বিশ্বের সবচেয়ে বড় হিমশৈল যখন হুমকি থেকে আশার আলো

বিশ্বের সবচেয়ে বড় হিমশৈল যখন হুমকি থেকে আশার আলো

বিশ্বের সবচেয়ে বড় হিমশৈলটি নিয়ে একটা শঙ্কা বিরাজ করছিলো – এটি আশপাশের প্রাণীদের জন্য বয়ে আনতে পারে মৃত্যুঝুঁকি। দ্বীপের উপর আছড়ে পড়লে ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

তবে ভাগ্যক্রমে, প্রাণনাশের বদলে নতুন প্রাণের সঞ্চারের সুযোগ এনে দিতে পারে “এ২৩এ” নামে পরিচিত হিমশৈলটি।

বিজ্ঞানীদের ধারণা, বিশালাকার এই হিমশৈলটি থেকে যেসব পুষ্টি উপাদান নির্গত হবে, তা দূরবর্তী দ্বীপে থাকা লক্ষ লক্ষ পেঙ্গুইন এবং সীলদের জন্য খাবার আরও সহজলভ্য করবে।

শুধু তা-ই না, বরফের ভেতরে আটকে থাকা ক্ষুদ্র কণা ও পুষ্টি যখন ধীরে ধীরে সমুদ্রে মিশে যায়, এতে সামুদ্রিক জীবের বিকাশ ঘটে।

“এ২৩এ” আকারে প্রায় দক্ষিণ জর্জিয়ার একটি দ্বীপের সমান। তাই আশঙ্কা করা হচ্ছিলো যে, প্রায় ১,২৫০ বর্গ মাইলের হিমশৈলটির কারণে দ্বীপের প্রাণীদের খাদ্যের পথ বাধাগ্রস্ত হবে।

ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক জরিপের নাদিন জনস্টনের মতে, হিমশৈলটি হচ্ছে একটি খালি মরুভূমির মাঝখানে পুষ্টির বোমা ফেলার মতো।

হিমশৈলটি আকারে প্রায় ৩,৩০০ বর্গ কিলোমিটার। এর উচ্চতা প্রায় ১,০০০ ফুট এবং ওজন ১ ট্রিলিয়ন টনের কাছাকাছি।

হিমশৈলটি ১৯৮৬ সালে, অ্যান্টার্কটিক মহাদেশীয় প্রস্তর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর সেটি অ্যান্টার্কটিকার সাগরেই প্রায় ৩০ বছর আটকা পড়ে ছিলো।

হিমশৈলটি অবশেষে ২০২৩ সালের শেষের দিকে নড়তে শুরু করে। ২০২৪ সালের অধিকাংশ সময় জুড়ে এটি পানির স্রোতের মধ্যে ঘুরতে থাকে। এরপর ডিসেম্বরে “এ২৩এ” আবারো উত্তরের দিকে যাত্রা শুরু করে, গন্তব্য দক্ষিণ জর্জিয়ার দিকে।

 

গত ১ মার্চ থেকে হিমশৈলটি জর্জিয়ার একটি দ্বীপ থেকে প্রায় ৭৩ কিলোমিটার দূরে আটকে আছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, হিমশৈলটির যাত্রা এখন শেষের দিকে।

সমুদ্রবিজ্ঞানী অ্যান্ড্রু মেইজের্স এর মতে, “হিমশৈলটি সম্ভবত এখানেই থাকবে, যতক্ষণ না এটি ছোট ছোট টুকরো হয়ে যায়। এর আগেও এদিকে যে হিমশৈলগুলো এসেছিলো, সব ভেঙে ছড়িয়ে পড়েছিলো।“

“এ২৩এ” জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যার সৃষ্টি করছে না। এটি আকারে এতোই বিশাল যে, জাহাজগুলো সহজেই এড়িয়ে যেতে পারে। তবে হিমশৈলটি ছোট ছোট টুকরোয় ভাঙতে শুরু করলে ঝুঁকি বাড়বে। তখন কিছু কিছু এলাকা বাণিজ্যিক মৎস শিকারী জাহাজের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করার প্রয়োজন হতে পারে।

স্যাটেলাইট চিত্র থেকে ধারণা করা হয়েছিলো যে, হিমশৈলটি ছোট টুকরোতে ভাঙছে না। তবে জানুয়ারিতে প্রায় ১৯ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি অংশ ভেঙে পড়ে।

এই বিশাল আকারের হিমশৈলগুলো বেশ বিরল, তবে একদম অপ্রত্যাশিত নয়। গত পাঁচ বছরে একই এলাকায় এরকম আরো দুইটি হিমশৈলির দেখা মিলেছে বলে জানিয়েছেন মেইজের্স। এধরনের হিমশৈলগুলো অ্যান্টার্কটিক বরফের জীববৈচিত্র্যের একটি স্বাভাবিক অংশ।

তবে ২০০০ সাল থেকে, বরফের স্তরগুলো প্রায় ৬০০০ বিলিয়ন টন ভর হারিয়েছে। মেইজের্স এর মতে, এটা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হচ্ছে। বরফের স্তরগুলো অতি দ্রুত ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে।

গবেষকরা ইতোমধ্যে সতর্ক করেছেন যে, পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি থেকে ২.০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে বৃদ্ধি পেলে, সমুদ্র পৃষ্ঠ ১২ মিটার পর্যন্ত উচ্চতায় চলে যেতে পারে। আর সেরকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে, তা থেকে ফিরে আসার আর কোনো উপায় থাকবে না।

