সংবাদ শিরোনাম ::
Logo প্রকৃতির প্রতিশোধ: সংকটে জীববৈচিত্র্য Logo লঘুচাপ, ঘূর্ণিঝড়ের গুঞ্জন! কেমন যেতে পারে মাসের শেষ দিনগুলো, যা বলছে আবহাওয়ার পূর্বাভাস Logo প্রশাসনিক সমন্বয় ও সংস্কার ছাড়া পরিবেশ সংরক্ষণ সম্ভব নয় : পরিবেশ উপদেষ্টা Logo বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগে নারী কোটা বাতিল Logo প্রকৃতির সঙ্গে সুর মিলিয়ে চলার বার্তা নিয়ে এবছরের আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস Logo জাতীয় নির্বাচন, ‘মানবিক করিডোর’, মব সহিংসতা নিয়ে যা বললেন সেনাপ্রধান Logo রিট খারিজ, মেয়র হিসেবে ইশরাককে শপথ পড়ানোর বাধা নেই Logo প্রাক বর্ষায় রাজধানীসহ নানাস্থানে মাঝারি-ভারী বৃষ্টি Logo শিল্পে বিনামূল্যে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন বন্ধে নীতিমালা চূড়ান্ত হচ্ছে : রিজওয়ানা হাসান Logo শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন শপথবাক্য পাঠ করানোর নির্দেশ

বাংলাদেশ উপকূল যেন মা কাছিমদের মৃত্যুফাঁদ

বাংলাদেশ উপকূল যেন মা কাছিমদের মৃত্যুফাঁদ

কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে প্রায় প্রতিদিনই ভেসে আসছে অলিভ রিডলি বা জলপাই রঙের সামুদ্রিক কাছিমের মরদেহ। কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের তথ্যমতে, গত আড়াই মাসে সৈকতের ৫০টির বেশি পয়েন্টে ভেসে এসেছে ২৪০টির বেশি কাছিম। সব কটি অলিভ রিডলে প্রজাতির। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ কাছিমের শরীরে আঘাতের চিহ্ন ও পেটে ডিম ছিল। অর্থাৎ এগুলা মা কাছিম। কক্সবাজার সৈকত ছাড়াও সেন্টমার্টিন, সোনাদিয়া, কুতুবদিয়া সৈকতেও অনেক মৃত কাছিম ভেসে আসছে।

বাংলাদেশের সৈকতগুলোয় বিপুল সংখ্যায় মা কাছিমদের মরদেহ ভেসে আসার কথা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিয়মিত সংবাদমাধ্যমে আসছে। বাংলাদেশে অলিভ রিডলি কাছিমের প্রজনন ক্ষেত্র কক্সবাজারের সোনাদিয়া থেকে সেন্টমার্টিন সমুদ্র উপকূলের সৈকতের বালিয়াড়ি। প্রজনন মৌসুমে (নভেম্বর থেকে মার্চ) এ প্রজাতির মা কাছিম দল বেঁধে হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে বালিয়াড়িতে ডিম পাড়তে আসে। গত দুই দশকে কক্সবাজার সৈকতে কাছিমের ডিম দেওয়ার নিরাপদ স্থান কমে নেমে এসেছে অর্ধেকে।

গত বছরের তুলনায় এ বছর কাছিমের মৃত্যুর হার অস্বাভাবিক। বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের দেয়া তথ্য বলছে, কক্সবাজারের সমুদ্র উপকূলে এবার কাছিমের মৃতদেহ বেশি দেখা যাচ্ছে। অথচ গত বছর (২০২৪ সাল) জানুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলের বিভিন্ন পয়েন্টে ২৯টি মৃত কাছিম পাওয়া গিয়েছিল।

সাগরে নিষিদ্ধ জালে আটকে পড়ে বহু কাছিমের মৃত্যু হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের উপপরিচালক মো. জমির উদ্দিন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ও গবেষক মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ চৌধুরী সংবাদমাধ্যমকে জানান, গত ২৪ ও ২৫ জানুয়ারি দুই দিনে সৈকতে ভেসে এসেছিল ৬৮টি মরা কাছিম। পেটে ডিম থাকে বলে হাজার কিলোমিটার দূর থেকে ছুটে আসা মা কাছিম ক্লান্ত থাকে। সামান্য আঘাতে কাছিমের মৃত্যু ঘটে।

