দীর্ঘদিন ধরেই বিশ্বের শীর্ষ সমরাস্ত্র রপ্তানিকারক দেশ আমেরিকা। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমেরিকার অস্ত্র বিক্রির রেকর্ড আগের সব রেকর্ড ভেঙেছে। আগে এত বিপুল পরিমাণ যুদ্ধাস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানি করেনি দেশটি। ২০২৪ সালে আমেরিকার সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি রেকর্ড ৩১ হাজার ৮৭০ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ২৯ শতাংশ বেশি। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্যমতে, এগুলোর মধ্যে রয়েছে গাজায় গণহত্যায় অভিযুক্ত ইসরায়েলের কাছে ১ হাজার ৮৮০ কোটি ডলারের যুদ্ধবিমান বিক্রির চুক্তিও।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে বলেছে, অস্ত্র বিক্রি আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তার ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে।
এক প্রতিবেদনে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিদায়ের এ বছরটিতে বিশ্ব জুড়ে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে তিনটি মার্কিন কোম্পানির যুদ্ধাস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম। এই কোম্পানিগুলো হলো লকহিড মার্টিন, জেনারেল ডায়নামিক্স এবং নর্থরোপ গ্রুমান। ব্যাপকমাত্রায় বিক্রির ফলে বৈশ্বিক পুঁজিবাজারে অস্থিরতা সত্ত্বেও এই তিন কোম্পানির শেয়ারের দাম বছর জুড়েই চড়া ছিল।
দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তর পেন্টাগনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর তুরস্কে ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলার এবং ইসরায়েলের কাছে ১ হাজার ৮৮০ কোটি ডলার মূল্যের এফ ১৬ যুদ্ধবিমান বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে ওয়াশিংটন। একই সময়ে রোমানিয়ায় বিক্রি হয়েছে বেশ কয়েকটি এম১ এ ২ আব্রামস ট্যাংক, যেগুলোর সম্মিলিত মূল্য ২৫০ কোটি ডলার।
পেন্টাগন জানিয়েছে, ২০২৪ সালে কোম্পানির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে ২০ হাজার ৮০ কোটি ডলারের অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৩ সালে এই অর্থের পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার ৭৫০ কোটি ডলার। আর সরকারি যোগাযোগের মাধ্যমে ২০২৪ সালে ১১ হাজর ৭৯০ কোটি ডলারের সমরাস্ত্র ও সরঞ্জাম রপ্তানি করা হয়েছে। ২০২৩ সালে যার পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৯০ মিলিয়ন ডলার। ২০২৪ সালে বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্র ক্রয়ের যেসব অর্ডার এসেছে, তা ক্রেতা দেশগুলোকে সরবরাহ করতে চলতি বছর পুরোটাই লেগে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এসব অর্ডারে যুদ্ধবিমান ছাড়াও রয়েছে লাখ লাখ রাউন্ড গুলি ও আর্টিলারি গোলা, হাজার হাজার প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র এবং শত শত সাঁজোয়া যান।
বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানি বৃদ্ধির প্রধান কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এই যুদ্ধের জেরে ইউরোপসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন মিত্রদেশ নিজেদের অস্ত্রভাণ্ডার সমৃদ্ধ করার জন্য বিপুল পরিমাণ যুদ্ধাস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামের ফরমায়েশ দিয়েছে মার্কিন বিভিন্ন অস্ত্র উৎপাদন কোম্পানির এজেন্টদের কাছে। আর মিত্র দেশগুলোর বিপুল পরিমাণ চাহিদা মেটাতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে।
অস্ত্র বিক্রয়ের ক্ষেত্রে রেকর্ড গড়লে বিশ্ব জুড়ে চলমান যুদ্ধ ও সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ত তা নিয়ে নিন্দার ঝড়ও উঠেছে বিশ্ব জুড়ে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেনকে যেমন ঢালাওভাবে সামরিক সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছে দেশটি, তেমনি ইসরায়েলকেও বিপুল অঙ্কের সমরাস্ত্র দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়াতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছিল বাইডেন প্রশাসন। সদ্য দায়িত্ব পাওয়া ট্রাম্প প্রশাসনও এর ব্যতিক্রম নয়। ইতোমধ্যে ইসরায়েলের জন্য ২০০০ পাউন্ড বোমা দেওয়ার বিষয়টি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অনুমোদন দিয়েছেন। যা বাইডেনের সময়ে আটকে ছিল।