সংবাদ শিরোনাম ::
Logo পাকিস্তানের রাস্তায় নারী-শিশুর ওপর সিংহের আক্রমণ, কিন্তু কিভাবে? Logo মূল্যস্ফীতির হার কমে ৮.৪৮ শতাংশে, ২৭ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন Logo ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে তিনজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪৯২ Logo বাংলাদেশকে বিশ্বমঞ্চে নিয়ে যেতে চান ঋতুপর্ণা Logo যে কারণে চুম্বন দৃশ্যে অভিনয় করেন না সালমান খান Logo যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৮২, নিখোঁজ ৪১ Logo ক্লাইমেট চেইঞ্জ ট্রাস্টকে শক্তিশালী করতে ১০বছর মেয়াদি স্ট্রাটেজিক প্ল্যান প্রণয়ন করা হবে Logo সন্তান আছে প্রমাণ করতে পারলে ২০ হাজার ডলার পুরস্কার দেবেন তানজিন তিশা Logo এসএসসির ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের তারিখ ঘোষণা Logo সাগরে লঘুচাপ, তিন বিভাগে ভারী বৃষ্টির আভাস, ভূমিধসের আশঙ্কা

বায়ুদূষণ ও শিশুর স্বাস্থ্য: প্রজন্মের ভয়াল ভবিষ্যৎ উঠে এলো গবেষণায়

বায়ুদূষণ ও শিশুর স্বাস্থ্য: প্রজন্মের ভয়াল ভবিষ্যৎ উঠে এলো গবেষণায়

অল্প বয়সে বায়ু দূষণের সংস্পর্শে আসা শিশুদের ভবিষ্যতে, বিশেষ করে কৈশোরের সময়ে, স্বাস্থ্যগত সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এমন তথ্যই উঠে এসেছে সম্প্রতি ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের (UCL) এক গবেষণায়।

২০০০ থেকে ২০০২ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্যে জন্ম নেওয়া প্রায় ৯,০০০ শিশুর তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়, যারা “মিলেনিয়াম কোহর্ট স্টাডি” নামক এই গবেষণায় অংশ নিয়েছিল।

ফলাফল বলছে, যেসব শিশু দুই থেকে চার বছর বয়সে দূষিত এলাকায় বেড়ে উঠেছে, তাদের ১৭ বছর বয়সে স্বাস্থ্যের অবস্থা খারাপ হওয়ার আশঙ্কা প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বেশি।

গবেষণায় আরও দেখা যায়, জাতিগতভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিশু এবং দরিদ্রপাড়ার বাসিন্দারা তুলনামূলকভাবে বেশি পরিমাণে বায়ুদূষণের শিকার হয়।
এর ফলে তাদের দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি ও জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতাও বেশি।

গবেষণার প্রধান লেখক ড. গারগো বারানই বলেন, “এই গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, এটি একটি জাতীয় প্রতিনিধি গবেষণা। তাই এর ফলাফল যুক্তরাজ্য জুড়ে প্রযোজ্য। পাশাপাশি, আমরা জন্ম থেকে প্রায় ২০ বছর বয়সীদের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করতে পেরেছি।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের কাছে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ যে বিষয়টি উঠে এসেছে, তা হলো বিভিন্ন সামাজিক ও জাতিগত শ্রেণির শিশুদের মধ্যে বায়ুদূষণের এক বিরাট বৈষম্য। এই বৈষম্যটা পুরো শৈশবকাল জুড়েই বজায় থাকে।”

বারানই ব্যাখ্যা করেন, “সংখ্যালঘুদের মধ্যে বায়ুদূষণের মাত্রা বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ হলো, তারা সাধারণত শহুরে এবং তুলনামূলকভাবে বেশি বঞ্চিত এলাকায় বসবাস করে। ক্ষুদ্র বায়ু কণাগুলো শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। যা রক্তপ্রবাহের ভেতর দিয়ে মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। এতে করে শরীরের প্রায় প্রতিটি অঙ্গেই এর প্রভাব পড়ে।”

তিনি বলেন, “এই গবেষণা থেকে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সামনে এসেছে। প্রথমত, তিন থেকে ছয় বছর বয়স পর্যন্ত সময়টিকে বায়ুদূষণের জন্য একটি ‘সংবেদনশীল সময়’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, বঞ্চিত ও সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে বায়ুদূষণের যে বৈষম্য, তা দীর্ঘসময় ধরে বজায় থাকে। ভবিষ্যতের গবেষণাগুলোয় আমরা খুঁজে দেখবো, এই নির্দিষ্ট বয়সে দূষণের সংস্পর্শে আসার ফলে ঠিক কোন রোগ বা স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হয়।”