এই মা কাছিমগুলো উপকূলের কাছাকাছি এসে জেলেদের জালে আটকা পড়ছে বা বড় নৌযানের ধাক্কা কিংবা অন্য কোনোভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মারা পড়ছে।

সমুদ্রবিজ্ঞানীরা জানান, অলিভ রিডলি কাছিম সমুদ্রের হাজার হাজার কিলোমিটার পাড়ি দেওয়ার সময় বার্নাকল, ক্রাস্টেসিয়ানের ছোট প্রাণীরা তাদের গায়ে আশ্রয় নেয়। এতে ছোট প্রাণীগুলো শিকারির হাত থেকে রক্ষা পায়। এ ধরনের কাছিম সামুদ্রিক ঘাস, শ্যাওলা, অমেরুদণ্ডী প্রাণী যেমন– জেলিফিশ, পোকামাকড় খেয়ে সমুদ্রের পরিবেশ ঠিক রাখে। কাছিম যখন সৈকতে ডিম পাড়ে, তখন তারা বালু ও গাছপালার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি সরবরাহ করে।

কচ্ছপের প্রজনন ও সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করা নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্টের (নেকম) ২০০৩ সালে করা এক জরিপে দেখা গেছে, কক্সবাজার উপকূলের ৫২ পয়েন্টে সামুদ্রিক মা কাছিম ডিম দিতে আসে। ওই সময় এসব পয়েন্ট মা কাছিমের কাছে অত্যন্ত নিরাপদ পয়েন্ট ছিল। এখন এই সংখ্যা ৩০ থেকে ৩২-এ ঠেকেছে।

নেকমের উপপ্রকল্প পরিচালক ড. শফিকুর রহমান বলেন, মা কাছিমের ডিম দেওয়ার সময় সাধারণত নভেম্বর থেকে শুরু হলেও এখন এপ্রিল-মে পর্যন্ত চলে। রাতের বেলায় নির্জন সৈকতে এসে বালুতে গর্ত তৈরি করে ডিম দেয়। এর পর মা কাছিম ফিরে যায় সাগরে। ৬০ থেকে ৬৫ দিনের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে ডিম থেকে বাচ্চা জন্ম নেয়। এর পর বাচ্চাগুলো গর্ত থেকে বের হয়ে চলে যায় সাগরে।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ১০ থেকে ১২ বছর আগেও গভীর সমুদ্র থেকে দল বেঁধে কক্সবাজার সৈকতে এসে ডিম পাড়ত হক্সবিল, গ্রিন টার্টল ও অলিভ রিডলে—এই তিন প্রজাতির কাছিম । কয়েক বছর ধরে হক্সবিল ও গ্রিন টার্টল আর ডিম পাড়তে আসছে না। দুই বছর ধরে অলিভ রিডলের ডিম পাড়তে আসার সংখ্যাও কমে যাচ্ছে।

আপলোডকারীর তথ্য

Shuvo

প্রকৃতির প্রতিশোধ: সংকটে জীববৈচিত্র্য

বাংলাদেশ উপকূল যেন মা কাছিমদের মৃত্যুফাঁদ

আপডেট সময় ০৭:১২:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ মার্চ ২০২৫

কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে প্রায় প্রতিদিনই ভেসে আসছে অলিভ রিডলি বা জলপাই রঙের সামুদ্রিক কাছিমের মরদেহ। কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের তথ্যমতে, গত আড়াই মাসে সৈকতের ৫০টির বেশি পয়েন্টে ভেসে এসেছে ২৪০টির বেশি কাছিম। সব কটি অলিভ রিডলে প্রজাতির। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ কাছিমের শরীরে আঘাতের চিহ্ন ও পেটে ডিম ছিল। অর্থাৎ এগুলা মা কাছিম। কক্সবাজার সৈকত ছাড়াও সেন্টমার্টিন, সোনাদিয়া, কুতুবদিয়া সৈকতেও অনেক মৃত কাছিম ভেসে আসছে।

বাংলাদেশের সৈকতগুলোয় বিপুল সংখ্যায় মা কাছিমদের মরদেহ ভেসে আসার কথা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিয়মিত সংবাদমাধ্যমে আসছে। বাংলাদেশে অলিভ রিডলি কাছিমের প্রজনন ক্ষেত্র কক্সবাজারের সোনাদিয়া থেকে সেন্টমার্টিন সমুদ্র উপকূলের সৈকতের বালিয়াড়ি। প্রজনন মৌসুমে (নভেম্বর থেকে মার্চ) এ প্রজাতির মা কাছিম দল বেঁধে হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে বালিয়াড়িতে ডিম পাড়তে আসে। গত দুই দশকে কক্সবাজার সৈকতে কাছিমের ডিম দেওয়ার নিরাপদ স্থান কমে নেমে এসেছে অর্ধেকে।

