গবেষকরা প্রজাপতির ওড়ার পদ্ধতি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এমন রোবটিক ডানা তৈরি করেছেন, যা কোনো ব্যাটারি বা ইলেকট্রনিক্স ছাড়াই কেবল চৌম্বক ক্ষেত্র ব্যবহার করে কাজ করে।
মোনার্ক প্রজাপতির বিশেষ বৈশিষ্ট্য, যেমন দীর্ঘ দূরত্বে উড়ে যাওয়ার সক্ষমতা এবং শক্তি সাশ্রয়ী উড়ানের পদ্ধতি, এ ডানার ডিজাইন প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। গবেষকদের মতে, পরিবেশ পর্যবেক্ষণ, দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে উদ্ধার কার্যক্রম এবং চিকিৎসা প্রযুক্তিতে এই উদ্ভাবন কাজে লাগতে পারে।
মোনার্ক প্রজাপতি কানাডা থেকে মেক্সিকো পর্যন্ত হাজারো কিলোমিটার ভ্রমণ করে। এদের ডানার নমনীয় গঠন এবং কার্যকরী ওড়ার কৌশল গবেষকদের অনুপ্রাণিত করেছে এমন চৌম্বকীয় রোবোটিক ডানা তৈরি করতে।
‘টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অফ ডার্মস্টাড’ এবং ‘হেলমহোল্টজ সেন্টার ড্রেসডেন-রোসেনডর্ফ’-এর গবেষকরা একত্রে ক্ষুদ্র চৌম্বক কণা দিয়ে তৈরি নমনীয় প্লাস্টিক ব্যবহার করে এই ডানা ডিজাইন করেছেন। বাইরের চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রভাবে ডানাগুলো বেঁকে গিয়ে প্রজাপতির মতো উড়তে পারে।
ছবি: গবেষণাপত্র থেকে নেওয়া
এই ডানা তৈরি করা একটি চ্যালেঞ্জিং প্রক্রিয়া ছিল। গবেষকরা থ্রিডি প্রিন্টিংয়ের মাধ্যমে ১২টি আলাদা নকশা পরীক্ষা করেন, যার মধ্যে প্রজাপতির ডানার মতো শিরার কাঠামোও ছিল। লক্ষ্য ছিল, মোনার্ক প্রজাপতির গুণাবলী কীভাবে ডানার নমনীয়তা এবং দক্ষতায় ভূমিকা রাখে তা নির্ণয় করা।
গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে বিজ্ঞান জার্নাল ‘অ্যাডভান্সড ইন্টেলিজেন্ট সিস্টেম’-এ, যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, বড় আকারের ডানাগুলোকে বাঁকানো এবং অভিযোজন করা তুলনামূলক সহজ।
এই ডানার সম্ভাব্য ব্যবহার অনেক। এটি পরিবেশগত পর্যবেক্ষণে, যেমন পরাগরেণু গণনা বা বাতাসের মান পরিমাপের কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। ছোট আকার ও শক্তিশালী কাঠামোর কারণে দুর্যোগময় পরিবেশে উদ্ধার কাজেও এটি কার্যকর।
চিকিৎসা ক্ষেত্রেও এর ব্যবহার রয়েছে। বিশেষ করে সূক্ষ্ম টিস্যুতে অস্ত্রোপচারের মতো কাজে সহায়তা করতে পারে এই রোবটিক ডানা।
বর্তমানে ডানাগুলো পরিচালনার জন্য বাইরের চৌম্বক ক্ষেত্র প্রয়োজন। ভবিষ্যতে আরও জটিল নড়াচড়া এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিয়ে গবেষণা চলছে। গবেষকদের আশা, প্রজাপতির উড়ানের কৌশল থেকে অনুপ্রাণিত এই উদ্ভাবন পরিবেশ, চিকিৎসা ও প্রযুক্তিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে পারবে।