যদি কোন খাবার খেয়ে বারবার বমি, পাতলা পায়খানা, জ্বর, পেটব্যাথা শুরু হয় তাহলে বুঝতে হবে ফুড পয়জনিং’ হয়েছে। এ সময় অনেকেই এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ফুড পয়জনিং একটি সধারণ ও দৈনন্দিন সমস্যা। অস্বাস্থ্যকর বা জীবাণুযুক্ত খাবার খেলে এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসকের শরণাপন্ন না হয়েও ঘরোয়া উপায়ে সুস্থ হওয়া সম্ভব।
কিছু বিষয় মেনে চললে নিজে নিজেই সেরে উঠা যায়। তবে, অতিরিক্ত পানিশূন্যতা হলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।
ফুড পয়জনিং কেন হয়?
খাবার সঠিকভাবে রান্না না করলে অথবা দূষিত খাবার খেলে ফুড পয়জনিং হতে পারে।
কিছু ক্ষতিকর জীবাণু যেমন ব্যাকটেরিয়া সালমোনেলা, ই. কোলাই, ইত্যাদি খাবারের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে পেটের অসুখ ঘটাতে পারে। আবার কিছু ভাইরাস, পরজীবী বিভিন্ন ভাবে শরীরে প্রবেশ করলে ও হতে পারে। কিছু খাবার প্রাকৃতিকভাবে বিষাক্ত হতে পারে, যেমন কিছু মাশরুম বা সামুদ্রিক মাছ। এছাড়াও, খাবার যদি ঠিকভাবে সংরক্ষণ করা না হয়, তাহলেও তাতে বিষ তৈরি হতে পারে। খাবারের সাথে কিছু রাসায়নিক মিশে গেলে বা খাবারে কীটনাশকের অংশ থাকলে পেটের সমস্যা হতে পারে। যেমন – প্রিজারভেটিভ, রং, স্বাদ বাড়ানোর জিনিস, কীটনাশক ইত্যাদি।
ভুলভাবে খাবার তৈরি:
মাংস, ডিম বা সি-ফুড যদি ভালোভাবে রান্না না করা হয়, তাহলে তাতে জীবাণু বেঁচে থাকতে পারে এবং পেটে গেলে অসুস্থতা হতে পারে। আবার কাঁচা খাবারের সংস্পর্শে আসা ছুরি, চপিং বোর্ড বা হাতের মাধ্যমে জীবাণু অন্য খাবারে লেগে যেতে পারে। একে ক্রস-দূষণ বলে, যা পেটের সংক্রমণ ঘটাতে পারে। এমনকি টয়লেট ব্যবহারের পর ভালোভাবে হাত না ধুলে হাতের জীবাণু খাবারে মিশে যেতে পারে এবং এর থেকেও ফুড পয়জনিং হতে পারে।
ফুড পয়জনিংয়ের সাধারণ লক্ষণ:
১-বমিভাব বা বমি হওয়া
২-পেটে ব্যথা বা ক্র্যাম্প
৩-পাতলা পায়খানা হতে থাকা
৪-জ্বর আসা
৫-পেট ফাঁপা এবং মলদ্বারে ব্যথা, মলে রক্ত বা পুঁজ
৬-মাথা ঘোরা, মাথা ব্যাথা এবং পেশী ব্যাথা
৭-ডিহাইড্রেশন এবং তৃষ্ণা অনুভব করা
৮-দুর্বলতা এবং ক্লান্তি অনুভব করা
৯-প্রস্রাব অল্প হওয়া বা না হওয়া
ঘরোয়া প্রতিকার:
খাবার থেকে বিরতি নিন– পেট খারাপ হলে প্রথম কয়েক ঘন্টা খাবার না খেয়ে পাকস্থলিকে বিশ্রাম দিন।
পানি ও ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংক পানি পান করুন– প্রচুর পানি, ওরস্যালাইন ও ডাবের পানি পান করুন।
সহজপাচ্য খাবার খান – পেট স্বাভাবিক হলে ভাত, টোস্ট ও কলা খাওয়া যেতে পারে।
মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন– চর্বিযুক্ত খাবার, দুধ বা দুধ জাতীয় খাবার, ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল যথাসম্ভব পরিহার করুন।
বিশ্রাম নিন – শরীর সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বিশ্রাম নিন।
ওটিসি ওষুধ না খাওয়ার পরামর্শ – পাতলা পায়খানা দ্রুত বন্ধ করতে ওষুধ না খেয়ে শরীরকে জীবাণু বের করে দিতে দিন।
ফুড পয়জনিং এর ঝুঁকি যাদের:
যদিও যে কারও যে কোন সময় ফুড পয়জনিং হতে পারে, কিন্তু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এর ঝুঁকি ও জটিলতা বেশি হয়ে থাকে।
দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: যাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কম, যেমন এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত ব্যক্তি, যারা ক্যান্সারের চিকিৎসা নিচ্ছেন, যাদের শরীরে অন্য অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয়েছে এঁদের ফুড পয়জনিং হওয়ার সম্ভাবনা বেশি এবং এটি তাদের ক্ষেত্রে মারাত্মক হতে পারে।
গর্ভাবস্থা: গর্ভবতী মহিলাদের শরীরে হরমোনের পরিবর্তন হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা কমে যায়। তাই তাদের ফুড পয়জনিংয়ের ঝুঁকি বেশি থাকে।
বয়স: ছোট বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যখন পুরোপুরি তৈরি হয় না, তখন তাদের এই অসুখের হয়ে থাকে। আবার বয়স্ক মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দূর্বল হয়ে যায়। এই কারণে এই দুই বয়সের মানুষের ফুড পয়জনিংয়ের ঝুঁকি বেশি।
দীর্ঘস্থায়ী রোগ: যাদের আগে থেকে কিছু রোগ আছে, যেমন -ডায়াবেটিস, লিভারের রোগ, কিডনির রোগ। এই রোগ গুলো দীর্ঘস্থায়ী। পেটের প্রদাহজনিত রোগ এসব রোগীদের ফুড পয়জনিং হলে জটিলতা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
চিকিৎসকের কাছে কখন যাবেন?
যদিও ২-১ দিনের মধ্যে এই রোগ ভালো হয়ে যায় তারপরেও অবস্থার উপর বিবেচনা করে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
১-অতিরিক্ত পানিশূন্যতার লক্ষণ যেমন মুখ শুকিয়ে যাওয়া ও তীব্র পিপাসা দেখা দিলে
২-প্রস্রাব কমে যাওয়া বা গাঢ় রঙের প্রস্রাব হলে
৩-হৃদস্পন্দন দ্রুত হলে বা রক্তচাপ কমে গেলে
৪-মাথা ঘোরা বা দুর্বলতা অনুভব করলে
৫-বমি বা মলের সঙ্গে রক্ত আসলে
৬-তিন দিনের বেশি পাতলা পায়খানা চললে পায়।
সহজভাবে বলতে গেলে, যাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কম অথবা যারা আগে থেকে কোনো রোগে ভুগছেন, তাদের ফুড পয়জনিং হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এছাড়াও গর্ভবতী মহিলা ও ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও এই ঝুঁকি বেশি থাকে।