গত বছরের তুলনায় এ বছর কাছিমের মৃত্যুর হার অস্বাভাবিক। বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের দেয়া তথ্য বলছে, কক্সবাজারের সমুদ্র উপকূলে এবার কাছিমের মৃতদেহ বেশি দেখা যাচ্ছে। অথচ গত বছর (২০২৪ সাল) জানুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলের বিভিন্ন পয়েন্টে ২৯টি মৃত কাছিম পাওয়া গিয়েছিল।

সাগরে নিষিদ্ধ জালে আটকে পড়ে বহু কাছিমের মৃত্যু হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের উপপরিচালক মো. জমির উদ্দিন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ও গবেষক মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ চৌধুরী সংবাদমাধ্যমকে জানান, গত ২৪ ও ২৫ জানুয়ারি দুই দিনে সৈকতে ভেসে এসেছিল ৬৮টি মরা কাছিম। পেটে ডিম থাকে বলে হাজার কিলোমিটার দূর থেকে ছুটে আসা মা কাছিম ক্লান্ত থাকে। সামান্য আঘাতে কাছিমের মৃত্যু ঘটে।

এই মা কাছিমগুলো উপকূলের কাছাকাছি এসে জেলেদের জালে আটকা পড়ছে বা বড় নৌযানের ধাক্কা কিংবা অন্য কোনোভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মারা পড়ছে।

সমুদ্রবিজ্ঞানীরা জানান, অলিভ রিডলি কাছিম সমুদ্রের হাজার হাজার কিলোমিটার পাড়ি দেওয়ার সময় বার্নাকল, ক্রাস্টেসিয়ানের ছোট প্রাণীরা তাদের গায়ে আশ্রয় নেয়। এতে ছোট প্রাণীগুলো শিকারির হাত থেকে রক্ষা পায়। এ ধরনের কাছিম সামুদ্রিক ঘাস, শ্যাওলা, অমেরুদণ্ডী প্রাণী যেমন– জেলিফিশ, পোকামাকড় খেয়ে সমুদ্রের পরিবেশ ঠিক রাখে। কাছিম যখন সৈকতে ডিম পাড়ে, তখন তারা বালু ও গাছপালার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি সরবরাহ করে।

কচ্ছপের প্রজনন ও সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করা নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্টের (নেকম) ২০০৩ সালে করা এক জরিপে দেখা গেছে, কক্সবাজার উপকূলের ৫২ পয়েন্টে সামুদ্রিক মা কাছিম ডিম দিতে আসে। ওই সময় এসব পয়েন্ট মা কাছিমের কাছে অত্যন্ত নিরাপদ পয়েন্ট ছিল। এখন এই সংখ্যা ৩০ থেকে ৩২-এ ঠেকেছে।

নেকমের উপপ্রকল্প পরিচালক ড. শফিকুর রহমান বলেন, মা কাছিমের ডিম দেওয়ার সময় সাধারণত নভেম্বর থেকে শুরু হলেও এখন এপ্রিল-মে পর্যন্ত চলে। রাতের বেলায় নির্জন সৈকতে এসে বালুতে গর্ত তৈরি করে ডিম দেয়। এর পর মা কাছিম ফিরে যায় সাগরে। ৬০ থেকে ৬৫ দিনের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে ডিম থেকে বাচ্চা জন্ম নেয়। এর পর বাচ্চাগুলো গর্ত থেকে বের হয়ে চলে যায় সাগরে।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ১০ থেকে ১২ বছর আগেও গভীর সমুদ্র থেকে দল বেঁধে কক্সবাজার সৈকতে এসে ডিম পাড়ত হক্সবিল, গ্রিন টার্টল ও অলিভ রিডলে—এই তিন প্রজাতির কাছিম । কয়েক বছর ধরে হক্সবিল ও গ্রিন টার্টল আর ডিম পাড়তে আসছে না। দুই বছর ধরে অলিভ রিডলের ডিম পাড়তে আসার সংখ্যাও কমে যাচ্ছে।