরুরী কাজে আসা ঢুষমারা চরের কয়েক বাসিন্দাও উঠলেন নৌকায়।

তিস্তা শান্ত থাকায় চরে পৌঁছাতে খুব একটা বেশি সময় লাগে না। তবে নৌকা চলে খুব সাবধানে, ধীর গতিতে। শীতে পানি কমে আসায় নিচে জাগা চরে নৌকার তলা ঠেকলেই বিপদ। কোনো রকমে চরে ঠেকে যাওয়া থেকে গা বাঁচিয়ে নৌকা ভিড়ল ঢুষমারা চরে। ঘাট বলতে যা বোঝায় সেরকম কিছুর দেখা পাওয়া উত্তরাঞ্চলের কোনো চরেই সম্ভব নয়।

ঘাট বলতে নদীর ভাঙা পাড়, বালু-কাদা পেরিয়ে কোথাও ঢাল বেয়ে সোজা উঠে যেতে হয়। ১০ বস্তা কম্বল, ওষুধের কার্টন নিয়ে চরে উঠতে না উঠতেই এক বাড়ির উঠান! এটাই যেন চরের প্রবেশপথ। এক সময় গ্রামের চেয়ে নদীর পাড় দূরে থাকলেও নদী এখন বাড়ির উঠানের পাশেই!

সেই উঠানেই বসলো শীত নিবারণের কম্বল বিতরণ এবং দিনব্যাপী মেডিকেল সেবা ক্যাম্প। কম্বল পাবেন, ডাক্তার দেখাতে পারবেন, বিনামূল্যে ওষুধ পাবেন শুনে ভিড় করে এই উঠানেই এলেন ঢুষমারার মানুষ। এখানেই শুরু হলো রোগী দেখা এবং বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ।

কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাটের দুই চরে আগের দু’দিন এই সামাজিক কার্যক্রম চালানোর সময় একটি বিষয় তেমন চোখে পড়েনি, যা ঢুষমারা চরে দেখা গেল। কয়েকজন প্রতিবন্ধী শিশুকে নিয়ে ডাক্তার দেখানোর লাইনে দাঁড়িয়েছেন কয়েকজন অসহায় মা। প্রতিবন্ধীতার নানা জটিলতার চিকিৎসা সেবা দেয়া আসলে ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল ক্যাম্পে হয়ে ওঠার কথা নয়। তবু এই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জ্বর-ঠাণ্ডার সমস্যা দূর করতে দেয়া হয় ওষুধ ও ভিটামিন।

১৩ বছর বয়সী জান্নাতকে নিয়ে মা জাহানারা ভিড়ের মাঝে লাইনে দাঁড়াতে পারছিলেন না। প্রতিবন্ধী জান্নাতকে একা ছাড়তেই সে মাটিতে গড়িয়ে পড়ে। তাই মেডিকেল টিমের সমন্বয়কই এগিয়ে গেলেন জান্নাতের কাছে। পাশেই বসে জাহানারা জানালেন মেয়ের সমস্যার কথা। সব শুনে ব্যবস্থাপত্র লিখে দিলেন চিকিৎসক,ওষুধ এনে দিলেন প্রকৃতি ও জীবন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের মেডিকেল টিমের কর্মীরা।

মেয়ের জন্য এতটুকু করতে পারায় কৃতজ্ঞতা জানান মা জাহানারা। তিনি প্রকৃতিবার্তাকে বলেন, ‘শিশু অবস্থাতেই জান্নাত এরকম, অন্যগের মতো না। ও অল্প বোঝে, মেয়ে বড় হয়িছে তবু ভালা হবার নয়। মাটিত বসি ঠাণ্ডা বাধাইছে, ওরে নিয়ে নৌকোয় চরের বাইরে যাওয়া যায় না। আজকে চরেই ডাক্তার দেকলো, ওষুধ দিলো। বড় উপকার হইল।’

