শিম্পাঞ্জিদের সাথে এক নারীর বন্ধুত্ব-মায়াভরা ছবি অনেকেই দেখেছেন হয়তো। শিম্পাঞ্জিদের যিনি বন্ধু বানিয়েছিলেন কিংবা শিম্পাঞ্জিরাই তাকে আপন করে নিয়েছিল। লন্ডনে জন্মানো এই নারীর জীবনের বেশিরভাগ কেটেছে আফ্রিকার জঙ্গলে, শিম্পাঞ্জিদের চিনতে এবং মানুষদের এই প্রাণীটিকে আরও ভালো করে চেনাতে। তাঁর নাম জেন মরিস গুডঅল, যিনি গত ১ অক্টোবর মারা গেছেন।
প্রাণীর প্রতি ভালোবাসার অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করা এই নারীর মৃত্যুতে তাঁর জীবন ও অবদানের কথা স্মরণ করা হচ্ছে। তানজানিয়ার গোম্বে অরণ্যে শিম্পাঞ্জিদের ঘনিষ্ঠ পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার কারণে তিনি শুধু বিজ্ঞানী নন, বরং মানবতা ও পরিবেশ রক্ষার অনন্য প্রতীক।

ছোটবেলায় প্রাণী এবং তাদের আচরণ পর্যবেক্ষণে বেশি সময় কাটে ছোট্ট জেনের। স্কুল শেষ করার পর অর্থাভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারায় তিনি টাইপিং, শর্টহ্যান্ড ও বুককিপিং শিখে উপার্জিত অর্থ জমিয়ে আফ্রিকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নেন।
১৯৫৭ সালে কেনিয়ায় তিনি বিশ্বখ্যাত জীবাশ্মবিদ ও নৃতত্ত্ববিদ ড. লুই লিকির সঙ্গে পরিচিত হন। তাঁর সহায়তায় তিনি ১৯৬০ সালে তৎকালীন টাঙ্গানিকার গোম্বে স্ট্রিম ন্যাশনাল পার্কে শিম্পাঞ্জিদের ওপর তাঁর যুগান্তকারী গবেষণা শুরু করেন। জেনের কাজের গুরুত্ব বুঝে লিকি তাঁকে উচ্চতর শিক্ষার জন্য প্রস্তুত করেন। ১৯৬২ সালে তাঁর সহায়তায় কোনো স্নাতক ডিগ্রি ছাড়াই জেন গুডঅল কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডির সুযোগ পান।

জেন গুডঅল আফ্রিকার তানজানিয়ার গোম্বে অরণ্যে শিম্পাঞ্জিদের ওপর ৬০ বছর ধরে গবেষণা করেন। তিনি প্রমাণ করেছেন, শিম্পাঞ্জিরা মানুষের মতো যন্ত্র তৈরি ও ব্যবহারে সক্ষম, আবেগ প্রকাশ করতে পারে এবং পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন গড়ে তোলে। তাঁর গবেষণা শুধু প্রাণিজগৎ নয়, মানব আচরণ বোঝার ক্ষেত্রেও নতুন দিক উন্মোচন করে। পরে তিনি পরিবেশ সংরক্ষণ, বন্য প্রাণী রক্ষা এবং মানবতার কল্যাণে কাজ করে বিশ্বব্যাপী সম্মান অর্জন করেন।
১৯৭৭ সালে জেন গুডঅল নিজের নামে একটি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন, যার কাজ ছিল শিম্পাঞ্জি নিয়ে গবেষণা ও সংরক্ষণ।

২০০২ সালে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে তাকে ‘শান্তি দূত’ উপাধি দেওয়া হয়। এছাড়া তিনি চিকিৎসা গবেষণা ও চিড়িয়াখানায় প্রাণীর ব্যবহার বিরোধী প্রচারণা চালিয়েছেন। ১৯৯১ সালে তার ইনস্টিটিউট ‘রুটস অ্যান্ড শুটস’ প্রকল্প চালু করে, যা বর্তমানে প্রায় ১০০টি দেশে তরুণদের নেটওয়ার্ক হিসেবে সক্রিয়। লাখ লাখ তরুণ এর মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষা, প্রাণীর কল্যাণ ও মানবিক কার্যক্রমে যুক্ত।
৮০ বছর বয়স পেরিয়েও গুডঅলের কর্মচাঞ্চল্য অব্যাহত থাকে। মহামারির সময় তিনি ‘হোপকাস্ট’ নামে একটি পডকাস্ট চালু করেছিলেন। ২০০৪ সালে তিনি ‘ডেম’ উপাধি লাভ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছ থেকে ‘মেডেল অব ফ্রিডম’ পান।
![]()
ড. জেন গুডঅলের অবদান শুধু প্রাইমেট গবেষণায় সীমাবদ্ধ থাকেনি; বিশ্বব্যাপী প্রকৃতি সংরক্ষণ ও পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধিতে তার অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
প্রকৃতিবার্তা ডেস্ক 




