আপলোডকারীর তথ্য

Shuvo

চবি’র কলোনি থেকে ৯ ফুট লম্বা অজগর উদ্ধার  

বিশ্বের সবচেয়ে বড় হিমশৈল যখন হুমকি থেকে আশার আলো

আপডেট সময় ০৬:৫০:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ মার্চ ২০২৫

বিশ্বের সবচেয়ে বড় হিমশৈলটি নিয়ে একটা শঙ্কা বিরাজ করছিলো – এটি আশপাশের প্রাণীদের জন্য বয়ে আনতে পারে মৃত্যুঝুঁকি। দ্বীপের উপর আছড়ে পড়লে ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

তবে ভাগ্যক্রমে, প্রাণনাশের বদলে নতুন প্রাণের সঞ্চারের সুযোগ এনে দিতে পারে “এ২৩এ” নামে পরিচিত হিমশৈলটি।

বিজ্ঞানীদের ধারণা, বিশালাকার এই হিমশৈলটি থেকে যেসব পুষ্টি উপাদান নির্গত হবে, তা দূরবর্তী দ্বীপে থাকা লক্ষ লক্ষ পেঙ্গুইন এবং সীলদের জন্য খাবার আরও সহজলভ্য করবে।

শুধু তা-ই না, বরফের ভেতরে আটকে থাকা ক্ষুদ্র কণা ও পুষ্টি যখন ধীরে ধীরে সমুদ্রে মিশে যায়, এতে সামুদ্রিক জীবের বিকাশ ঘটে।

“এ২৩এ” আকারে প্রায় দক্ষিণ জর্জিয়ার একটি দ্বীপের সমান। তাই আশঙ্কা করা হচ্ছিলো যে, প্রায় ১,২৫০ বর্গ মাইলের হিমশৈলটির কারণে দ্বীপের প্রাণীদের খাদ্যের পথ বাধাগ্রস্ত হবে।

ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক জরিপের নাদিন জনস্টনের মতে, হিমশৈলটি হচ্ছে একটি খালি মরুভূমির মাঝখানে পুষ্টির বোমা ফেলার মতো।

হিমশৈলটি আকারে প্রায় ৩,৩০০ বর্গ কিলোমিটার। এর উচ্চতা প্রায় ১,০০০ ফুট এবং ওজন ১ ট্রিলিয়ন টনের কাছাকাছি।

হিমশৈলটি ১৯৮৬ সালে, অ্যান্টার্কটিক মহাদেশীয় প্রস্তর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর সেটি অ্যান্টার্কটিকার সাগরেই প্রায় ৩০ বছর আটকা পড়ে ছিলো।

হিমশৈলটি অবশেষে ২০২৩ সালের শেষের দিকে নড়তে শুরু করে। ২০২৪ সালের অধিকাংশ সময় জুড়ে এটি পানির স্রোতের মধ্যে ঘুরতে থাকে। এরপর ডিসেম্বরে “এ২৩এ” আবারো উত্তরের দিকে যাত্রা শুরু করে, গন্তব্য দক্ষিণ জর্জিয়ার দিকে।

 

গত ১ মার্চ থেকে হিমশৈলটি জর্জিয়ার একটি দ্বীপ থেকে প্রায় ৭৩ কিলোমিটার দূরে আটকে আছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, হিমশৈলটির যাত্রা এখন শেষের দিকে।

সমুদ্রবিজ্ঞানী অ্যান্ড্রু মেইজের্স এর মতে, “হিমশৈলটি সম্ভবত এখানেই থাকবে, যতক্ষণ না এটি ছোট ছোট টুকরো হয়ে যায়। এর আগেও এদিকে যে হিমশৈলগুলো এসেছিলো, সব ভেঙে ছড়িয়ে পড়েছিলো।“

“এ২৩এ” জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যার সৃষ্টি করছে না। এটি আকারে এতোই বিশাল যে, জাহাজগুলো সহজেই এড়িয়ে যেতে পারে। তবে হিমশৈলটি ছোট ছোট টুকরোয় ভাঙতে শুরু করলে ঝুঁকি বাড়বে। তখন কিছু কিছু এলাকা বাণিজ্যিক মৎস শিকারী জাহাজের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করার প্রয়োজন হতে পারে।

স্যাটেলাইট চিত্র থেকে ধারণা করা হয়েছিলো যে, হিমশৈলটি ছোট টুকরোতে ভাঙছে না। তবে জানুয়ারিতে প্রায় ১৯ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি অংশ ভেঙে পড়ে।

এই বিশাল আকারের হিমশৈলগুলো বেশ বিরল, তবে একদম অপ্রত্যাশিত নয়। গত পাঁচ বছরে একই এলাকায় এরকম আরো দুইটি হিমশৈলির দেখা মিলেছে বলে জানিয়েছেন মেইজের্স। এধরনের হিমশৈলগুলো অ্যান্টার্কটিক বরফের জীববৈচিত্র্যের একটি স্বাভাবিক অংশ।

তবে ২০০০ সাল থেকে, বরফের স্তরগুলো প্রায় ৬০০০ বিলিয়ন টন ভর হারিয়েছে। মেইজের্স এর মতে, এটা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হচ্ছে। বরফের স্তরগুলো অতি দ্রুত ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে।

গবেষকরা ইতোমধ্যে সতর্ক করেছেন যে, পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি থেকে ২.০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে বৃদ্ধি পেলে, সমুদ্র পৃষ্ঠ ১২ মিটার পর্যন্ত উচ্চতায় চলে যেতে পারে। আর সেরকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে, তা থেকে ফিরে আসার আর কোনো উপায় থাকবে না।