আজ মঙ্গলবার মাঘী পূর্ণিমা। এটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বিশেষ তাৎপর্যবাহী দিন। মাঘ মাসের পূর্ণিমা বলে এই পূর্ণিমা মাঘী পূর্ণিমা বলা হয়ে থাকে। এবছর ১১ ফেব্রুয়ারি মাঘী পূর্ণিমা উদ্যাপিত হচ্ছে। আজ সন্ধ্যা ৭টা ২৫ মিনিটে এই তিথি শুরু হবে, আর শেষ হবে ১২ ফেব্রুয়ারি বুধবার সন্ধ্যা ৭টা ৫২ মিনিটে।
মাঘী পূর্ণিমা উদযাপন উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বৌদ্ধ উপাসনালয়গুলোতে যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
মাঘী পূর্ণিমা বৌদ্ধদের অন্যতম একটি তাৎপর্যময় পূর্ণিমা তিথি। মাঘী পূর্ণিমা তিথিকেও কেন্দ্র করে বুদ্ধের জীবদ্দশার স্মৃতি জড়িয়ে আছে। এই পূর্ণিমার দিনেই বর্তমান ভারতের উত্তর প্রদেশের বৈশালীর চাপাল চৈত্যে বুদ্ধ নিজেই তার মহাপরিনির্বাণ লাভের দিনক্ষণ ঘোষণা দেন। যাকে বৌদ্ধ পরিভাষায় বলা হয় আয়ু সংস্কার। আয়ু সংস্কারের পরিবর্তে অনেকে আয়ু বিসর্জনও বলে থাকেন। সহজ কথায় বুদ্ধ মাঘী পূর্ণিমা দিবসে ঘোষণা করেছিলেন, ওই দিন থেকে তিন মাস পর বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে স্বীয় দেহত্যাগ করবেন।
বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাসীরা তাদের পুণ্যময় এই দিনকে অষ্টশীল পালন, বুদ্ধপূজা দান, সংঘদান, বিহারে ধর্মীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন, আলোকসজ্জা, হাজার প্রদীপ প্রজ্বালন, দেশ ও বিশ্বশান্তি কামনায় সমবেত উপাসনাসহ বিভিন্ন আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদ্যাপন করে থাকেন।
এই দিনে বুদ্ধ নিজের মহাপরিনির্বাণ লাভের দিন ঘোষণার পাশাপাশি আরও একটি ঘটনা হলো মাঘী পূর্ণিমা তিথিতে বুদ্ধ ভিক্ষুসংঘকে প্রাতিমোক্ষ উদ্দেশ উপদেশ দিয়েছিলেন। ‘প্রাতিমোক্ষ’ হলো বৌদ্ধভিক্ষুদের নিত্যপ্রতিপালনীয় বিনয়-বিধানসংবলিত একটি গ্রন্থ।
মাঘী পূর্ণিমায় বাংলাদেশের প্রতিটি বিহারে বুদ্ধপূজা, শীলগ্রহণ, ভিক্ষুসংঘকে পিন্ডদান, প্রদীপপূজা, অনিত্যভাবনা ও ধর্মীয় সভার আয়োজন করা হয়। দিনটি বৌদ্ধসম্প্রদায়ের ধর্মীয় ও সামাজিক জীবনে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের বিভিন্ন বৌদ্ধ জনপদে, বিশেষ করে চট্টগ্রামের বৌদ্ধ অধ্যুষিত গ্রাম ও বিহারগুলিতে মেলার আয়োজন করা হয়। এরূপ উল্লেখযোগ্য কয়েকটি মেলা হলো ঠেগরপুনি গ্রামের বুড়া গোঁসাই মেলা (পটিয়া), বিনাজুরি গ্রামের পরিনির্বাণ মেলা (রাউজান), লাটিছড়ি গ্রামের বুদ্ধ মেলা (রাউজান), আবদুল্লাহপুর গ্রামের শাক্যমুনী মেলা (হাটহাজারি), আর্যমিত্র মহাপরিনির্বাণ মেলা (রাউজান) প্রভৃতি।