সংবাদ শিরোনাম ::
Logo ইকোসিস্টেমকে রক্ষা করে প্রাকৃতিক সম্পদকে সুরক্ষার বার্তা দিলেন পরিবেশ সচিব Logo নতুন প্রজন্মকে সাথে নিয়ে এবছরের ‘সবুজে সাজাই বাংলাদেশ’ শুরু  Logo গাজীপুরে কৃষি প্রযুক্তি ও পুষ্টি মেলার উদ্বোধন Logo দাবি না মানলে জবি শিক্ষার্থীদের লাগাতার কর্মসূচির ঘোষণা Logo সাম্য হত্যার ঘটনায় শোক পালন করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন Logo অ্যান্টার্কটিকায় জলবায়ু পরিবর্তন স্পষ্ট, পূর্ব দিকের চেয়ে পশ্চিমে দ্রুত গলছে বরফ Logo প্রকৃতিকে ধ্বংস করে উন্নয়ন হলে সে উন্নয়ন টেকসই হবেনা: রিজওয়ানা হাসান Logo ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সম্মানসূচক ডি. লিট ডিগ্রি দিলো চবি Logo চিরতরে চলে গেলেন ‘সবচেয়ে গরিব প্রেসিডেন্ট’   Logo চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড: প্রধান উপদেষ্টা

বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ কার্বন নিঃসরণকারী দেশে দাবানলের তেজ বাড়লো কিসে?

  • নাসিমুল শুভ
  • আপডেট সময় ০২:৪৪:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫
  • 63

স্যাটেলাইট ইমেজে লস অ্যাঞ্জেলেসের ভয়াবহ দাবানল

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৈশ্বিক তাপমাত্রা রেকর্ড ভাঙছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য শিল্পবিপ্লব পরবর্তী অতিমাত্রার জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়ে ব্যাপক শিল্পায়নকে দায়ী করা হয়। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন দ্রুততর করছে ব্যাপক মাত্রার কার্বন নিঃসরণ। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী দেশ চীন, এরপরেই দ্বিতীয় অবস্থানে আছে আমেরিকা। এদিকে গবেষকরা বলছেন ২০২৪ ছিল এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণতম বছর। এই বাস্তবতায় যেন নিজের আগুনে নিজেই পুড়ছে আমেরিকা, লস অ্যাঞ্জেলেসে বিলাসী বাড়িগুলো পুড়ছে শুষ্ক হয়ে ওঠা প্রকৃতির বিরূপ প্রভাবে। বিধ্বংসী এই দাবানলের নেপথ্যেও জলবায়ু পরিবর্তন বলে একাধিক সংবাদমাধ্যমে গবেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

সংবাদমাধ্যম এক্সিওস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আমেরিকার ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিসের দেয়া তথ্যানুসারে, লস অ্যাঞ্জেলেসে ৬ মে থেকে মাত্র ০ দশমিক ১৬ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত হয়েছে। অথচ কাম্য গড় বৃষ্টিপাত ৪ ইঞ্চি। রেকর্ড বলছে, ৬ মে থেকে ৩১  ডিসেম্বর সময়ের মধ্যে এই শহরের দ্বিতীয় শুষ্কতম সময়।

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন বলছে, লস অ্যাঞ্জেলেসে ধ্বংসলীলা চালানো দাবানলের কারণ শুষ্ক বাতাস। হারিকেনের গতিতে ছুটে চলা এই শুষ্ক-গরম বাতাস পরিস্থিতিকে চরমে নিয়ে গেছে। এই বাতাসকে বলা হয় সান্তা আনা। এমনিতে সান্তা আনা প্রতি মৌসুমের একটি সাধারণ ব্যাপার। কিন্তু এবারে এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বেশ বদলে গেছে। লস অ্যাঞ্জেলেসে অস্বাভাবিক সান্তা আনার কারণে স্মরণকালের ভয়াবহ এই দাবানল চরম রূপে হাজির হয়েছে।

দ্য ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া,লস অ্যাঞ্জেলেসের অধ্যাপক পার্ক উইলিয়ামস বলেন বছরে এক দিকে যেমন শুষ্কতা দেখা গেছে তেমনই  ২০২৩ সালের শীতকাল থেকে ২০২৪ সালের বসন্ত পর্যন্ত, লস অ্যাঞ্জেলেস অঞ্চলটি একটি ব্যতিক্রমী আর্দ্র জলবায়ু অনুভব করেছিল এবং এর ফলে পাহাড় এবং পর্বতমালার আশেপাশের পাহাড়গুলিতে বিপুল পরিমাণে নতুন উদ্ভিদ জৈববস্তুর বৃদ্ধি হয়েছিল। আর এগুলোই শুষ্কতায় দাবানলের রসদ হিসেবে কাজ করছে।’

