গ্রীষ্মকাল আসার আগেই রোদ, ঘাম আর পানিশূন্যতার কারণে অনেকের শরীরে নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন বয়স্ক, শিশু ও অসুস্থ ব্যক্তিরা। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী, গরমের দিনে অকারণে বাইরে না যাওয়াই ভালো। পাশাপাশি সুস্থ থাকতে কিছু জরুরি বিষয় অবশ্যই মেনে চলা উচিত। গরমে এখন জনজীবন অতীষ্ট। অতিরিক্ত গরমে ছোট থেকে বড় সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এজন্য দুপুরের চড়া রোদ এড়ানোর পরামর্শও দিচ্ছেন বিশেজ্ঞরা। গরমে হিট স্ট্রোক’সহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
এ সময় সুস্থ থাকতে প্রচুর জল খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। গরমে বেশিরভাগ শারীরিক সমস্যাগুলোই পানির অভাবে সৃষ্টি হয়। তাই দিনে অন্তত ৩-৪ লিটার পানি অবশ্যই খেতে হবে। আর যারা বাইরে কাজ করেন তাদের উচিত আরও বেশি পরিমাণে পানি পান করা। এ সময় হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়। এ সমস্যাটিরও মূল কারণ হলো শরীরের তাপমাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া। কিন্তু কেন এমনটি হয়।
বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে মানুষের শরীরও গরম হয়ে যায়। এর ফলে রক্তনালীগুলো খুলে যায়। এর জের ধরে রক্ত চাপ কমে যায় যে কারণে সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালন করা হৃদপিণ্ডের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।
চলুন, জেনে নিই গরমে সবচেয়ে বেশি যে স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো দেখা যায় এবং সেগুলো থেকে বাঁচার উপায়।
ডিহাইড্রেশন (পানিশূন্যতা)
এই গরমে সবথেকে বেশি যে সমস্যা হয় সেটা হলো পানিশূন্যতা। গরমে শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে পানি বেরিয়ে যায়। ফলে মাথা ঘোরা, দুর্বলতা, ক্লান্তিভাবসহ নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই সারাদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন, এমনকি তেষ্টা না পেলেও। তরমুজ, শসা, ডাবের পানি খেতে পারেন বেশি করে। কফি ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন।
হিট স্ট্রোক
তীব্র রোদে বেশি সময় কাটালে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এতে ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি জ্বর, দুর্বলতা ও বমি হতে পারে। বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন শিশু, বৃদ্ধ, হৃদরোগী ও যারা খেলাধুলার সঙ্গে যুক্ত। হিট স্ট্রোক এড়াতে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে বাইরে যাওয়া এড়িয়ে চলুন। হালকা রঙের ঢিলেঢালা সুতির পোশাক পরুন। বাইরে গেলে ছাতা বা টুপি ব্যবহার করুন। হিট স্ট্রোকের লক্ষণ দেখলে সঙ্গে সঙ্গে ঠাণ্ডা জায়গায় যান ও পানি পান করুন।
খাদ্যে বিষক্রিয়া (ফুড পয়জনিং)
গরমে খাবার দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। বাসি বা খোলা খাবার খেলে ফুড পয়জনিং হতে পারে। বাসি বা রাস্তাঘাটের খোলা খাবার, লেবুর শরবত বা আখের রস এড়িয়ে চলুন। পচনশীল খাবার ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন। ফল-সবজি ভালোভাবে ধুয়ে খান।