পরিবেশবাদী সংগঠন ‘ফ্রেন্ডস অফ দ্য আর্থ’-এর জেনি বেটস বলেন, “নিম্ন-আয়ের এলাকা এবং যেখানে সংখ্যালঘু জনগণের সংখ্যা বেশি, সেসব জায়গায় বায়ুদূষণের মাত্রাও বেশি। অথচ, এসব দূষিত এলাকার বাসিন্দারা তুলনামূলকভাবে তিনগুণ কম গাড়ির মালিক। অর্থাৎ, তারা নিজেরা বেশি দূষণ ঘটায় না, কিন্তু ভুক্তভোগী হয় বেশি।”

জেনি বেটস সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, “ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো দূষণমাত্রার লক্ষ্য আরও কঠোর করতে হবে, এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) সর্বশেষ স্বাস্থ্য নির্দেশনার সঙ্গে সেটিকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “সরকারের আসন্ন জলবায়ু পরিকল্পনায় বায়ুদূষণ মোকাবিলার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এই পরিকল্পনার মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে, আমরা যেনো একটি স্বল্প কার্বন ব্যবহারকারি ভবিষ্যতে অগ্রসর হই। পরিষ্কার বাতাস, উন্নত বাসস্থান, কম বিদ্যুৎ খরচ ও পরিবেশবান্ধব শিল্পে টেকসই কর্মসংস্থানের মাধ্যমে তা সফল করা সম্ভব।”

বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এধরণের গবেষণা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য প্রধান শহর বর্তমানে ভয়াবহ বায়ুদূষণের মধ্যে রয়েছে। যা এদেশের শিশুর স্বাস্থ্যঝুঁকি প্রতিনিয়ত বাড়িয়ে দিচ্ছে।

২০২০ এবং ২০২১ সালে বিশ্বের সকল দেশের মধ্যে দূষিত বায়ুর তালিকায় বাংলাদেশ এক নম্বরে ছিলো। ২০২৪ সালেও এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থান দখল করে নিতে বাংলাদেশ “সক্ষম” হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুর জীবনের শুরুর কয়েকটি বছর বায়ুদূষণের প্রভাবে সংবেদনশীল সময় হিসেবে বিবেচিত। তেমনি বাংলাদেশেও এই বয়সী শিশুদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

আমাদের স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও নগর পরিকল্পনা নীতিমালায় বায়ুদূষণ রোধের বিষয়টি অগ্রাধিকার দেওয়া না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই শিশুদের জন্য দূষণমুক্ত, পরিবেশবান্ধব শহর গড়তে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সময়ের দাবি।

আপলোডকারীর তথ্য

Shuvo

জনপ্রিয় সংবাদ

পাকিস্তানের রাস্তায় নারী-শিশুর ওপর সিংহের আক্রমণ, কিন্তু কিভাবে?

বায়ুদূষণ ও শিশুর স্বাস্থ্য: প্রজন্মের ভয়াল ভবিষ্যৎ উঠে এলো গবেষণায়

আপডেট সময় ১২:২৭:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫

অল্প বয়সে বায়ু দূষণের সংস্পর্শে আসা শিশুদের ভবিষ্যতে, বিশেষ করে কৈশোরের সময়ে, স্বাস্থ্যগত সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এমন তথ্যই উঠে এসেছে সম্প্রতি ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের (UCL) এক গবেষণায়।

২০০০ থেকে ২০০২ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্যে জন্ম নেওয়া প্রায় ৯,০০০ শিশুর তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়, যারা “মিলেনিয়াম কোহর্ট স্টাডি” নামক এই গবেষণায় অংশ নিয়েছিল।

ফলাফল বলছে, যেসব শিশু দুই থেকে চার বছর বয়সে দূষিত এলাকায় বেড়ে উঠেছে, তাদের ১৭ বছর বয়সে স্বাস্থ্যের অবস্থা খারাপ হওয়ার আশঙ্কা প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বেশি।

গবেষণায় আরও দেখা যায়, জাতিগতভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিশু এবং দরিদ্রপাড়ার বাসিন্দারা তুলনামূলকভাবে বেশি পরিমাণে বায়ুদূষণের শিকার হয়।
এর ফলে তাদের দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি ও জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতাও বেশি।