‘ফায়ার ওয়েদার’ বইয়ের লেখক এবং ব্যক্তি জীবনে ২০১৬ সালে কানাডার ভয়াবহ দাবানল সম্পর্কে জ্ঞান রাখা জন ভ্যালিয়ান্ট গার্ডিয়ানকে বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানি অবশ্যই দাবানল সৃষ্টির কারণ নয়, তবে এটি দাবানল বাড়িয়ে দেয়, দাবানলকে আগ্রাসী করে,  শক্তি যোগায়। আমি ফায়ার ওয়েদারে একটি শব্দ তৈরি করেছি “২১ শতকের আগুন”। আসলে আগেকার দাবানলগুলোর তুলনায় সাম্প্রতিক সময়ে দাবানলের মৌলিক কিছু পার্থক্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এখনকার দাবানল জলবায়ু পরিবর্তন এবং নিম্ন উচ্চতায় তাপ ধরে রাখা এবং আমাদের চারপাশের সবকিছুকে উত্তপ্ত করার বায়ুমণ্ডলের ক্রমবর্ধমান ক্ষমতার সঙ্গে সম্পর্কিত।  জলবায়ু বিজ্ঞান রকেট সায়েন্স নয়। আপনি যখন প্রকৃতিকে আরও গরম এবং শুষ্ক করেন, তখন সেগুলি আরও সহজে জ্বলে।’

যুক্তরাষ্ট্রের এনভায়রনমেন্টাল প্রটেকশন এজেন্সির (ইপিএ) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দাবানল আরো ঘন ঘন ঘটছে ও দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। এসব দাবানলের কবলে বৃহত্তর অঞ্চল পুড়ে যাচ্ছে।

অগ্নি ইতিহাসবিদ স্টিফেন পাইন বলেন, ‘বিশ্ব উষ্ণায়ন পরিবেশকে আরো অস্থিতিশীল করে তুলছে। গ্রীষ্ম ও বর্ষা মৌসুমের সময়ের হেরফের দেখা দিয়েছে। উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ায় প্রাকৃতিকভাবে আগুন লেগে যাওয়ার সম্ভাবনাও বেড়েছে। এসব বিষয়ের কারণে ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানল এতটা শক্তিশালী আকার ধারণ করেছে।’

একদিকে গবেষকরা ভয়াবহ দাবানলের কারণ অনুসন্ধান করছেন অন্যদিকে এখনও জ্বলছে লস অ্যাঞ্জেলেস। শহরের বিস্তীর্ণ এলাকা টানা ছয় দিন ধরে ভয়াবহ দাবানলে পুড়ছে। এই ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে  ২৪–এ পৌঁছেছে। তবে দাবানল কমার আশার আলো দেখা যাচ্ছে না, বরং বিপজ্জনক ঝোড়ো বাতাসের গতি বাড়ার সতর্কতা জারি করেছেন কর্মকর্তারা।

আপলোডকারীর তথ্য

Shuvo

ইকোসিস্টেমকে রক্ষা করে প্রাকৃতিক সম্পদকে সুরক্ষার বার্তা দিলেন পরিবেশ সচিব

বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ কার্বন নিঃসরণকারী দেশে দাবানলের তেজ বাড়লো কিসে?

আপডেট সময় ০২:৪৪:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৈশ্বিক তাপমাত্রা রেকর্ড ভাঙছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য শিল্পবিপ্লব পরবর্তী অতিমাত্রার জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়ে ব্যাপক শিল্পায়নকে দায়ী করা হয়। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন দ্রুততর করছে ব্যাপক মাত্রার কার্বন নিঃসরণ। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী দেশ চীন, এরপরেই দ্বিতীয় অবস্থানে আছে আমেরিকা। এদিকে গবেষকরা বলছেন ২০২৪ ছিল এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণতম বছর। এই বাস্তবতায় যেন নিজের আগুনে নিজেই পুড়ছে আমেরিকা, লস অ্যাঞ্জেলেসে বিলাসী বাড়িগুলো পুড়ছে শুষ্ক হয়ে ওঠা প্রকৃতির বিরূপ প্রভাবে। বিধ্বংসী এই দাবানলের নেপথ্যেও জলবায়ু পরিবর্তন বলে একাধিক সংবাদমাধ্যমে গবেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

সংবাদমাধ্যম এক্সিওস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আমেরিকার ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিসের দেয়া তথ্যানুসারে, লস অ্যাঞ্জেলেসে ৬ মে থেকে মাত্র ০ দশমিক ১৬ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত হয়েছে। অথচ কাম্য গড় বৃষ্টিপাত ৪ ইঞ্চি। রেকর্ড বলছে, ৬ মে থেকে ৩১  ডিসেম্বর সময়ের মধ্যে এই শহরের দ্বিতীয় শুষ্কতম সময়।

