লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশে অবশিষ্ট চিরহরিৎ বনের একটি উল্লেখযোগ্য নমুনা। এটি একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। বাংলাদেশের ৭টি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও ১০টি জাতীয় উদ্যানের মধ্যে এটি অন্যতম। মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত ১২৫০ হেক্টর আয়তনের বন জীববৈচিত্র্যে ভরপুর। বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৭ সালে এই বনকে ‘জাতীয় উদ্যান’ হিসেবে ঘোষণা করে। বিলুপ্তপ্রায় উল্লুকের জন্য এ বন বিখ্যাত। উল্লুক ছাড়াও এখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির দুর্লভ জীবজন্তু, কীটপতঙ্গ এবং উদ্ভিদ। অথচ এই জাতীয় উদ্যান ও অভয়ারণ্যেও নিরাপদ নয় দেশের সম্পদ বন্যপ্রাণীরা।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে গত এক বছরে প্রায় সাড়ে তিন শতাধিক বন্য প্রাণী বিপন্ন ও আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে সড়কে গাড়িচাপা ও রেলপথে কাটা পড়ে মৃত্যু হয়েছে শতাধিক প্রাণীর, আর জীবিত উদ্ধার হয়েছে ২৫০টি। উদ্ধার হওয়া প্রাণীদের মধ্যে অজগরের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
সর্বশেষ ১ মার্চ কমলগঞ্জের কান্দিগাঁও এলাকা থেকে একটি চিত্রা হরিণ উদ্ধার করে লাউয়াছড়ায় অবমুক্ত করা হয়। এর আগে ১১ ফেব্রুয়ারি শ্রীমঙ্গল সড়কে বন বিড়াল ও গন্ধগোকুলসহ তিনটি প্রাণী গাড়ির নিচে চাপা পড়ে মারা যায়।
রাষ্ট্রের জীববৈচিত্র্যের অন্যতম অভয়ারণ্যের ভেতরে সড়ক, রেলপথ এবং ট্রেনের গতি নিয়ে বার বারই প্রশ্ন উঠেছে। ২০২১,২০২২ সালেও অর্ধশতাধিক বিপন্ন, বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় বন্য প্রাণীর মৃত্যু ঘটেছে। অনেক দিন ধরেই পরিবেশকর্মী, বন্য প্রাণী রক্ষার আন্দোলনে যুক্ত ব্যক্তিরা বিকল্প রেল ও সড়কপথ নির্মাণের দাবি করছেন।
এসব দাবির মুখে বিকল্প সড়ক না হওয়া পর্যন্ত উদ্যান এলাকায় ট্রেন ও যানবাহনের গতি ২০ কিলোমিটারে রাখার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনোটিই কার্যকর হচ্ছে না।
এই বাস্তবতায় পালিত হচ্ছে বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস, যা উপলক্ষে আজ সোমবার (৩ মার্চ) লাউয়াছড়া সহব্যবস্থাপনা কমিটির উদ্যোগে আলোচনা, র্যালি ও সচেতনতামূলক সভার আয়োজন করা হয়েছে। বন বিভাগ ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর তথ্যমতে, গত এক বছরে হরিণ, বানর, লজ্জাবতী বানর, মেছোবিড়াল, চিতা বিড়াল, বনবিড়াল, বিভিন্ন প্রজাতির প্যাঁচা, মদনটাক, শকুন, অজগরসহ নানা প্রাণী উদ্ধার করা হয়েছে।
বন বিভাগের মতে, লাউয়াছড়ায় খাদ্য সংকট ও গাছ নিধনের কারণে বন্য প্রাণীরা লোকালয়ে চলে আসছে। পরিবেশবাদীরা বলছেন, বন উজাড়, জমি দখল, পর্যটকদের অতিরিক্ত ভিড় ও যানবাহনের চলাচল প্রাণীদের নিরাপদ আবাসস্থল সংকুচিত করছে। বন্য প্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক স্বপন দেব জানান, গত এক বছরে তিনি ৫০টির বেশি প্রাণী উদ্ধার করে বন বিভাগকে হস্তান্তর করেছেন।
বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ মৌলভীবাজারের সহকারী বন সংরক্ষক জামিল মোহাম্মদ খান বলেন, ‘বন্য প্রাণী রক্ষায় বন বিভাগ নানা উদ্যোগ নিয়েছে,তবে সচেতনতা বাড়ানো ও বন সংরক্ষণে আরও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন।’