মানুষ দাঁত ব্রাশ করে দৈনন্দিন জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ হিসেবে। কিন্তু প্রকৃতিতে অন্য প্রাণীদের মধ্যে দাঁত ব্রাশ করার প্রয়োজন পড়ে না। কারণ মানুষের খাদ্যাভ্যাস ও জীবনাচরণের সাথে প্রাণীদের প্রাকৃতিক খাদ্য ও অভ্যাসের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। এজন্য মানুষের দাঁত ব্রাশের প্রয়োজন পড়ে। মানুষের খাদ্যাভ্যাস বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রক্রিয়াজাত ও প্রাকৃতিক চেহারার বাইরে। মিষ্টি, শর্করা ও উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার দাঁতের ওপর ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। ব্যাকটেরিয়া এসব খাবার ভেঙে অ্যাসিড তৈরি করে, যা দাঁতের এনামেল ক্ষয় করে এবং দাঁতের ক্ষয় রোগ (ডেন্টাল ক্যারিজ) সৃষ্টি করে।
মানুষের দাঁত দীর্ঘদিন পরিষ্কার না থাকলে প্লাক জমে, যা ক্যালকুলাস বা দাঁতের পাথরে পরিণত হয়। এ কারণে দাঁত ব্রাশ ও ডেন্টাল চেকআপ মানুষের জন্য অপরিহার্য। অনেকেই আছেন যারা একটি টুথব্রাশ কিনে মাসের পর মাস চালিয়ে নেন। একদম ব্যবহারের অযোগ্য না হওয়া পর্যন্ত দুই বেলা দাঁত পরিষ্কারে ব্যবহৃত টুথব্রাশটি বদলানোর কথা ভাবেনও না অনেকে। কিন্তু মনে রাখতে হবে পুরানো টুথব্রাশ থেকে দাঁতের ক্ষতি হতে পারে। তাই নির্দিষ্ট সময় পর টুথব্রাশ পরিবর্তন করতে হবে।
টুথব্রাশ পরিবর্তন না করার স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে। প্রতিবার আপনি আপনার টুথব্রাশ ব্যবহার করার সময় নাইলনের ব্রিস্টলগুলো আপনার টুথপেস্ট থেকে পানি এবং রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসে। এটি প্রতিবার ব্যবহারের সঙ্গে ব্রিস্টলগুলোকে কিছুটা দুর্বল করে তোলে। ব্রিস্টলগুলো বাঁকানো এবং একটি নতুন আকারে মোচড় দেয়, যা ‘ব্রিস্টল ফ্ল্যারিং’ নামে পরিচিত।
২০১৩ সালের একটি গবেষণা থেকে জানা যায়, টানা ৪০ দিন একটি টুথব্রাশ ব্যবহারের পর ব্রিস্টল ফ্ল্যারিং হয়, যার ফলে দাঁত আর আগের মতো পরিষ্কার হয় না। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের যারা ব্যবহার শুরুর ৪০ দিন পরও টুথব্রাশ পরিবর্তন করেননি তাদের দাঁতে কিছু সমস্যাও দেখা দিয়েছিল।
জীর্ণ টুথব্রাশ বিভিন্ন অসুস্থতা নিয়ে আসতে পারে। কারণ, এতে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া থাকে, যা পরে বিভিন্ন রোগের কারণ হতে পারে। তাই যখন দেখবেন টুথব্রাশে ব্রিস্টল ফ্ল্যারিং হচ্ছে, সাবধান হোন। এছাড়াও টুথব্রাশ বদলানোর আরেকটি প্রধান লক্ষণ হলো ব্রাশের ক্ষয়। চিকিৎসকেরা বলছেন, ব্রাশের ক্ষয় শুরু হওয়ামাত্র এটি বদলাতে হবে। আবার কোনো কারণ ছাড়া অসুস্থ হতে থাকলেও টুথব্রাশ পরিবর্তন করা উচিত। যাতে জীবাণুর আক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়।
টুথব্রাশ পরিবর্তনের সঠিক সময়: দন্ত চিকিৎসকদের মতে, কেবল দুই বেলা নিয়ম মেনে দাঁত পরিষ্কার করলেই হবে না। সেই সঙ্গে টুথব্রাশ ভালো আছে কিনা সেদিকেও নজর দিতে হবে। নষ্ট হোক বা না হোক, টুথব্রাশ প্রতি তিন থেকে চার মাস পরপর পরিবর্তন করা উচিত। কারণ, এই সময়ের মধ্যে টুথব্রাশে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে থাকে। যা ধুয়ে নিলেও সহজে পরিষ্কার হয় না। আপনি যদি টুথব্রাশ বা ইলেকট্রনিক টুথব্রাশের হেড প্রয়োজনের সময় প্রতিস্থাপন না করেন, তবে এটি আপনার দাঁতের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে। যা পরবর্তীতে সংক্রমণ ছড়াতে পারে।