গবেষণার প্রধান লেখক ড. গারগো বারানই বলেন, “এই গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, এটি একটি জাতীয় প্রতিনিধি গবেষণা। তাই এর ফলাফল যুক্তরাজ্য জুড়ে প্রযোজ্য। পাশাপাশি, আমরা জন্ম থেকে প্রায় ২০ বছর বয়সীদের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করতে পেরেছি।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের কাছে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ যে বিষয়টি উঠে এসেছে, তা হলো বিভিন্ন সামাজিক ও জাতিগত শ্রেণির শিশুদের মধ্যে বায়ুদূষণের এক বিরাট বৈষম্য। এই বৈষম্যটা পুরো শৈশবকাল জুড়েই বজায় থাকে।”

বারানই ব্যাখ্যা করেন, “সংখ্যালঘুদের মধ্যে বায়ুদূষণের মাত্রা বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ হলো, তারা সাধারণত শহুরে এবং তুলনামূলকভাবে বেশি বঞ্চিত এলাকায় বসবাস করে। ক্ষুদ্র বায়ু কণাগুলো শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। যা রক্তপ্রবাহের ভেতর দিয়ে মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। এতে করে শরীরের প্রায় প্রতিটি অঙ্গেই এর প্রভাব পড়ে।”

তিনি বলেন, “এই গবেষণা থেকে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সামনে এসেছে। প্রথমত, তিন থেকে ছয় বছর বয়স পর্যন্ত সময়টিকে বায়ুদূষণের জন্য একটি ‘সংবেদনশীল সময়’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, বঞ্চিত ও সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে বায়ুদূষণের যে বৈষম্য, তা দীর্ঘসময় ধরে বজায় থাকে। ভবিষ্যতের গবেষণাগুলোয় আমরা খুঁজে দেখবো, এই নির্দিষ্ট বয়সে দূষণের সংস্পর্শে আসার ফলে ঠিক কোন রোগ বা স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হয়।”

পরিবেশবাদী সংগঠন ‘ফ্রেন্ডস অফ দ্য আর্থ’-এর জেনি বেটস বলেন, “নিম্ন-আয়ের এলাকা এবং যেখানে সংখ্যালঘু জনগণের সংখ্যা বেশি, সেসব জায়গায় বায়ুদূষণের মাত্রাও বেশি। অথচ, এসব দূষিত এলাকার বাসিন্দারা তুলনামূলকভাবে তিনগুণ কম গাড়ির মালিক। অর্থাৎ, তারা নিজেরা বেশি দূষণ ঘটায় না, কিন্তু ভুক্তভোগী হয় বেশি।”

জেনি বেটস সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, “ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো দূষণমাত্রার লক্ষ্য আরও কঠোর করতে হবে, এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) সর্বশেষ স্বাস্থ্য নির্দেশনার সঙ্গে সেটিকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “সরকারের আসন্ন জলবায়ু পরিকল্পনায় বায়ুদূষণ মোকাবিলার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এই পরিকল্পনার মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে, আমরা যেনো একটি স্বল্প কার্বন ব্যবহারকারি ভবিষ্যতে অগ্রসর হই। পরিষ্কার বাতাস, উন্নত বাসস্থান, কম বিদ্যুৎ খরচ ও পরিবেশবান্ধব শিল্পে টেকসই কর্মসংস্থানের মাধ্যমে তা সফল করা সম্ভব।”

বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এধরণের গবেষণা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য প্রধান শহর বর্তমানে ভয়াবহ বায়ুদূষণের মধ্যে রয়েছে। যা এদেশের শিশুর স্বাস্থ্যঝুঁকি প্রতিনিয়ত বাড়িয়ে দিচ্ছে।

২০২০ এবং ২০২১ সালে বিশ্বের সকল দেশের মধ্যে দূষিত বায়ুর তালিকায় বাংলাদেশ এক নম্বরে ছিলো। ২০২৪ সালেও এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থান দখল করে নিতে বাংলাদেশ “সক্ষম” হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুর জীবনের শুরুর কয়েকটি বছর বায়ুদূষণের প্রভাবে সংবেদনশীল সময় হিসেবে বিবেচিত। তেমনি বাংলাদেশেও এই বয়সী শিশুদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

আমাদের স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও নগর পরিকল্পনা নীতিমালায় বায়ুদূষণ রোধের বিষয়টি অগ্রাধিকার দেওয়া না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই শিশুদের জন্য দূষণমুক্ত, পরিবেশবান্ধব শহর গড়তে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সময়ের দাবি।