উন্নত দেশগুলোতে বন্যপ্রাণী রক্ষায় প্রাণীদেহে ট্র্যাকিং ডিভাইস, মাইক্রোচিপ ইত্যাদি প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়। এখন বাংলাদেশও তার জীববৈচিত্র্যের অস্তিত্ব রক্ষায় এরকম প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করেছে। বন্যপ্রাণীর অবস্থান শনাক্ত ও পাচার সংক্রান্ত তথ্য সহজে পেতে প্রথমবারের মতো বন্যপ্রাণীর দেহে মাইক্রোচিপ স্থাপন করলো বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট (ডব্লিউসিসিইউ)।
এবিষয়টি নিশ্চিত করে পাঠানো এক বার্তায় ডব্লিউসিসিইউ জানিয়েছে:
“বাংলাদেশে বন্যপ্রাণী চোরাচালান প্রতিরোধে একটি নতুন যুগের সূচনা হল। প্রথমবারের মতো ওয়াইল্ডলাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ইউনিট (WCCU) পাচারের চেষ্টা থেকে উদ্ধার করা মুখপোড়া হানুমানের দেহে মাইক্রোচিপ ইমপ্লান্ট বা স্থাপন করেছে, যা দেশের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির নতুন মাত্রা যোগ করল।
প্রযুক্তির উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব
আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২৫ সালে শুরু হওয়া এই উদ্যোগের লক্ষ্য—উদ্ধারপ্রাপ্ত বন্যপ্রাণীর স্থায়ী ও সুনির্দিষ্ট পরিচয় নিশ্চিত করা। মাইক্রোচিপের মাধ্যমে প্রাণীর পরিচয়, অবস্থান, চিকিৎসা ইতিহাস এবং আইনগত তথ্য ট্র্যাক করা সম্ভব হবে, যা পুনঃচোরাচালান ও পরিচয় জালিয়াতি রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
প্রযুক্তির কার্যপ্রণালী
প্রতিটি মাইক্রোচিপ একটি ইউনিক সিরিয়াল নম্বর ধারণ করে। এই নম্বরটি একটি RFID স্ক্যানারের মাধ্যমে সহজেই পড়া যায়। চিপটি প্রাণীর গলার নিচে বা কাঁধের অংশে ইনজেকশন পদ্ধতিতে স্থাপন করা হয় এবং এটি সারা জীবনের জন্য প্রাণীর দেহে থেকে যায়।
ব্যবহৃত চিপ ও খরচ
এই মাইক্রোচিপগুলো UNODC (United Nations Office on Drugs and Crime) কর্তৃক সরবরাহ করা হয়েছে, যা বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী অপরাধ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সহায়ক। প্রতিটি চিপের আনুমানিক খরচ ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা।
সুবিধাসমূহ
স্থায়ী শনাক্তকরণ: পুনরুদ্ধার বা রিলিজকৃত প্রাণী যদি আবার উদ্ধার হয়, তখন চিপের মাধ্যমে তা সহজেই শনাক্ত করা যায়।
আইনি সহায়তা: আদালতে প্রাণীর পরিচয় ও ইতিহাস প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপনযোগ্য।
ট্র্যাকিং ও ব্যবস্থাপনা: পুনর্বাসন, স্থানান্তর বা চিকিৎসার সময় প্রাণীর সঠিক তথ্য জানা যায়।
আন্তর্জাতিক সংযোগ: SAWEN ও CITES-এর মতো সংস্থার সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান সহজ হয়।
সফলতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
প্রাথমিক ভাবে ২০২৪ সাল থেকে শুরু হলেও ২০২৫ সালে এই প্রথমবার মাইক্রোচিপ বাস্তবে প্রয়োগ করা হয়েছে। কালোমুখ হনুমানের দেহে সফলভাবে চিপ স্থাপনের মধ্য দিয়ে এটি একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করল। ভবিষ্যতে দেশের অন্যান্য উদ্ধার কেন্দ্র, সাফারি পার্ক এবং রেঞ্জ অফিস পর্যায়ে এই প্রযুক্তির বিস্তারের পরিকল্পনা রয়েছে।”
ডব্লিউসিসিইউ’র ভাষ্যমতে, ‘বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের ইতিহাসে এই মাইলফলক উদ্যোগ নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করল।’