বিশ্বব্যাংকের ‘ব্রিদিং হেভি : নিউ এভিডেন্স অন এয়ার পলিউশন অ্যান্ড হেলথ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে প্রতি বছর উচ্চমাত্রার বায়ুদূষণের কারণে আনুমানিক ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। এ অবস্থায় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে মানুষের শ্বাসযন্ত্র, যার প্রভাবে শ্বাসকষ্ট, কাশিসহ নানা জটিলতা তৈরি হয়ে থাকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বায়ুদূষণে বছরে জিডিপির ক্ষতি হচ্ছে ৩.৯ থেকে ৪.৪ শতাংশ। এতে ঢাকা ও সিলেটের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ঘরের বাইরে হওয়া বায়ুদূষণের প্রভাব মূল্যায়ন করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে দেশে বায়ুদূষণের মূল উপাদান এবং তাদের প্রধান উৎস হিসেবে উঠে এসেছে–
কার্বন মনোক্সাইড: পেট্রোল, ডিজেল ও কাঠসহ নানা ধরনের কার্বন-যুক্ত জ্বালানি আধপোড়া হলে এই রঙবিহীন গন্ধবিহীন গ্যাসটি তৈরি হয়।
সিগারেট পোড়ালেও এই গ্যাস বের হয়। এই গ্যাস আমাদের রক্তে অক্সিজেন গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। এই গ্যাসের প্রতিক্রিয়ায় আমাদের প্রতিবর্তী ক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সবসময় ঝিমোনোর ভাব আসে। বিভিন্ন ব্যাপারে সিদ্ধান্তহীনতারও শিকার হতে হয়।
কার্বন ডাইঅক্সাইড: মানুষের নানা কর্মকাণ্ডের ফলে নির্গত প্রধান গ্রিন হাউস গ্যাস। কয়লা, তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস পোড়ানোর ফলে নির্গত হয়।
ক্লোরোফ্লুরোকার্বন : মূলত রেফ্রিজারেটর ও এয়ারকন্ডিশনিং মেশিন থেকে এই গ্যাস নির্গত হয়। বাতাসে এই গ্যাস নির্গত হওয়ার পরে স্ট্র্যাটেস্ফিয়ারে চলে যায়, সেখানে অন্যান্য গ্যাসের সংস্পর্শে আসে। এর ফলে ওজোন স্তর পাতলা হয়ে যায়। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মির বিকিরণ থেকে রক্ষা পাওয়ার স্বাভাবিক ক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
লেড বা সিসা : এই পদার্থটি লেড ব্যাটারি, পেট্রোল, ডিজেল, হেয়ারডাই, রঙ প্রভৃতি পণ্যে পাওয়া যায়। সিসা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শিশুদের ক্ষতি করে থাকে। এটির প্রভাবে হজমের প্রক্রিয়া ও স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি হয়। কয়েকটি ক্ষেত্রে ক্যানসারও হতে পারে।
ওজোন : ওজোন বায়ুম-লের উচ্চস্তরে পাওয়া যায়। এই গুরুত্বপূর্ণ গ্যাসের চাদর সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির বিকিরণ থেকে পৃথিবীকে বাঁচায়। কিন্তু মাটির কাছাকাছি এই গ্যাস অত্যন্ত বিষাক্ত ধরনের।
মাটির কাছাকাছি যে ওজোন পাওয়া যায় তা মূলত কলকারখানা এবং যানবাহন থেকে নির্গত হয়। ওজোনের প্রভাবে চুলকানি হয়, জ্বালা করতে পারে। ওজোনের প্রভাবে ঠাণ্ডা লাগার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, ফলে নিউমোনিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
নাইট্রোজেন অক্সাইড : এই গ্যাসের প্রভাবে ধোঁয়াশা তৈরি হয় এবং অ্যাসিড বৃষ্টি হয়। পেট্রোল, ডিজেল, কয়লার মতো জ্বালানি পোড়ানোর ফলে এই গ্যাস নির্গত হয়। নাইট্রোজেন অক্সাইডের প্রভাবে বাচ্চাদের শীতের সময় সর্দিকাশি হতে পারে।
সাসপেনডেড পার্টিকুলার ম্যাটার: ধোঁয়া, ধুলো, বাষ্প এবং একটা নির্দিষ্ট সময় ধরে বাতাসে ভেসে থাকা কঠিন পদার্থের কণাকে এসপিএম বলে। এটি বায়ু দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ। ধোঁয়াশার একটা অন্যতম কারণ এসপিএম।
এসপিএম বেশি থাকলে দূরের জিনিস দেখার ক্ষেত্রে খুব অসুবিধা হয়। এই ধরনের পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা ফুসফুসে প্রবেশ করে শরীরের এই অন্যতম প্রধান অঙ্গের ক্ষতি করতে পারে। নিঃশ্বাসপ্রশ্বাসের ক্ষেত্রেও সমস্যার সৃষ্টি করে।
সালফার ডাইঅক্সাইড : মূলত তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা পোড়ানোর ফলে এই গ্যাস নির্গত হয়। অন্যান্য শিল্পজাত প্রক্রিয়ার ফলেও এই গ্যাস নির্গত হয়। যেমন, কাগজ উৎপাদন পদ্ধতিতে, ধাতু গলানোর ক্ষেত্রে ইত্যাদি। এই গ্যাস অ্যাসিড বৃষ্টি এবং ধোঁয়াশা সৃষ্টির একটি প্রধান কারণ। এর প্রভাবে ফুসফুসের নানা ধরনের জটিল রোগ হয়।
এসব সমস্যার বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক উপদেষ্টা ডা. মো. মোজাহেরুল হক বলেন, সুন্দর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আমাদের অনেক রোগ থেকে বাঁচিয়ে রাখে। কারণ, এই বর্জ্যটাইতো বাতাসকে দূষিত করছে। এই দূষিত বাতাসের মধ্যেও যে রোগ সংক্রমণের উপাদান থাকা দরকার সেগুলো সব আছে। যে কারোই এ থেকে শ্বাসযন্ত্রের মধ্যে সংক্রমণ হতে পারে।
সূত্র: বাসস