কিশোরগঞ্জের ভৈরবে চামড়া শিল্পের সামাজিক ও পরিবেশগত মান উন্নয়ন নিয়ে গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। হাওরবেষ্টিত প্রাকৃতিক বৈচিত্রের এই জনপদে পরিবেশের সঙ্গে ভারসাম্য রেখে চামড়া বিশেষ করে পাদুকা শিল্পের সহাবস্থান এবং শ্রমিকদের সামাজিক অবস্থান নিয়ে নানাপক্ষের মত উঠে আসে এই গোলটেবিল বৈঠকে।
বুধবার (৯ অক্টোবর) ভৈরব উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত এই বৈঠকে একটি ডাম্পিং ইয়ার্ডের প্রয়োজনীয়তা, কারখানা পর্যায়ে বর্জ্য শোধনাগার এবং শ্রমিকদের পরিবেশ সুরক্ষা ও নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করতে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রয়োজনীতা তুলে ধরেন সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের প্রতিনিধিরা।
বৈঠকে বক্তারা ভৈরবের পাদুকা শিল্পের উন্নয়ন ও কারখানায় ব্যবহৃত চামড়া ও রেক্সিন বর্জ্য অপসারণ ও রিসাইকেলিং করে ব্যবহার যোগ্য করার বিষয়ে পাদুকা শিল্পের সংশ্লিষ্টদের সচেতনতা ও পরিকল্পনা গড়ে তোলার তাগিদ দেন।
বক্তারা আশা করেন, পাদুকা শিল্পে ব্যবহৃত চামড়াজাত পণ্য যদি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় উৎপাদন করা হয় তাহলে চামড়া খাতের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠবে। এজন্য বৈঠকে ভৈরবের পাদুকা শিল্পের উন্নয়ন, আর্থিক সহযোগিতা ও অতিরিক্ত বর্জ্য উৎপাদনজনিত পরিবেশদূষণ নিরসন করার উপায়, চ্যালেঞ্জ ও কর্মকৌশল নিয়ে আলোচনা করা হয়।
গোলটেবিল বৈঠকে স্থানীয় সচেতন মহলের পক্ষে রফিকুল ইসলাম মহিলা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মো. রফিকুল ইসলাম ভৈরবে বর্জ্য শোধনাগারের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেদোয়ান আহমেদ রাফি একটি ডাম্পিং ইয়ার্ড নির্মাণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। ডাম্পিং ইয়ার্ড করার জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছু উপজেলা প্রশাসন করছে বলেও জানান। এই কাজকে তরান্বিত্ব করতে তিনি শ্রমিক প্রতিনিধিদের উপজেলা কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন পেশ করতে বলেন এবং উন্নয়নসহযোগী সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ডাম্পিং ইয়ার্ডের জন্য প্রস্তাব পেশ করার পরামর্শ দেন।
বৈঠকে পরিবেশের সঙ্গে ভারসাম্য রেখে চামড়া শিল্পের টেকসই উন্নয়নের সঙ্গে এই অঞ্চলে এইখাতের শ্রমিকদের সচেতনতা নিয়েও গুরুত্ববহ আলোচনা হয়। নারী কাউন্সেলর রোজী ইসলাম ভৈরবে চামড়া শিল্পের শ্রমিকদের জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
ভৈরব পাদুকাশিল্প মালিক সমিতির সভাপতি আল আমিন বলেন, অর্থের অভাবে ভৈরবের পাদুকা বিদেশে রপ্তানি করতে পারছেন না। পরিবেশগত বিধিনিষেধ প্রতিপালনও অর্থাভাবে চাইলেও মেনে চলতে পারে না অনেক উদ্যোক্তারা। তাই তিনি এই ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগীতা কামনা করেন।
‘বিল্ডিং এ সাসটেইনেবল লেদার সেক্টর ইন বাংলাদেশ’ প্রকল্পের আওতায়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে সলিডার সুইসের তত্তাবধানে, ওশি ফাউন্ডেশন, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন, সবুজের অভিযান ফাউন্ডেশন ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র যৌথভাবে অংশীজনদের উপস্থিতিতে এই গোলটেবিল বৈঠক করে।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের হেড অব ইভেন্ট খন্দকার আহমেদ শাহেদ, প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর এ এম এম খায়রুল আনাম, উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা জলি বোদন তৈয়বা, সমাজসেবা কর্মকর্তা রিফাত জাহান ত্রপা প্রমূখ।
দিনব্যাপী বৈঠকের ফাঁকে প্রকল্প নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন সলিডার সুইসের হেড অব প্রোগ্রাম কামরুল আহসান। স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান ও প্রকল্প কার্যক্রম উপস্থাপন করেন ওশি ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম অফিসার জয়নব বিনতে কামাল আখি, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ফেরদৌস কবির, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের শারমিন বন্যা ও সবুজের অভিযান ফাউন্ডেশনের কবির হোসেন।