বর্ষা মৌসুম এলেই বাংলাদেশের পাহাড়ি এলাকায় একটি দুর্যোগ হতে দেখা যায়, সেটি হলো পাহাড় ধস। একদিকে অবৈধভাবে পাহাড় কেটে ঝুঁকিপূর্ণ ঢালে বসতি নির্মাণ অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ভারী বৃষ্টি। এই দুই কারণ মিলিয়ে প্রতি বছর ধস নামে পাহাড়ে, ঘটে প্রাণহানি। এবার কক্সবাজারের পেকুয়ায় পাহাড় ধসে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন- স্থানীয় সরওয়ার আলমের স্ত্রী মমতাজ বেগম, তার মেয়ে ময়না ও ছেলে তোহা।
শনিবার (১৭ অগাস্ট) দিবাগত রাত ৩টার দিকে পেকুয়ার শিলখালী ইউনিয়নের জারুল বুনিয়া সেগুনবাগিচা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সরওয়ারের বাড়ি পাহাড়ের কিনারায়। রাতে ভারী বৃষ্টির ফলে পাহাড় ধসে পড়ে তার বাড়িতে। এতে মাটিচাপা পড়ে তার স্ত্রী এবং দুই শিশু সন্তান। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে গত ১১ জুলাই কক্সবাজার শহরে পৃথক পাহাড় ধসের ঘটনায় দুই নারী ও এক শিশুসহ তিনজনের মৃত্যু হয়।
বাংলাদেশে প্রতি বর্ষা মৌসুমেই পাহাড় ধসের ছোট-বড় ঘটনা ঘটে। গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন বলছে, দেশে প্রতি বছর গড়ে পাহাড় ধসের মতো দুর্ঘটনা ঘটে ২১টি। এসব দুর্ঘটনায় গড়ে ২৬ জনের প্রাণহানি ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের গত নয় বছরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এ সময়ের মধ্যে দেশে মোট পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে ১৯২টি। মারা গেছে ২৩৫ জন। গুরুতর আহত হয়েছে ৪৫৯ জন। আর পাহাড় ধসের দুর্ঘটনাগুলো চট্টগ্রামে বেশি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পাহাড় ধসের মতো দুর্ঘটনা মূলত আর্থসামাজিক, পরিবেশগত ও রাজনৈতিক সমস্যারই প্রতিফলন। সাধারণ মানুষ তীব্র আর্থিক সংকট থেকে নিজের একমাত্র মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে বেছে নিচ্ছেন পাহাড় কেটে তৈরি করা ঘরকে। বছরের পর বছর ধরে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটলেও এসব বাসিন্দারা অন্য কোথাও সরতে চায় না। তার বড় কারণ হচ্ছে আর্থসামাজিক দুর্বলতা। এ ধরনের দুর্বলতার কারণে ঝুঁকি নিয়েও মানুষ পাহাড়ে বসবাস করছে। ছিন্নমূল এসব মানুষের কোথাও যাওয়ার জায়গা না থাকায় তারা কম খরচে এমন ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় বসবাস করছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্থানীয় ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে এ ঘরগুলো তৈরি করেন। পার্বত্য তিন জেলা, চট্টগ্রাম এমনকি শহরেও পাহাড় ঘেঁষে তৈরি করা অনেক বসতি রয়েছে ঝুঁকিতে। একদিকে দুর্বল পাহাড় অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনে দীর্ঘসময় ভারী বৃষ্টিপাতে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটছে নিয়মিত।
সাম্প্রতিক সময়ে, ২০১৭ সালের ১৩ জুনের রাতে টানা তিনদিনের ভারী বৃষ্টি আর বজ্রপাতে রাঙ্গামাটিতে ঘটে যায় স্মরণ কালের পাহাড় ধসের ঘটনা। ভয়াবহ পাহাড় ধসের ঘটনায় ৫ জন সেনা সদস্যসহ নারী পুরুষ ও শিশুসহ ১২০ জনের প্রাণহানী ঘটে।

তবে সেই মর্মান্তিক ঘটনার পরও রাঙামাটিতে সেই শঙ্কা জাগে প্রতি বর্ষায়। এবার জুলাই মাসে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানে কয়েকদিন ধরে মাঝারি ও ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকে। এতে পাহাড় ধসের পূর্বাভাস দেয় আবহাওয়া অধিদপ্তর।
ডেস্ক রিপোর্ট 




















