মানুষের সীমাহীন লোভের নৃশংসতা দেশের উদ্ভিদ ও প্রাণী জগতের ওপর নতুন নয়। তবে এবারের একটি খবর যেন মানুষের কুটিল কৌশলের নতুন এক রূপ হাজির করলো। বাকল তুলে ফেলে কৌশলে গাছ মেরে ফেলার খবর পাওয়া গেল খাগড়াছড়ি থেকে। বৃক্ষের বিরুদ্ধে এমন নিষ্ঠুর লোভের কথা উঠে এসেছে ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের অনলাইন সংবাদমাধ্যমে। এতে জানা গেছে, খাগড়াছড়িতে গত কয়েক বছরে গাছের বাকল তুলে অন্তত দুই শতাধিক পূর্ণবয়স্ক বৃক্ষ মেরে ফেলা হয়েছে। কৌশলে গাছ হত্যা নিয়ে ইতোমধ্যে নানা সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলেও বাকল তোলা চলছেই।
ইন্ডিপেনডেন্টটিভি অনলাইনের খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি সমির মল্লিকের বরাতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে:
“খাগড়াছড়িতে সড়কের পাশে গাছের বাকল তুলে কৌশলে মেরে ফেলা হচ্ছে রেইন-ট্রি বা বিলাতি শিরিষ গাছ। সড়ক ও জনপদ বিভাগের মালিকাধীন এসব বৃক্ষ অভিনব পদ্ধতিতে মেরে ফেলা হলেও এ ঘটনায় জড়িত কাউকে শনাক্ত করা হয়নি।
খাগড়াছড়ি-পানছড়ি ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কে সারি সারি ছায়াদানকারী রেইন-ট্রি। পথচারীদের ছায়া দেওয়া ও তাপমাত্রার প্রাকৃতিক নিয়ন্ত্রণ রাখা এসব বৃক্ষ সুকৌশলে মেরে ফেলা হচ্ছে। রাতে গাছের ছাল তুলে নেওয়ায় ধীরে ধীরে বৃক্ষগুলো মারা যেতে শুরু করে। বাকল তুলে নিলে গাছের খাদ্য গ্রহণের প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। এতে গাছগুলো শুকিয়ে ছয় মাস থেকে এক বছরের মাথায় মারা যায় বলে মনে করেন খাগড়াছড়ির বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. ফরিদ মিঞা।
মো. ফরিদ মিঞা বলেন, ‘গাছের বাকল তুলে নেওয়াকে গার্ডলিং বলা হয়। এতে গাছ ক্যাম্বিয়াম লেয়ারের মাধ্যমে মাটি থেকে খাবার গ্রহণ করতে পারে না। গাছটি খাদ্যাভাবে শুকিয়ে যেতে শুরু করে এবং এক সময় মারা যায়।’
গত কয়েক বছর ধরে খাগড়াছড়ির পানছড়ি, দীঘিনালাসহ বিভিন্ন সড়কে গাছের বাকল তুলে নেওয়ার ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করতে পারেনি সড়ক ও জনপদ বিভাগ। গাছ কাটা বন্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সংস্থাটি। বৃক্ষ মেরে ফেলার ঘটনায় গত সপ্তাহে খাগড়াছড়ির পানছড়ি, দীঘিনালা ও সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের সড়ক বিভাগের আওতাধীন বেশকিছু গাছের বাকল তুলে গাছগুলো মেরে ফেলা হয়েছে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। আশা করছি, দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে সড়কের গাছ কেটে ফেলার ঘটনায় অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল। তিনি বলেন, ‘সদর, পানছড়ি ও দীঘিনালা এই তিন থানায় আমরা সাধারণ ডায়েরি গ্রহণ করেছি। এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।’
পরিবেশ সুরক্ষা ও বাকল তুলে বৃক্ষ হত্যা বন্ধে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এ ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড় না দেওয়ার পাশাপাশি গাছ কাটা বন্ধে সচেতনতা হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।”