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন বলছে, লস অ্যাঞ্জেলেসে ধ্বংসলীলা চালানো দাবানলের কারণ শুষ্ক বাতাস। হারিকেনের গতিতে ছুটে চলা এই শুষ্ক-গরম বাতাস পরিস্থিতিকে চরমে নিয়ে গেছে। এই বাতাসকে বলা হয় সান্তা আনা। এমনিতে সান্তা আনা প্রতি মৌসুমের একটি সাধারণ ব্যাপার। কিন্তু এবারে এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বেশ বদলে গেছে। লস অ্যাঞ্জেলেসে অস্বাভাবিক সান্তা আনার কারণে স্মরণকালের ভয়াবহ এই দাবানল চরম রূপে হাজির হয়েছে।

দ্য ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া,লস অ্যাঞ্জেলেসের অধ্যাপক পার্ক উইলিয়ামস বলেন বছরে এক দিকে যেমন শুষ্কতা দেখা গেছে তেমনই  ২০২৩ সালের শীতকাল থেকে ২০২৪ সালের বসন্ত পর্যন্ত, লস অ্যাঞ্জেলেস অঞ্চলটি একটি ব্যতিক্রমী আর্দ্র জলবায়ু অনুভব করেছিল এবং এর ফলে পাহাড় এবং পর্বতমালার আশেপাশের পাহাড়গুলিতে বিপুল পরিমাণে নতুন উদ্ভিদ জৈববস্তুর বৃদ্ধি হয়েছিল। আর এগুলোই শুষ্কতায় দাবানলের রসদ হিসেবে কাজ করছে।’

‘ফায়ার ওয়েদার’ বইয়ের লেখক এবং ব্যক্তি জীবনে ২০১৬ সালে কানাডার ভয়াবহ দাবানল সম্পর্কে জ্ঞান রাখা জন ভ্যালিয়ান্ট গার্ডিয়ানকে বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানি অবশ্যই দাবানল সৃষ্টির কারণ নয়, তবে এটি দাবানল বাড়িয়ে দেয়, দাবানলকে আগ্রাসী করে,  শক্তি যোগায়। আমি ফায়ার ওয়েদারে একটি শব্দ তৈরি করেছি “২১ শতকের আগুন”। আসলে আগেকার দাবানলগুলোর তুলনায় সাম্প্রতিক সময়ে দাবানলের মৌলিক কিছু পার্থক্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এখনকার দাবানল জলবায়ু পরিবর্তন এবং নিম্ন উচ্চতায় তাপ ধরে রাখা এবং আমাদের চারপাশের সবকিছুকে উত্তপ্ত করার বায়ুমণ্ডলের ক্রমবর্ধমান ক্ষমতার সঙ্গে সম্পর্কিত।  জলবায়ু বিজ্ঞান রকেট সায়েন্স নয়। আপনি যখন প্রকৃতিকে আরও গরম এবং শুষ্ক করেন, তখন সেগুলি আরও সহজে জ্বলে।’

যুক্তরাষ্ট্রের এনভায়রনমেন্টাল প্রটেকশন এজেন্সির (ইপিএ) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দাবানল আরো ঘন ঘন ঘটছে ও দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। এসব দাবানলের কবলে বৃহত্তর অঞ্চল পুড়ে যাচ্ছে।

অগ্নি ইতিহাসবিদ স্টিফেন পাইন বলেন, ‘বিশ্ব উষ্ণায়ন পরিবেশকে আরো অস্থিতিশীল করে তুলছে। গ্রীষ্ম ও বর্ষা মৌসুমের সময়ের হেরফের দেখা দিয়েছে। উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ায় প্রাকৃতিকভাবে আগুন লেগে যাওয়ার সম্ভাবনাও বেড়েছে। এসব বিষয়ের কারণে ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানল এতটা শক্তিশালী আকার ধারণ করেছে।’

একদিকে গবেষকরা ভয়াবহ দাবানলের কারণ অনুসন্ধান করছেন অন্যদিকে এখনও জ্বলছে লস অ্যাঞ্জেলেস। শহরের বিস্তীর্ণ এলাকা টানা ছয় দিন ধরে ভয়াবহ দাবানলে পুড়ছে। এই ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে  ২৪–এ পৌঁছেছে। তবে দাবানল কমার আশার আলো দেখা যাচ্ছে না, বরং বিপজ্জনক ঝোড়ো বাতাসের গতি বাড়ার সতর্কতা জারি করেছেন কর্মকর্তারা।