‘সবুজে সাজাই বাংলাদেশ’ শিরোনামে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির সফল বাস্তবায়ন করায় দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা প্রকৃতি ও জীবন ক্লাবগুলোকে পুরস্কৃত করলো প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন। একই সঙ্গে প্রাণ-প্রকৃতি নিয়ে প্রবন্ধ লেখা প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের হাতে তুলে দেয়া হলো পুরস্কার। প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় খুবই অল্প নম্বরের ব্যবধানে প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছেন যথাক্রমে- নূরে জান্নাত, মো. ফাহাদ হোসেন ফাহিম ও শাফায়াত তৌসিফ।
আজ শনিবার (২১ ডিসেম্বর) সকালে চ্যানেল আই প্রাঙ্গনে এক বর্ণাঢ্য আয়োজনের মাধ্যমে ‘সবুজে সাজাই বাংলাদেশ’ ও ‘প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা ২০২৪’-এর বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়।
জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় মূল আনুষ্ঠানিকতা। এরপর প্রদর্শিত হয় প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন নিয়ে একটি তথ্যচিত্র। এতে প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের নানা উদ্যোগ-কর্মকাণ্ড এবং এর নানা অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের বিশাল কর্মযজ্ঞ তুলে ধরা হয়।
তথ্যচিত্রে দেশের প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষা এবং বিদেশের প্রকৃতি-জীববৈচিত্র্যের সঙ্গে বাংলাদেশের দর্শকদের পরিচয় করিয়ে দেয়া ব্যক্তিত্ব মুকিত মজুমদার বাবুকে দেখা যায় দেশ-বিদেশের নানা দুর্গম-প্রত্যন্ত এলাকায় ছুটে বেড়াতে। তথ্যচিত্রটি শেষ হতেই তাই মঞ্চে ডেকে নেয়া হয় সবার পরিচিত এই প্রকৃতিবন্ধুকে।
মুকিত মজুমদার বাবু বলেন, ‘প্রকৃতি ও জীবন ক্লাবের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, তরুণদের প্রাণ-প্রকৃতি নিয়ে লেখালেখিসহ আমাদের যাবতীয় কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আসলে প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন দেশের প্রতি কিছুটা হলেও অবদান রেখে চলেছে। প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় আমাদের নতুন সংযোজন। অনেকেই খুব সুন্দর লিখেছেন এবং সুন্দর লেখাগুলোর কারণে বিচারকরা প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় নির্ধারণ করতে বেশ বেগ পেয়েছেন।’

নবম শ্রেণীতে পড়ুয়া অবস্থায় ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া এই বীর মুক্তিযোদ্ধা আরও বলেন,‘বাংলাদেশ ৫৪ বছরে পা রেখেছে, ৫৩ বছরে দেশ অনেকদূর যাওয়ার কথা। কিন্তু যায়নি, নানা ঘাত-প্রতিঘাত এসেছে। যেভাবে অন্যান্য দেশে এগিয়ে গেছে সেটা আমাদেরও হবে যদি যে পরিবর্তন এসেছে তাকে কাজে লাগাতে পারি। প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় তরুণরা চমৎকার লিখেছেন, এরকম সৃজনশীল তারুণ্যের শক্তিই বাংলাদেশকে এগিয়ে নেবে এই প্রত্যাশা করি।’
প্রকৃতি, পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, জলবায়ু পরিবর্তন, দূষণ, টেকসই উন্নয়ন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, জলাভূমি, সবুজ অর্থনীতি, সুনীল অর্থনীতি, প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধান এবং পরিবেশবান্ধব ভ্রমণ নিয়ে ১২০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে প্রবন্ধ আহ্বান করেছিল প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন। এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের নানাপ্রান্ত থেকে শতাধিক প্রবন্ধ জমা পড়ে। সেরা প্রবন্ধ বাছাই করেন অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিরুল হাসান খানের নেতৃত্বে বিচারকমণ্ডলী, তারা সেরা ৩ প্রবন্ধ ও লেখকসহ আরও ১২ জনের লেখা প্রকাশের জন্য বাছাই করেন।

প্রবন্ধ লিখে পুরস্কার জেতা ৩ বিজয়ীকে ডাকা হয় অনুষ্ঠান মঞ্চে। তাদের হাতে তুলে দেয়া হয় ক্রেস্ট ও প্রাইজমানি। পুরস্কার প্রাপ্তির অনুভূতি জানাতে গিয়ে প্রথমস্থান অধিকারকারী সিরাজগঞ্জের নূরে জান্নাত বলেন, ‘প্রকৃতির প্রতি অগাধ ভালোবাসা-হৃদয়ের টান থেকেই প্রবন্ধটা লিখেছি। এই প্রতিযোগিতায় যে প্রবন্ধ লিখেছি এটা আমার লেখা দ্বিতীয় প্রবন্ধ। দ্বিতীয় প্রবন্ধ লিখে প্রথম হতে পেরে সত্যিই আমি ভীষণ আনন্দিত।’
দ্বিতীয়স্থান অধিকার করা মো. ফাহাদ হোসেন ফাহিম বলেন, ‘বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে আমি কৃষি, পরিবেশ-প্রকৃতি নিয়ে আন্তরিকভাবে ভাবি, কাজ করতে এবং লেখালেখির চেষ্টা করি। এই প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় নিজের চিন্তা প্রকাশ করতে পারার স্বীকৃতি পেয়ে আমি খুবই অনুপ্রেরণা পেয়েছি।’
প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান অধিকারকারী শাফায়াত তৌসিফের রয়েছে বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করার অদম্য ইচ্ছা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাফায়াত অকপটেই জানিয়ে দিলেন, প্রকৃতি-জীববৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করা প্রকৃতিবন্ধু মুকিত মজুমদার বাবু তার অনুপ্রেরণা। শাফায়াত আরও বলেন, ‘আমি বন্যপ্রাণী নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করেছি, বন্যপ্রাণীদের কাছে গিয়ে সব সময় যেন একটা বার্তাই পেয়েছি, বোবা প্রাণীগুলো যেন বলছে ‘আমাদের আবাস নষ্ট করো না, আমাদের বাঁচতে দাও।’
শীর্ষ ৩ জন ছাড়াও প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত সেরা ১২ জন হলেন:মঈন মাহমুদ, মো. মেরাজউদ্দিন, সিদ্দিকা ফেরদৌস, মো. বিল্লাল হোসেন, সাবরুকা মাহাবুব অর্পি, তমালিকা দত্ত, মো. আহাদ, এস এ বিপ্লব, মো. হারুণ অর রশিদ , মো. জাহাঙ্গীর হোসেন নিপূণ , মো. মশিউর রহমান অন্তর ও মো. সেলিম রানা।
দুপুর পর্যন্ত চলা এই অনুষ্ঠানে পুরস্কার বিতরণ পর্ব শেষে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পর্ব। এতে সঙ্গীত পরিবেশন করেন চ্যানেল আইয়ের নিয়মিত শিল্পী ও বাদ্যযন্ত্রীরা। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন চ্যানেল আইয়ের পরিচিত মুখ হয়ে ওঠা দীপ্তি চৌধুরী এবং সাফি আহমেদ।