শ্রাবণ মেঘের দিন শেষ হতেই ভাদ্র মাসের শুরুতেই পূর্ণিমার ভরা কাটালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসছে মেঘমালা। গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার বয়ে আনা প্রবল বারি বর্ষণে বরিশাল বিভাগ সয়লাব হয়ে গেছে। এ পর্যন্ত বরিশাল মহানগরীতে প্রায় ৮০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এরমধ্যে সকাল ৬টা থেকে ৯টার মধ্যেই ৫৭ মিলি বৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।
লাগাতার বর্ষণের বরিশাল মহানগরী জলমগ্ন হওয়ায় জনজীবনে চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে। মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র সদর রোড ও ফজলুল হক এভিনিউসহ পুরো নগরীর পথঘাট পানিতে সয়লাব। অথচ নগরীর পাশে বহমান কির্তনখোলাসহ প্রায় সব নদ-নদী বিপদ সীমার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাইড্রোলজি বিভাগ জানিয়েছে।
সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বরিশালসহ উপকূলীয় এলাকাজুড়ে অতি ভারী বর্ষণে সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া বিভাগ। তবে বরিশালসহ এ অঞ্চলের সব নদী বন্দরকে এক নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। পায়রা বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেতের আওতায় রাখা হয়েছে। বরিশাল মহানগরী সহসমগ্র দক্ষিণাঞ্চল দূর্যোগপূর্ণ আবাহাওয়া অব্যাহত আছে। মহানগরীর রাস্তাঘাটেও তেমন যানবাহন চলাচল ছিলনা।

ভাদ্রের শুরুতেই এ বর্ষণ জনজীবনকে বিপর্যস্ত করলেও দক্ষিণাঞ্চলের আমন আবাদে যথেষ্ঠ সহায়ক পরিবেশ তৈরী করবে বলে কৃষিবিদগণ আশাবাদী। তবে বৃষ্টির সাথে উজানের ঢল ফসলি জমি প্লাবনের কবলে পড়ারও আশংকা রয়েছে। গত কয়েকটি বছর ধরেই ভাদ্রের বর্ষণ ও প্লাবন ১৪ লাখ টন খাদ্য উদ্বৃত্ত দক্ষিণাঞ্চলের আমন ধান নিয়ে কৃষকের দুঃশ্চিন্তা বাড়ছে।
আবহাওয়া বিভাগের মতে; দেশের দক্ষিণাঞ্চলসহ সুস্পষ্ট লঘুচাপটি দূর্বল হয়ে একই এলাকায় লঘুচাপ আকারে অবস্থান করছে। মৌসুমী বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ ভারতের পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহারে অবস্থান করছে। লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল বাংলাদেশ হয়ে ভারতের আসাম পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছে। মৌসুমী বায়ু দক্ষিণাঞ্চলসহ সারা দেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে। এরই প্রভাবে বরিশালসহ উপকূলীয় এলাকাজুড়ে বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাসে আরো অন্তত ৫দিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে চলতি বছরের শুরু থেকেই বরিশালসহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলজুড়েই বৃষ্টির হাহাকার ছিল। এবার বছরের শুরু থেকে প্রথম ৪ মাসই বরিশালে বৃষ্টিপাতের ব্যাপক ঘাটতির পরে মে মাসের শেষভাগে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫০ ভাগ বেশী বৃষ্টিপাত হয়। কিন্তু পরের দু’মাসেও পুনরায় বৃষ্টির ঘাটতি দেখা দেয়। এমনকি বৃষ্টির অভাবে এবার আউশের বীজতলা ও রোপা আউশের আবাদে ব্যাপক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়। দেশের প্রায় ৩৫ ভাগ আউশ আবাদ এলাকা বরিশাল কৃষি অঞ্চলে এবার লক্ষ্যমাত্রার ৬০ ভাগও অর্জিত হয়নি।
ডেস্ক রিপোর্ট 





