প্রতিবন্ধি শিশু সাব্বির, শোয়েবকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে এসেছেন ওদের দাদা,নানা। সাব্বির পোলিও আক্রান্ত, ওর দাদা একাব্বর মুন্সী ডাক্তার আসবে শুনে নাতী কোলে চলে এসেছেন মেডিকেল ক্যাম্পে। শোয়েবের বয়স ৮ সাধারণ শিশুদের চেয়ে সে কিছুটা বিশেষ ধরনের, সেও ভুগছে সর্দি-কাশিতে। ডাক্তারের দেয়া ওষুধের ব্যাগটা হাতে নিয়ে ক্যামেরার দিকে চেয়ে হাসল যেন শোয়েব।

চরের বাসিন্দা বরকত আলী, জমিরুদ্দিন, শামসুদ্দিনের মতো বৃদ্ধরা জানালেন নৌকায় করে দূরে গিয়ে ডাক্তার দেখানোর ঝক্কি-ঝামেলা আর খরচের কথা। চরেই একদিনের জন্য ডাক্তার বিনামূল্যের ওষুধ পেয়ে তারা খুব খুশি।

মেডিকেল ক্যাম্পের ফাঁকে চলে দুঃস্থ মানুষদের মাঝে কম্বল বিতরণ। বেলা বাড়ার সঙ্গে বাড়তে থাকে ভিড়। উঠানে আর জায়গা না হওয়ায় কম্বল বিতরণের জন্য চরের ঘাট লাগোয়া নতুন জাগা চরটি বেছে নিয়ে সেখানেই নেয়া হয় কম্বলের বস্তাগুলো। শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা স্বেচ্ছাসেবীরা ব্যস্ত হয়ে যায়। দ্রুতই দৃশ্যমান হয়  কম্বল নিতে আসা শীতার্ত মানুষের কয়েক সারি।

লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে না থেকে বসে পড়েন তারা উষ্ণ বালুর ওপর। শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে তাদের হাতে হাতে পৌঁছে দেয়া হতে থাকে নানা রঙের কম্বল।

বৃদ্ধা আজিরন, মধ্যবয়সী সালেহা,আজমত মোল্লা, বিল্লালদের কাছে এই কম্বল শীতের নতুন সম্বলের মতোই। সকাল-রাতে যখন পা হিম হয়ে আসে তখন ওম দিতে এমন কম্বলই ভরসা বলে জানান তারা।

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার এই চরে গত ২৯ ডিসেম্বর দিনব্যাপী চলে মেডিকেল ক্যাম্প ও শীতবস্ত্র বিতরণ। মেডিকেল টিমের সমন্বয়ক বলেন, ‘প্রকৃতি ও জীবনের স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র দেড় যুগের বেশি সময় ধরে চরাঞ্চলের অসহায়-দুঃস্থ মানুষের জন্য কাজ করছি। আমরা দুর্গম চরে গিয়ে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা, ওষুধ এবং শীত নিবারণে শীতবস্ত্র দেই। আজকে ফলিমারি চরে কয়েকশ মানুষকে ন্যূনতম স্বাস্থ্যসেবা এবং বিনামূল্যে ওষুধ দিলাম। ৫০০ কম্বল বিতরণ করা হলো। মানবতার জন্য কষ্ট করে এসেও চরবাসীর মুখের হাসি দেখে আমরাও ভীষণ আনন্দিত।’

এভাবে প্রতিবছরই শীতে দেশের দুর্গম অঞ্চলগুলোর সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কাছে সাধ্যমতো উষ্ণতা নিয়ে হাজির হয় প্রকৃতি ও জীবন ক্লাব। আর বছরজুড়েই দেশের প্রান্তিক জনপদের মানুষের জন্য নূন্যতম স্বাস্থ্যসেবা দিতে কাজ করছে প্রকৃতি ও জীবন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। তিস্তাবুকের ঢুষমারা চরের সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের জন্য সরকারি-বেসরকারি অন্যান্য সংস্থাগুলোকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন আয়োজকরা।