ডায়রিয়া/বদহজম
অতিরিক্ত গরমে অনেকের হজমে সমস্যা দেখা দেয়। গরমে খাবার অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায় যেটা খেলে ফুডপয়জনিং বা বিষক্রিয়া হতে পারে। তাই পচা-বাসি খাবার, রাস্তাঘাটের খোলা খাবার, লেবুর শরবৎ, আখের রস এসব না খাওয়াই ভালো এবং ফ্রিজের খাবার খাওয়ার আগে অবশ্যই ভালো করে গরম করে নিতে হবে। ডায়রিয়া হলে প্রচুর পরিমাণ পানি, স্যালাইন ও ডাবের পানি খেতে হবে।
ত্বকের সমস্যা (ঘামাচি ও ফুসকুড়ি)
অতিরিক্ত ঘামের ফলে অনেকেই ঘামাচির সমস্যায় ভোগেন। এতে চুলকানি ও সংক্রমণ হতে পারে। এ সময় তাই সুতির জামা-কাপড় পরুন। বাইরে যাওয়ার আগে এসপিএফ ৩০ বা তার বেশি মাত্রার সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। দিনে অন্তত দুইবার গোসল করুন। এতে ত্বক পরিষ্কার ও সতেজ থাকে। ঘামাচি কমাতে অনেকেই পাউডার ব্যবহার করেন। তাতে হিতে বিপরীত হয়। পাউডারের কারণে ঘর্মগ্রন্থিগুলো সংক্রমণ হয়। তখন চিকিৎসকের কাছে ছুটতে হয়। তবে আগে থেকেই বিষয়টি নিয়ে সচেতন হলে বাড়াবাড়ি হওয়ার সুযোগ থাকে না।
হিট ক্র্যাম্পস
শরীরে পানির ঘাটতি হলে ও খনিজ পদার্থ বেরিয়ে গেলে পেশিতে টান ধরতে পারে। আবার শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়লে পেটে ব্যথাও হতে পারে। একে ‘হিট ক্র্যাম্পস’ হলা হয়। এ সমস্যা এড়াতে বেশি করে খেতে হবে, প্রয়োজনে লবণ পানি বা স্যালাইন পান করতে পারে। ছায়া বা ঠান্ডা জায়গায় থাকতে হবে।
হিট এগ্জরশন
অতিরিক্ত ঘাম হলে বমি হওয়া, মাথাব্যথা ও দুর্বলতা থাকলে ধরে নিতে হবে ‘হিট এগ্জরশন’এ আক্রান্ত হয়েছেন। এ ধরনের অসুস্থতা বোধ করলে পোশাক ঢিলে করে দিতে হবে। ঘাড়ে ও গলায় ভেজা কাপড় দিয়ে মুছতে হবে,বেশি করে পানি খেতে হবে ও রোদে থাকলে দ্রুত ছায়া বা ঠান্ডা স্থানে আশ্রয় নিতে হবে। তবে সমস্যা গুরুতর হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলেছেন বিশেষজ্ঞরা।
কিভাবে নিরাপদ থাকতে পারি?
ব্রিটেনের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সংস্থা এবিষয়ে কিছু পরামর্শ দিয়েছে:
- কারা নিজেদের ঠাণ্ডা রাখতে হিমশিম খাচ্ছে সেদিকে খেয়াল রাখুন, বিশেষ করে বয়স্ক লোকজন যাদের নানা ধরনের স্বাস্থ্য-জনিত সমস্যা রয়েছে এবং যারা একা থাকেন।
- ঘরের ভেতরে অবস্থান করুন। যেসব জানালা সূর্যের দিকে মুখে করে আছে সেগুলোর পর্দা টেনে দিন।
- প্রচুর পানীয় পান করুন।
- কাউকে বিশেষ করে শিশুদেরকে কোনো ঘরে বা গাড়িতে একা রেখে যাবেন না।
- বেলা ১১টা থেকে দুপুর তিনটা পর্যন্ত নিজেকে সূর্যের আলো থেকে দূরে রাখুন। এই সময়ে সূর্যের রশ্মি সবচেয়ে তীব্র হয়।
- ছায়ার মধ্যে আশ্রয় নিন। সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
- মাথায় লম্বা বারান্দা-ওয়ালা টুপি পরুন।
- দিনের সবচেয়ে গরম সময়ে শরীর চর্চা বা ব্যায়াম করা পরিহার করুন।
- কোথাও গেলে সঙ্গে করে পানি নিয়ে যাবেন।
- কোথাও পুকুর বা খাল বিল দেখলেই নিজেকে ঠাণ্ডা করার জন্য সেখানে নেমে পড়বেন না, কারণে তাতে আরো অনেক বেশি বিপদ হতে পারে যা হয়তো আপাতত চোখে পড়ছে না। রাতের ঘুমানোর সময় ঠাণ্ডা মোজা পরতে পারেন, এবং অন্যান্য দিন আপনি যে সময়ে ঘুমান ওই একই সময়ে বিছানায় যাবেন।