পরিবেশ সংরক্ষণ প্রশ্নে উন্নয়ন-শিল্পায়নের বেলায় ‘যদি’, ‘তবে’, ‘কিন্তু’র রীতি থেকে বের হয়ে পরিবেশের স্বার্থকে সর্বাগ্রে প্রাধান্য দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। উপদেষ্টা বলেন, ‘উন্নয়ন করলে পরিবেশের ক্ষতি হবেই’—এমন মানসিকতা বদলাতে হবে।
সোমবার (৫ মে) রাজধানীর হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও-এ অনুষ্ঠিত কৃষি উৎপাদন ও প্রাণ-প্রকৃতি সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। দ্বিতীয় অধিবেশনটির শিরোনাম ছিল ‘কৃষি উৎপাদন ও প্রাণ-প্রকৃতি’।
এই অধিবেশনে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘উন্নয়ন, শিল্পায়নের অনুমোদনের ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরের ‘না’ বলার অধিকারটা থাকতে হবে। নানা শর্ত দিয়ে পরিবেশের জন্য হুমকি হবে এমন কিছুর অনুমোদন দেয়া যাবে না। শিল্প থেকে হওয়া দূষণ বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে গেলে বলা হয়, হাজার হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হুমকিতে পড়বে। কিন্তু এসব কারখানার কারণে যেসব নদী দূষিত হচ্ছে সেসব নদীর উপর নির্ভরশীল লক্ষ মানুষের জীবিকা ও সুপেয় পানির নিরাপত্তার বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যায়।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের টেবিলে কেবল অনেক পরিমাণে খাদ্য পৌঁছালেই হবে না, সেটার মান নিয়েও ভাবতে হবে। ঢাকা শহরের মানুষকে পানি খাওয়ার জন্য মেঘনা নদীতে যেতে হচ্ছে। ওখানে আবার বালু ও সিমেন্ট কারখানা থাকায় আলাদা করে টাস্কফোর্স করতে হচ্ছে। আমাদেরকে এসব বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে।’
দূষণে মাটি-পানি মান হারাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে পরিবেশ সংরক্ষণ এবং কৃষকের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, কৃষিজমির মাটি কেটে ইটভাটায় সরবরাহ করা হচ্ছে, যা কার্যত দস্যুতা। কৃষিজমি সুরক্ষা আইন পাশ করতে কাজ করছে সরকার। না হলে বাংলাদেশে কৃষিজমি থাকবেই না। অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহারে মাটি দূষিত হচ্ছে। আমাদের এখনই জৈব সার উৎপাদন ও বিতরণে উদ্যোগ নিতে হবে। বহুজাতিক কোম্পানির চাপ উপেক্ষা করে আমাদের নিজস্ব কৃষি মডেল গড়ে তুলতে হবে।
পরিবেশ সংরক্ষণে রাষ্ট্র ও ব্যক্তি পর্যায়ে ভোগের ধরণ পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা একদিকে বিদ্যুৎ সংকট নিয়ে অভিযোগ করি, অন্যদিকে অহেতুক এসি-লাইট ব্যবহার করি। কনজাম্পশন প্যাটার্ন এবং পরিবেশ—এই দুইকে একসাথে বিবেচনায় আনতে হবে।’
দৈনিক বণিক বার্তার আয়োজনে অনুষ্ঠিত কৃষি উৎপাদন ও প্রাণ-প্রকৃতি সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে আরও বক্তব্য রাখেন- অর্থনীতিবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ; মাল্টিমোড গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু; আইইউবিএটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুর রব; ইস্ট কোস্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজম জে চৌধুরী; গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তোফাজ্জল ইসলাম এবং বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের সহসভাপতি খুশি কবীর প্রমুখ।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন দৈনিক বণিক বার্তার সম্পাদক ও প্রকাশক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ। সম্মেলনে কৃষি বিশেষজ্ঞ, গবেষক, পরিবেশবিদ ও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।