বাংলাদেশে কোটা সংস্কার থেকে সরকার পতনের আন্দোলনে ইন্টারনেট বন্ধ রাখার অভিযোগ রয়েছে। খবরটি বিশ্বগণমাধ্যমেও ফলাও করে প্রচারিত হয়েছে। এর মধ্যেই দক্ষিণ এশিয়ার আরেকটি দেশ পাকিস্তানেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের অনুসারীদের সোচ্চার হয়ে ওঠা এবং স্বাধীনতাকামী বেলুচ তরুণদের বিক্ষোভ দমনে ইন্টারনেটে সরকারি হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে।
গতকাল রোববার ডিজিটাল সেবা বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকারকর্মী উসামা খিলজি এএফপিকে বলেন, ‘সরকার ফায়ারওয়াল ও কনটেন্ট ফিল্টারিং সিস্টেম বসিয়েছে। এ কারণে ইন্টারনেটের গতি কমে গেছে। নাগরিকদের ওপর নজরদারি বাড়াতে ও বিরোধী মতের কণ্ঠকে রোধ করতেই সরকার এসব পদক্ষেপ নিয়েছে। বিশেষ করে দেশের রাজনীতিতে নিরাপত্তা বাহিনীর নাক গলানো নিয়ে যাতে কেউ কথা বলতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে চায় সরকার।’
উসামা খিলজি আরও বলেন, ‘পাকিস্তান সরকার হোয়াটসঅ্যাপে আড়িপাততে উঠেপড়ে লেগেছে। কারণ হোয়াটসঅ্যাপে ‘এন্ড টু এন্ড’ এনক্রিপশন থাকায় ব্যবহারকারীরা গোপনীয়তা বজায় রেখেই বার্তা আদান–প্রদান করতে পারে, সেখানে তৃতীয়পক্ষের আড়ি পাতার সুযোগ নেই।’
মানবাধিকারকর্মী ও ডিজিটাল বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নে সামরিক বাহিনী ও টেলিকমিউনিকেশন নিয়ন্ত্রক সংস্থা সহায়তা করছে বলে ধারণা করছেন তারা।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মাদ আসিফ। তিনি বলেন, ‘আমরা একটি রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। খুব শিগগিরই আপনারা সকল সুযোগ সু্বিধা ফিরে পাবেন।’
অবশ্য নাগরিকদের নিরাপত্তা, হুমকি ও মানহানি ঠেকানোর জন্য ইন্টারনেটে কিছু নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হবে বলে স্বীকার করেন তিনি। সেই নিয়ন্ত্রণ আরোপ ফায়ারওয়ালের মাধ্যমে হবে কি না, সে ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলেননি প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, ‘ডিজিটাল সন্ত্রাস’ রোধে এসব উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া চলমান বিতর্কের মধ্যে দেশটির তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী শাজা ফাতিমা খাজা বলেছেন, ‘ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়নি বা ইচ্ছা করে গতিও কমিয়ে দেওয়া হয়নি। ভিপিএন ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার কারণেই ইন্টারনেটের গতি কমে গেছে। সরকার নির্দিষ্ট কিছু অ্যাপ ব্লক করে দিলে মানুষজন ভিপিএন ব্যবহার করতে শুরু করে। এটি স্থানীয় ইন্টারনেট সার্ভিসগুলোকে বাইপাস করে এবং গতি ধীর করে দেয়।’ ভিপিএন ব্যবহার করলে মোবাইল ইন্টারনেটের গতিও কমে যায় বলে দাবি করেছেন তিনি।
এদিকে পাকিস্তানের খ্যাতিমান সাংবাদিক হামিদ মীর ইসলামাবাদের হাইকোর্টে সরকারের ফায়ারওয়াল বসানোর উদ্যোগকে চ্যালেঞ্জ করে একটি রিট আবেদন করেছেন। আজ ওই আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, মূলত তরুণ ও প্রযুক্তিবান্ধব ভোটারদের কাছে জনপ্রিয় পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সমর্থকদের ঠেকাতেই এসব উদ্যোগ। একই সঙ্গে স্বাধীন বেলুচিস্তান আন্দোলন তুঙ্গে ওঠায় ইন্টারনেটে লাগাম পরাতে ব্যস্ত দেখা যাচ্ছে সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন সরকারকে।
ডেস্ক রিপোর্ট 



















